প্রতিটা উঠতি ক্রিকেটার স্বপ্ন দেখেন একদিন নিজেদের দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারফর্ম করতে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগ পাবার জন্য একজন উঠতি ক্রিকেটারকে ঘরোয়া মঞ্চে কঠিন পরিশ্রম আর নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় বলেই আমরা সকলে জানি। এছাড়াও পরিশ্রম এর পাশাপাশি একজন ক্রিকেটারকে নিজেরদের পারফর্মেন্সের দিকেও নজর রাখতে হয় যাতে করে তিনি নির্বাচকমণ্ডলীর নজরে আসতে পারেন। ক্রিকেট ইতিহাসে আমরা এমন ঘটনা বহুবার দেখেছি যেখানে একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে আন্তর্জাতিক অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে অপরদিকে একজন তরুণ ক্রিকেটার খুব সামান্য সংখক ম্যাচ খেলার পরেই ক্রিকেট বোর্ড এবং নির্বাচকমণ্ডলীর দৌলতে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক করে ফেলেছেন।
ক্রিকেট ইতিহাসে আমরা এমন বহু ক্রিকেটারদের দেখেছি যারা খুব কষ্ট করে ক্রিকেটের ময়দানে পা রেখে বিশ্ববাসীকে নিজেদের প্রতিভার জোরে অবাক করে দিয়েছেন। এছাড়াও ক্রিকেট ইতিহাসে আমরা এমন অনেক ক্রিকেটারদের দেখেছি যাদের কাছে যেমন বিশ্বের সব থেকে বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে ঠিক তেমনি তাদের ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা এতটাই বেশি যার জন্য তাদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বেশ মোটা টাকা রোজগার হয় বলেই জানা যায়। আধুনিক ক্রিকেট বিশ্বে প্রায় প্রতিটা ক্রিকেটার দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন্য লীগ টুর্নামেন্ট খেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ধনী হয়ে ওঠেন। এছাড়াও এটাও লক্ষ্য করা যায় যদি কোনো ক্রিকেটার একবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা জমাতে পারেন তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন্য বড়ো কোম্পানি গুলি তাকে ব্র্যান্ড এম্বাসেডর বানানানোর জন্য অনেক টাকা অফার করে থাকে। কিন্তু বিগত কিছু দশক আগেও ক্রিকেটারদের এতটা রোজগার ছিলোনা বলেই আমরা জেনে থাকি। আমরা এখানে এমন ৫জন ক্রিকেটারকে নিয়ে আলোচনা করবো যারা ক্রিকেট থেকে একসময় মোটা টাকা রোজগার করলেও পরবর্তীতে তাদের খারাপ খরচ অথবা নিজেদের বেক্তিগত সমস্যার কারণে তারা আজ সব থেকে গরিব ক্রিকেটারের তকমা পেয়েছেন।
আরশাদ খান:
তালিকায় সর্বপ্রথম নামটি হলো প্রাক্তন পাকিস্তানী অফ স্পিনার আরশাদ খানের (Arshad Khan)। লম্বা এই ডানহাতি স্পিন বোলার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর বিপক্ষে ১৯৯৭-৯৮ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক করেছিলেন এবং তিনি ভারতীয় ক্রিকেট লীগ এ লাহোর বাদশা দলের হয়েও পারফর্মেন্স করেছিলেন।
প্রাক্তন এই পাকিস্তানী স্পিনার নিজের কেরিয়ারে মোট ৯টি টেস্ট ম্যাচ এবং ৫৮টি একদিবসীয় ম্যাচ খেলেছিলেন ২০০৬ সাল অব্ধি। এছাড়াও তার বেস্ট বোলিং পারফর্মেন্স হলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি ভারতের বিরুদ্ধে যা হলো কোচির ময়দানে ৩৩রান দিয়ে ৪উইকেট শিকার করেছিলেন।
খবর সূত্রে জানা গেছে প্রাক্তন এই পাকিস্তানী ক্রিকেটার তার নিজের দেশে বহু কষ্টে কাটানোর পরে বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে রয়েছেন এবং সেখানে তিনি ক্যাব চালকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তাই এটা বলা যেতেই পারে একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার কিভাবে নিজের কেরিয়ারে বিপর্যয়ের স্মুখীন হয়েছেন।
এডাম হোলিওকে:
