Dream 11: ‘সামান্য অর্থের বিনিময়ে পছন্দের দল গড়ুন, আর জিতে যান কোটি-কোটি টাকা’, অথবা ‘তাসের খেলায় জিতলেই মিলবে বিলাসবহুল গাড়ি ও অন্যান্য আকর্ষনীয় পুরস্কার,’ ফ্যান্টাসি গেমিং সংস্থাগুলির এহেন চটকদার বিজ্ঞাপন প্রায়শই দেখা যায় টেলিভিশনের পর্দায়। দ্রুত বড়লোক হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অনেকেই কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেন ঐ অ্যাপগুলিতে। ‘ফ্যান্টাসি গেমিং’-এর নেশায় সব খুইয়ে কপর্দকশূন্য হওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। গত বছরই সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন হিমাংশু মিশ্র নামে এক ছাত্র। ৯৬ লক্ষ টাকার দেনায় ডুবে সে, সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলো বিহারের কিশোর। ‘ফ্যান্টাসি গেমিং’-এর আড়ালে এই অনলাইন জুয়া বন্ধে সচেষ্ট হয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল পাস হয়েছে ‘প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫।’
Read More: ভারতীয় দল নির্বাচনেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, এশিয়া কাপ স্কোয়াড নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক !!
নয়া বিল এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার-

অনলাইন গেমিং-এ আর্থিক লেনদেন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতেই আনা হয়েছে ‘প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫।’ মন্ত্রীসভায় পাস হয়েছিলো আগেই। বুধবার বিকেলে লোকসভাতেও সিলমোহর পড়লো তাতে। “অনলাইন গেমিং-এ টাকা দিয়ে জুয়া খেলা অনেকের কাছেন নেশায় পরিণত হচ্ছে। বহু মানুষ সারা জীবনের সঞ্চয় খোয়াচ্ছেন। প্রতারণা হচ্ছে। কারণ অনলাইনে কার সাথে কে জুয়া খেলছে, তা বোঝা যায় না। সর্বস্ব খুইয়ে অনেকে আত্মহত্যার রাস্তাও বেছে নিচ্ছেন। শুধু কর্ণাটকেই গত ৩১ মাসে ৩২টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মানসিক রোগের তকমা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার অনলাইন গেমে টাকা দিয়ে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করে এনে শাস্তিযোগ্য অপরাধের তালিকায় যোগ করছে,” জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnav)।
অনলাইন গেম’কে দুই ভাগে ভাগ করেছে ভারত সরকার। বিনোদন বা শিক্ষামূলক ই-স্পোর্টস, দাবা, সুডোকু’র মত গেমের প্রচার ও প্রসারে সাহায্যই করা হবে সরকারের তরফে। নগদ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে যে গেমগুলি খেলতে হয় কেবল সেগুলিই রয়েছে তাদের নিশানায়। যাঁরা এই ধরণের ফ্যান্টাসি গেমগুলি খেলেন বা খেলতেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরং তাঁদের ‘ভুক্তোভোগী’ হিসেবে দেখছে সরকার। তবে অনলাইন জুয়া চালাচ্ছে বা তাতে উৎসাহ দিচ্ছে এমন সংস্থা বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে এই বিলে। সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফ্যান্টাসি গেমিং সংস্থা চালালে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা দু’টোই হতে পারে।
নিয়ম ভেঙে বিজ্ঞাপন করলে দুই বছরের জেল, ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা দু’টোই হতে পারে। বারবার নিয়ম ভাঙলে পাঁচ বছরের জেল ও আরও বড় অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। ক্রিকেট, রামি, পোকারের মত খেলার সাথে জড়িত ফ্যান্টাসি গেমিং সংস্থাগুলি। ড্রিম ইলেভেন (Dream 11), মাই ইলেভেন সার্কল (My 11 Circle), এমপিএল (MPL), হাউজদ্যাট-এর মত সংস্থা গত কয়েক বছরে জাঁকিয়ে বসেছে অন্তর্জালদুনিয়ায়। লক্ষ লক্ষ গ্রাহক রয়েছে তাদের। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ‘অনলাইন গেমিং’-এর মাধ্যমে প্রতি বছরে আর্থক লেনদেন ছুঁয়েছে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া বিলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন ড্রিম ইলেভেনের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট অফ পলিসি কমিউনিকেশন স্মৃতা সিং চন্দ্র (Smrita Singh Chandra)। সরকারী সিদ্ধান্তকে ‘হৃদয়বিদারক’ ও ‘অন্যায়’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বোর্ডের-

এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে ফ্যান্টাসি গেমিং সংস্থাগুলির। টিম ইন্ডিয়ার পুরুষ, মহিলা ও অনুর্দ্ধ-১৯ দলের জার্সিতে দেখা যায় ড্রিম ইলেভেন (Dream 11) সংস্থার লোগো। ২০২৩-এর জুলাই মাসে ৩৫৮ কোটি টাকার বিনিময়ে এডটেক সংস্থা বাইজু’সকে সরিয়ে ‘লিড স্পন্সর’ হয়েছিলো তারা। তিন বছরের চুক্তি রয়েছে তাদের সাথে। এর আগে ২০২২-এ ২২২ কোটি টাকা খরচ করে আইপিএলের টাইটেল স্পন্সর হয়েছিলো সংস্থাটি। আইপিএলে দীর্ঘসময় কো-স্পন্সর হিসেবেও ছিলো ড্রিম ইলেভেন (Dream 11)। অষ্টাদশতম মরসুমে তাদের সরিয়ে দায়িত্ব পেয়েছে ‘গেমস ২৪x৭’ সংস্থার অধীনে থাকা মাই ইলেভেন সার্কল (MY 11 Circle)। পাঁচ বছরের চুক্তি সই করেছে তারা। যার অর্থমূল্য প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা। আচমকা এই সংস্থাগুলির ঝাঁপ বন্ধ হলে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা যে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে তা বলাই যায়।