একজন তরুণ ক্রিকেটার সর্বদা প্রচেষ্টা করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে অথবা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অসাধারণ পারফর্মেন্স করে দেখিয়ে নিজের দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদার্পন করতে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অথবা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ভালো পারফর্মেন্স করতে গেলে একজন উঠতি ক্রিকেটারকে কঠোর অনুশীলন এবং যথাযত নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় সে কথা বলার অবকাশ রাখে না।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগ পেতে গেলে একজন তরুণ ক্রিকেটারকে যেমন পারফর্মেন্স করে দেখাতে হয় ঠিক তেমনি তার ফিটনেসের পরীক্ষাও দিতে হয় যাতে করে তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ম্যাচ খেলার ধকল সহ্য করতে পারেন। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন বহু ক্রিকেটার আছেন যারা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ভালো পারফর্মেন্স করে দেখানোর পরেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বেশিদিন টিকতে পারেননি তাদের ফিটনেসের জন্য। আবার এমন ক্রিকেটারদেরকেও দেখা গেছে যারা খুব অল্প বয়সে সামান্য কয়েকটি ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ খেলার পরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগ পেয়েছেন এবং দীর্ঘ্যদিন নিজেদের দেশের হয়ে ক্রিকেট পরিষেবা চালিয়ে গিয়েছেন।
একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার নিজেকে সর্বদা ফিট রাখতে প্রচুর অনুশীলন করে থাকেন যাতে করে তিনি দীর্ঘ্যদিন দেশের হয়ে ক্রিকেট পরিষেবা চালিয়ে যেতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করে থাকি বহু ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক মঞ্চে ম্যাচ খেলার ধকল সহ্য করতে না পেরেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারকে বিদায় জানিয়েছেন। একজন ক্রিকেটারের কাছে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার থেকে অবসর গ্রহণ করা খুব কষ্টের সে কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।
ক্রিকেটের ইতিহাসে আমরা এমন বহুবার দেখেছি যারা নিজেদের ক্রিকেট কেরিয়ার থেকে অবসর গ্রহণ করে কোচিং করাতে দেখা গেছে নয়তো তারা ধারাভাষ্যকার এর ভূমিকা পালন করে চলেছেন। কিন্তু আমরা এখানে এমন ৫জন ক্রিকেটারকে নিয়ে আলোচনা করবো যারা অবসর গ্রহণ করার পরেও পুনরায় অবসর ভেঙে ক্রিকেট মাঠে ফিরে এসেছেন।
মোহাম্মদ আমির:
তালিকায় সর্বপ্রথম নামটি হলো পাকিস্তানী ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমির (Mohammad Amir) এর। বাঁহাতি এই ফাস্ট বোলার তার দ্রুতগতির বোলিং এবং অসাধারণ সুইং এর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি পাকিস্তান দলের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক করেছিলেন কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে তিনি ম্যাচ ফিক্সিং এর কারণে ক্রিকেট থেকে ৫ বছরের জন্য নির্বাসিত হন এবং তিনি বেশ কয়েক মাস জেল খেটেছেন বলেও আমরা সকলে জানি।
এর পরে তিনি পুনরায় ২০১৫ সালে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে দলের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদার্পন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২০ সালে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার থেকে অবসর গ্রহণ করেন মাত্র ২৮ বছর বয়েসে। যদিও তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহন করার পর পুনরায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এ অংশগ্রহন করে ক্রিকেটের ময়দানে ফিরে এসেছিলেন।এছাড়াও খবর সূত্রে জানা গেছে তিনি পাকাপাকি ভাবে ইংল্যান্ডের বাসিন্দা হতে চলেছেন এবং এর পর তিনি পুনরায় আইপিএল এর মঞ্চে খেলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মঈন আলী:
