গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) খেতাব জিতেছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে হারিয়ে জেতা দ্বিতীয় আইপিএল শিরোপার পর প্রায় দশ বছর কেটে গেলেও সাফল্য আর ধরা দেয় নাইটদের হাতে। ২০২১ সালে শেষবার ফাইনালে পরাজিত হয় চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK) বিরুদ্ধে। গত এক দশকের বেশীরভাগটাই কেটেছে হতাশায়। ২০২৩ মরসুমেও এই চিত্রের কোনোরকম বদল দেখা যায় নি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বেশ চাপে পড়েছিলো কেকেআর (KKR)। পিঠের বালজিং ডিস্কের সমস্যায় ছিটকে গিয়েছিলেন অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer)। তাঁর অনুপস্থিতিতে নীতিশ রানাকে (Nitish Rana) অধিনায়ক করে কোনোক্রমে সামলানোর প্রচেষ্টায় ছিলো নাইট দল, কিন্তু বিশেষ সুবিধা হয় নি। দশ দলের লীগে সপ্তম স্থানে শেষ করেছে তারা। আরও একবার খেতাবের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে নাইটদের।
২০২৩-এর ব্যর্থতার জন্য আঙুল উঠতে পারে প্রায় গোটা দলের উপরেই। ব্যাটিং বা বোলিং কোনো বিভাগেই ধারাবাহিক সাফল্য পায় নি কলকাতা (KKR)। রিঙ্কু সিং (Rinku Singh) বা নীতিশ রানার (Nitish Rana) মত কয়েকজন ব্যাট হাতে রান করলেও দলের অন্যতম ভরসা আন্দ্রে রাসেল নিয়মিত ব্যর্থ হয়েছেন। সাতটি আলাদা আলাদা ওপেনিং জুটি ব্যবহার করেও সফল হয় নি নাইট বাহিনী। বোলিং বিভাগেও একমাত্র বরুণ চক্রবর্তী (Varun Chakravarthy) ছাড়া ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেন নি কেউ। উমেশ যাদব, লকি ফার্গুসন, হর্ষিত রানারা প্রতিপক্ষের উপর চাপ বজায় রাখতে পারেন নি। আতসকাঁচের তলায় এসেছে টিম ম্যানেজমেন্টও। নিলামে প্লেয়ার বাছাই, ট্রেডিং পদ্ধতিতে খেলোয়াড়দের দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট হোমওয়ার্কের অভাব চোখে পড়েছে নাইট (KKR) শিবিরের গেমপ্ল্যানে। দলের ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়ে সরানো হতে পারে কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে (Chandrakant Pandit)।
Read More: “দোকান তো পুরো…” MS ধোনির বাইক সম্ভার দেখে মোহিত ভেঙ্কটেশ প্রসাদ !!
KKR কোচ হতে পারেন কুম্বলে-
কলকাতা ডাগ-আউটে ২০২৩ সালে কোচ হিসেবে প্রায় দিশাহারা লেগেছে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে (Chandrakant Pandit)। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্য থাকলেও আইপিএলের মত আন্তর্জাতিক মানের মঞ্চে তাঁর অনভিজ্ঞতা বারবার প্রকাশ হয়ে পড়েছে আইপিএল যত এগিয়েছে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ভাগে পৌঁছেও প্রথম এগারো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ওপেনিং স্লটে কখনও রহমানুল্লাহ গুরবাজের সাথে ব্যবহার করেছেন নারায়ণ জগদীশনকে (N Jagadeesan)।
কখনও বাংলাদেশের লিটন দাসকে (Litton Das) একটি ম্যাচ খেলিয়েই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। কখনও কেবল এক ওভার বোলিং করানোর জন্য সুয়শ শর্মাকে (Suyash Sharma) ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।, আবার কখনও মাস্ট উইন ম্যাচে কলকাতার হয়ে বোলিং শুরু করেছেন পার্ট-টাইমার নীতিশ রানা। কোচ পণ্ডিতের অবাক সিদ্ধান্তের তালিকা দেখে বিব্রত হবেন ক্রিকেট সমর্থকেরা।
২০২৩-এর ব্যর্থতার পর কোচকে সম্ভবত ছেঁটেই ফেলতে চলেছেন সিইও বেঙ্কি মাইশোর (Venky Mysore), দলের মালিক শাহরুখ খানরা (Shahrukh Khan)। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে (Chandrakant Pandit) ‘পিঙ্ক স্লিপ’ ধরানোর পর কলকাতার পরবর্তী কোচ কে হবেন? চলছে জল্পনা। শোনা যাচ্ছে কেকেআরের রেডারে রয়েছেন স্পিন কিংবদন্তি অনিল কুম্বলে (Anil Kumble)। ২০২২ অবধি পাঞ্জাব কিংস দলের কোচ ছিলেন তিনি। এর আগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং পরামর্শদাতা হিসেবেও ছিলেন ভারতের সফলতম বোলার। এছাড়া কেকেআরের ট্রফিজয়ী অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকে (Gautam Gambhir) মেন্টর রূপে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাব দিতে পারে কলকাতা। লক্ষ্ণৌ (LSG) দলের মেন্টর পদে রয়েছেন আপাতত গম্ভীর।
কোচ বদলের পথে অন্যান্য দলও-
আগামী মরসুমে নতুন কোচ নিয়োগের পথে হাঁটছে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২০২৪-এর মার্চ বা এপ্রিলে শুরু হবে আইপিএলের ১৭তম মরসুম। আর মিনি অকশন হতে পারে ডিসেম্বরে। তার আগেই নতুন কোচ চূড়ান্ত করে ফেলতে চাইছে দলগুলো। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) সরিয়ে দিয়েছে তাদের ডায়রেক্টর অফ ক্রিকেট মাইক হেসনকে (Mike Hesson)। ২০১৯ থেকে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে ছিলেন হেসন।
এর আগে কেনিয়া এবং নিউজিল্যান্ড দলের সাথে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকেও (Sanjay Bangar) সরিয়ে দিয়েছে তারা। ২০২২ আইপিএল থেকে বেঙ্গালুরু ডাগ-আউটে ছিলেন বাঙ্গার। এর আগে ভারতের জাতীয় দলের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। শূন্য পদে নতুন কাউকে নিয়োগের পথে হাঁটবে তারা।
বদল দেখা গিয়েছে লক্ষ্ণৌ স্যুপারজায়ান্টস (LSG) সাজঘরেও। গত দুই বছর প্লে-অফে উঠলেও ‘এলিমিনেটর’ ম্যাচে হেরেই বিদায় নিতে হয়েছে লক্ষ্ণৌকে। নিজেদের তৃতীয় মরসুমে ট্রফির উদ্দেশ্যে ঝাঁপানোর লক্ষ্য নিয়ে কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে (Andy Flower) সরিয়ে দিয়েছে তারা। জিম্বাবুয়ের ফ্লাওয়ারের বদলে কোচের হট-সিটে বসেছেন অস্টেলিয়ার জাস্টিন ল্যাঙ্গার (Justin Langer)। অজি জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ২০২১ সালে স্টিভ স্মিথ, প্যাট কামিন্সদের কোচ হিসেবে জিতেছিলেন টি-২০ বিশ্বকাপও। পার্থ স্কর্চার্সকে চার বছরে তিনবার বিগ ব্যাশ (BBL) সেরা করেছেন। কড়া কোচ হিসেবে পরিচিত ল্যাঙ্গার ভারতে সাফল্য পান কিনা, নজর থাকবে সেইদিকে।