ক্রিকেট দুনিয়ায় ভারতের বড়ো নাম রয়েছে। যে খেলোয়াড়োই ছোটো স্তর থেকেও ক্রিকেট খেলা শুরু করে তার লক্ষ্য টিম ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করার দিকে থাকে। বেশকিছু খেলোয়াড় এই সুযোগ পান তো কেউ কেউ এর আশা জিইয়ে রাখেন। ভারতীয় বোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ড, এর ঘরোয়া খেলোয়াড়রাও যথেষ্ট প্রতিভাবান হন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে এমন কিছু খেলোয়াড়ও থেকেছেন যারা ভারতের হয়ে ভালো ক্রিকেট তো খেলেছেন, কিন্তু যখন তাদের খারাপ ফর্ম দেখা দিয়েছে তো তারা দলের অধিনায়ক এবং নির্বাচকদের সমর্থন পাননি। এভাবে বেশকিছু খেলোয়াড় যাদের ক্রিকেট কেরিয়ার দীর্ঘ হতে পারত কিন্তু ছোটোই থেকেছে। আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আপনাদের সেই ৫জন ভারতীয় ক্রিকেটারদের ব্যাপারে জানাব যারা দল থেকে বাদ দেওয়ার পর কিছু এমন বয়ান দিয়েছিলেন যারপর তাদের দলে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া হয়নি আর সময়ের আগেই তাদের কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে।
১. মুরলী বিজয়
ভারতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান মুরলী বিজয় ২০০৮ এ ভারতের হয়ে ডেবিউ করেছিলেন। এরপর থেকে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের জন্য মুরলী বিজয় দলের অংশ থাকেন। এমনিতে এই ওপেনিং ব্যাটসম্যানের সীমিত ওভারের ক্রিকেট কেরিয়ারে বিশেষ লম্বা ছিল না, কিন্তু তিনি ভারতীয় টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু ২০১৮য় ইংল্যান্ড সফরে মুরলী বিজয়কে দল থেকে হঠাতই বাদ দেওয়া হয়। এরপর যখন ভারত ২০১৮য় অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় তো সেখানেও তিনি পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি। প্রথম ম্যাচ খেলানোর পর তাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয় আর তারপর দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর মুরলী বিজয় নির্বাচকদের উপর প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন যে কম সে কম আমাকে বলা তো উচিত ছিল যে কী কারণে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই বয়ানের পর মুরলী বিজয়কে ভারতের হয়ে খেলার সুযোগই দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো প্রদর্শন করেছেন।
২.মনোজ তেওয়ারি
ভারতীয় ক্রিকেট দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মনোজ তেওয়ারিও সেই খেলোয়াড়দের তালিকায় রয়েছেন যার বয়ানের পরই তার কেরিয়ারে গ্রহণ লাগিয়ে দিয়েছিল। আসলে মনোজ তেওয়ারি ২০০৮ এ ভারতের হয়ে ডেবিউ করেছিলেন। ২০১১য় মনোজ তেওয়ারি ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। তখন দলের নেতৃত্ব গৌতম গম্ভীর বীরেন্দ্র সেহবাগের কাছে ছিল। কিন্তু যখন ধোনি দলের নেতৃত্ব আবারো হাতে নেন তো মনো তেওয়ারিকে নিয়মিত ২৪টি ম্যাচে দলে রাখা হয় কিছু দুর্ভাগ্যবশত একটিও ম্যাচে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০১৭য় এই খেলোয়াড়কে দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এমনকী ইন্ডিয়া এ দলেও তাকে শামিল করা হয়নি। ২০১৭য় বাদ পড়ার পর তিনি ঘরয়া সতরে ১২৭ গড়ে ৫০৭ রান করেছিলেন। কিন্তু তাও তার দলে প্রত্যাবর্তন হয়নি। তখন তিনি নির্বাচকদের নিয়ে বলেছিলেন যে, “আমি আশা করেছিলাম যে আমাকে কম সে কম ইন্ডিয়া এ স্কোয়াডে জায়গা দেওয়া হবে, কিন্তু এত রান করার পরও আপনারা একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে এমনটা কীভাবে করতে পারেন। ওই বছর আমি ওয়ানডেতে রেকর্ড ব্যাটিং করেছিলাম, কিন্তু তারপরও নির্বাচকরা আমাকে উপেক্ষা করেছেন”।
৩.ফইজ ফজল