তালিকায় দ্বিতীয় ক্রিকেটার হলেন মঈন আলী (Moeen Ali)। জনপ্রিয় এই তারকা ডানহাতি স্পিন বোলার জন্মসূত্রে পাকিস্তানী হলেও তিনি নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করেন ইংল্যান্ডের হয়ে এবং তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ৩টি ফরম্যাটেই সমানভাবে অংশগ্রহন করেছেন। মঈন আলী তার অসাধারণ স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি একজন লোয়ার অর্ডার বিধংসী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসাবেও যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন এমনটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। তারকা এই অলরাউন্ডার ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করার পরেও পুনরায় ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস এর অনুরোধে অবসর ভেঙে এসেজ সিরিজে পারফর্ম করেছেন এবং তার অসাধারণ পারফর্মেন্স কে দর্শক কুর্নিশ জানিয়েছে। এই এসেজ সিরিজের পরে তিনি পুনরায় ক্রিকেটের ময়দান থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন সে কথাও আমরা সকলে জানি।
তামিম ইকবাল:
তালিকায় তৃতীয় নামটি হলো তামিম ইকবাল (Tamim Iqbal) এর। বাঁহাতি এই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান দেশের হয়ে একজন সফল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে পরিচিত এবং এছাড়াও তিনি এখন সফল ডানহাতি অফ স্পিনার হিসাবেও পরিচিত। প্রতিভাবান এই অলরাউন্ডার বাংলাদেশের হয়ে পূর্বে সহ অধিনায়ক থাকলেও পরবর্তীতে তিনি অধিনায়ক হিসাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০২২ সালে তিনি t20 ফরম্যাট থেকে হটাৎ অবসর গ্রহণ করেন এবং এর পরে তিনি এই বছর হটাৎ করেই একদিবসীয় ফরম্যাট থেকে অবসর গ্রহণ করে নেন। কিন্তু তার পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী র সাথে দেখা করার পর নিজের অবসর গ্রহণ প্রত্যাহার করে নেন বলেই আমরা সকলে জেনেছি। কিন্তু এটাও জানা গেছে তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার পরে পুনরায় চোটের কবলে পড়েছেন এমনকি আসন্ন এশিয়া কাপের মঞ্চেও তিনি পারফর্ম করতে পারবেননা। তাই তিনি পুনরায় অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আম্বাতি রায়ডু:
এই তালিকায় চর্তুথ ক্রিকেটার হলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার আম্বাতি রায়ডুর (Ambati Rayudu)। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান নিজের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি একজন দক্ষ উইকেট কিপার এবং স্পিন বোলার হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক হয়েছিল প্রতিভাবান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান আম্বাতি রায়ডুর। কিন্তু ২০১৯ সালে একদিবসীয় বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে দল থেকে বাদ পড়ার পরেই তিনি তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এর পরবর্তীতে তিনি ২০২৩ সালে আইপিএল এর মঞ্চে পারফর্ম করার পরেই সমস্ত ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এই অবসরের পরেই তিনি ভারতের বাইরে মেজর ক্রিকেট লীগ এ অংশগ্রহন করেছেন বলেই জানা গেছে।
শাহিদ আফ্রিদি:
এই তালিকায় সর্বশেষ নামটি হলো জনপ্রিয় তারকা ক্রিকেটার শাহিদ আফ্রিদির (Shahid Afridi)। তারকা এই প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ক তথা বিশ্ববিখ্যাত অলরাউন্ডার তার ঝোড়ো ব্যাটিং এবং ডানহাতি লেগ স্পিন বোলিংয়ের জন্য বিশ্ববিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৯৬ সালে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করার পর থেকে তিনি একাধিক রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন এবং এর পরে তিনি ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু তারপরেও এখনো তিনি একাধিক লীগ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করে থাকেন বলেই আমরা সকলে জানি।এমনকি জনপ্রিয় এই ক্রিকেটারকে পাকিস্তান প্রিমিয়ার লীগ এ অংশগ্রন করতে দেখা গেছে এবং তিনি মেজর লীগ ও লিজেন্ড লীগ এও সমানভাবে অংশগ্রহন করে থাকেন।