এই তালিকায় দ্বিতীয় নামটি হলো জনপ্রিয় তারকা ক্রিকেটার এডাম হোলিওকে (Adam Hollioake)। অস্ট্রেলিয়াতে জন্মগ্রহনকারী ইংলিশ এই তারকা অলরাউন্ডার ক্রিকেট বিশ্বে খুব অল্প সময়ে নিজের প্রতিভার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং তাকে অল্প সময়ের জন্য ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলাতে হয়েছিল বলেই আমরা জানি। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তিনি ক্রিকেট কেরিয়ারকে বিধায় জানিয়ে পুনরায় অস্ট্রেলিয়া ফিরে যান নিজের পারিবারিক ব্যবসা সামলাতে।
২০০৮ সালে তার ব্যবসা ডুবে যায় এবং ব্যাঙ্ক থেকে তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছিল। এর পরবর্তীতে তিনি একজন মার্শাল আর্টস খেলোয়াড় হিসাবে ফিরে আসেন এবং সেখান থেকে পুনরায় নিজের জীবন ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন যা যা একজন মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকতে পারে বলেই মনে করা যায়।
ম্যাথিউ সিনক্লেয়ার:
তালিকায় তৃতীয় নামটি হলো বিশ্ববিখ্যাত নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান ম্যাথিউ সিনক্লেয়ার (Matthew Sinclair) এর। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৪বছর বয়েসে নিজের বাবাকে হারানোর পরেই অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে চলে আসেন। নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারের টেস্ট অভিষেকে দ্বি-শতরান করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন এবং তিনি টেস্ট এবং একদিবসীয় ফরম্যাট দুটিতেই দলের হয়ে সমানভাবে পারফর্মেন্স করে গিয়েছেন। সিনক্লেয়ার ২০১৩ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান এবং তারপরে তিনি নিজের চাকরি হারান যা তার ব্যক্তিগত এবং দাম্পত্য জীবনে ভীষণ ভাবে আঘাত করে।
বর্তমানে তিনি নেপিয়ার এ একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে সেলসম্যান এর চাকরি করেই বলেই জানা যায়। তাই এটা বলা যেতেই পারে সময় থাকতে যদি নিজের কেরিয়ারের প্রতি দায়িত্ববান না হন তাহলে এই রকম কঠিন পরিস্থিতির স্মুখীন হতে বেশি সময় লাগবে না।
ক্রিস ক্রেনস:
তালিকায় চতুর্থ চমপ্রদ নামটি হলো নিউজিল্যান্ড তারকা অলরাউন্ডার ক্রিস ক্রেনস (Chris Cairns) এর। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসে রিচার্ড হ্যাডলি র পর ক্রেনস হলেন দ্বিতীয় অলরাউন্ডার যিনি বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মিডলে অর্ডার এ একজন বিধংসী ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি পেস বলার হিসাবে তিনি প্রচুর সুনাম অর্জন করেছিলেন সে কথা বলার অবকাশ রাখে না। বিখ্যাত এই অলরাউন্ডার তার নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারে মোট ৯টি শতরানের সহিত ৪২০টি উইকেট শিকার করেছিলেন।
কিন্তু ২০১৩ সালে তিনি ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে ধরা পড়েন এবং বিচারে তার ক্রিকেট জীবন যেমন শেষ হয়ে যায় তেমনি তিনি হাজতবাস করেছিলেন। এর পরে তার নিজের এবং তার পরিবারের আর্থিক সমস্যা মেটানোর জন্য বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে বাস ডিপোতে বাস পরিষ্কার করার কাজ করে থাকেন বলে জানা যায়।
জনার্দন নাভ্লে:
এই তালিকায় সর্বশেষ নামটি হলো জনার্দন নাভ্লে (Janardhan Navle) র। আমাদের অনেকের অজানা বিষয় বিখ্যাত এই ক্রিকেটার হলেন ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম উইকেট কিপার যিনি ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসের ময়দানে দস্তানা হাথে টেস্ট ফরম্যাটে অভিষেক করেছিলেন এবং সেটি ছিল ভারতীয় দলের সর্বপ্রথম টেস্ট ম্যাচ। এর পরে তিনি ভারতীয় দলের হয়ে মাত্র অল্প কয়েকটি টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহন করেছিলেন।
খবর সূত্রে জানা যায় তিনি নিজের জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ভিকারী করে অর্থ উপার্জন করতেন আবার এটাও জানা যায় তিনি নাকি কোনো মিলের দারোয়ানের জীবনযাবন করেছিলেন।