ঘরোয়া ক্রিকেটের বড়ো নাম ফইজ ফজলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারও অদ্ভুতভাবে থেমে যায়। এই তালিকায় পরবর্তী নাম বাঁ হাতি ওপেনার ফইজ ফজলের রয়েছে। নিজের অধিনায়কত্বে পরপর দুবার বিদর্ভকে রঞ্জি ট্রফি জেতানো ফইজ ফজলও টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলার সুযোগ পাননি। ২০১৬র জিম্বাবোয়ে সফরে ফইজ ফজলকে ভারতের হয়ে একদিনের ম্যাচে ডেবিউ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। নিজের ডেবিউতে ফইজ দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ৬১ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। নিজের এই ইনিংসে ফইজ ফজল সাতটি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কাও মারেন। তবে এত দুর্দান্ত ওয়ানডে ডেবিউর পরও ফজলকে দ্বিতীয়বার টিম ইন্ডিয়ায় সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০১৭র রঞ্জি ট্রফিতে ফজল ৭০.১৫র অসাধারণ গড়ে ৯১২ রান করেছিলেন কিন্তু তারপরও তাকে না তো টিম ইন্ডিয়ায় আর না ইন্ডিয়া এ দলে সুযোগ দেওয়া হয়। সেই সময় বিদর্ভের এই ব্যাটসম্যান একটি টুইট করে বলেছিলেন যে, “আমি কী পরপর দুবার রঞ্জি ট্রফি আর ইরানি ট্রফি জিতেছি?” আসলে সেই সময় না স্রেফ ফজল বরং বিদর্ভের কোনো খেলোয়াড়কে নির্বাচকরা দলে সুযোগ দেননি। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে লেগ স্পিনার আদিত্য সরভেটকে জায়গা দেওয়া হয়েছিল।
৪. আম্বাতি রায়ডু
ভারতীয় ক্রিকেট দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আম্বাতি রায়ডুর কেরিয়ারও তার বয়ানের কারণেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আসলে আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৯এর আগে পর্যন্ত বিরাট কোহলি আর টিম ম্যানেজমেন্ট আম্বাতি রায়ডুকে বিশ্বকাপ দলের ৪ নম্বর খেলোয়াড় বলছিলেন। কিন্তু যখন দল বাছা হয় তো তাতে আম্বাতি রায়ডুর জায়গায় অলরাউন্ডার খেলোয়াড় বিজয় শঙ্করকে দলে শামিল করা হয় আর প্রধান নির্বাচক এমএসকে প্রসাদ বয়ান দিয়েছিলেন যে শঙ্কর দলকে থ্রি ডি সেবা প্রধান করবেন। এই বয়ানের পর রায়ডু একটি টুইট করেন যেখানে তিনি লেখেন যে আমি থ্রি ডি চশমার পেয়ার অর্ডার করেছি বিশ্বকাপ দেখার জন্য। এরপর আম্বাতি রায়ডুকে বিজয় শঙ্কর এবং শিখর ধবনের আহত হওয়ার পরও নিয়মিত উপেক্ষা করা হয় আর এই খেলোয়াড় অবসরের ঘোষণা করে দেন। তবে রায়ডু ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য অবসর থেকে ফিরে এসেছেন কিন্তু এখন টিম ইন্ডিয়ায় তার প্রত্যাবর্তন অসম্ভব।
৫. ওয়াসিম জাফর
ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে শামিল ওয়াসিম জাফরের নামও এই তালিকায় শামিল রয়েছে। জাফর ঘরোয়া মরশুমে মরশুমের পর মরশুম রান বৃষ্টি করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়াসিম জাফরকে রান মেশিনও বলা হত। ভারতের হয়ে ওয়াসিম জাফর টেস্ট ক্রিকেট অবশ্যই খেলেছেন আর ভালো প্রদর্শনও করেছেন, কিন্তু পরে কিছু ম্যাচে খারাপ প্রদর্শনের কারণে আর বীরেন্দ্র সেহবাগ আর গৌতম গম্ভীরের ভালো প্রদর্শনের পর তাকে কখনো দলে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০০৯এ যখন ওয়াসিম জাফরকে টিম ইন্ডিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয় তখন তিনি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন যে “বাস্তবে আমি জানি না যে নির্বাচকদের কীভাবে প্রভাবিত করা যায়। আমি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৩,০০০ এর বেশি রান করেছি আর গত রঞ্জি মরশুমে ১,২৬০ রান করেছি। আমার মনে হয়না যে ওরা (নির্বাচকরা) এটার উপর মনোযোগ দিয়েছেন। এরপর আমি আর কী করতে পারি আমি তাদের এটা বোজাতে থাকব যে আমি ভারতের হয়ে খেলার জন্য এখনো ভালো”। ভারতের হয়ে জাফর ৩৭টি টেস্ট ম্যাচে ১৯৯৪ রান করেন আর সম্প্রতিই তিনি ক্রিকেটের সমস্ত ফর্ম্যাট থেকে অবসর ঘোষণা করে দিয়েছেন।