ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি (Sourav Ganguly)। অধিনায়ক হিসেবে সৌরভের পথচলাটা ছিল দারুন। ভারতীয় ক্রিকেটের সোনালী যুগের সূচনা হয়েছিল এই সৌরভের নেতৃত্বেই। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিততে শুরু করে টিম ইন্ডিয়া। ভারতীয় দলের অংশ হওয়ার পাশাপশি একেরপর এক বিবাদের অংশ হতে হয়েছে সৌরভকে। তবুও কোনোদিন নিজেকে ব্যাকফুটে রাখেন নি সৌরভ। তিনি এমন ৩ কাজ করেছেন যে বাঁকিদের দ্বারা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
লর্ডসে জামা ওড়ানো

‘লর্ডসে ঘুরপাক জামা মানে দাদাগিরি..’ – সৌরভ গাঙ্গুলির লর্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যালকনিতে জার্সি ওড়ানোর ঘটনাটি আজও ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক থাকাকালীন এই বদলাটি নিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি (Sourav Ganguly)। ১৩ জুলাই, ভারতের প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে স্মরণীয় দিন। এদিন যেন ক্রিকেট বিশ্বে ভারতীয় ক্রিকেটের নবজাগরণ ঘটেছিল। ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির (Natwest Trophy) ফাইনালে ইংল্যান্ডের ৩২৫ রান তাড়া করতে এসে ভারতের দুর্দান্ত জয় আজও ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। লর্ডসে সৌরভের জামা ওড়ানোর ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল, ২০০২ সালে শুরুর দিকে যখন ভারতের মাটিতে ৬ ম্যাচের একদিনের সিরিজ খেলতে এসেছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।
ভারতকে হারিয়ে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ জার্সি খুলে মাঠের মধ্যেই তীব্র সেলিব্রেশন করতে থাকেন। এরপর ইংল্যান্ডের মাটিতে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি খেলতে যায় সৌরভের ভারত। যুবরাজ সিং এবং মহম্মদ কাইফের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জয় করে নেয় ভারতীয় দল। ভারতীয় দলের ব্যাটিং দেখে, লর্ডসের ব্যালকনিতে বসে একমনে নিজের নখ কামড়ে যাচ্ছিলেন সৌরভ। শেষ রানটা নিতে না নিতেই তিনি কার্যত চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠেন এবং জার্সিটা খুলে ঘোরাতে থাকেন হাওয়ায়। সৌরভের এই বদলা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
Read More: TOP 3: কোনো ভাবেই ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নন MS ধোনি, তিন মুহূর্ত যখন ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন কিংবদন্তি !!
কোচের সঙ্গে বিবাদ

২০০৫ সালের এপ্রিলে তৎকালীন ভারতীয় দলের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি (Sourav Ganguly) জন রাইটের পর জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে গ্রেগ চ্যাপেলের নিয়োগের জন্য বোর্ডকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে, চ্যাপেল কোচ হতেই ক্যাপ্টেনসি ছেড়ে দিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। শুধু ক্যাপ্টেনসি ছাড়া নয়, ২০০৫ সালের নভেম্বরে ভারতে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজের একটি ম্যাচ কলকাতায় খেলার কথা ছিল। তবে, ম্যাচটিতে সৌরভকে বসিয়ে ছিলেন চ্যাপেল। কলকাতার ছেলেকে ঘরের মাঠে বসতে দেখতে মেজাজ ঠান্ডা রাখতে পারেনি ভক্তরা। এমনকি সমর্থকদের সামনে মিডিল ফিঙ্গার দেখিয়েছিলেন কোচ চ্যাপেল।
সৌরভের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে চ্যাপেল বলেছিলেন টাকার জন্যই নাকি ক্যাপ্টেনসি ছাড়তে চাইছিলেন না সৌরভ। দল থেকে বাদ পড়ে, ২০০৬ সালে চ্যাপেলের কোচিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে সৌরভ বলেন তাঁর কোচিং দর্শন ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য নয়। ২০০৭ সালে সৌরভ আবার দলে ফিরে আসেন এবং দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেন। সে সময় কোচ জানান যে সৌরভকে বাদ দিতেই নাকি ও এমন কামব্যাক করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলকে গ্রুপ স্টেজের ম্যাচ থেকেই ফিরতে হয়েছিল। এরপর চ্যাপেল ভারতীয় টপ অর্ডারদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে, মহান শচীন টেন্ডুলকার চ্যাপেলের এই কথায় হতাশ হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে এপ্রিলে অবশ্য নিজের মেয়াদ আর বাড়াতে চাননি চ্যাপেল।
ক্যাপ্টেন পরিবর্তন

ক্রিকেট থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার পর সৌরভ আবার ভারতীয় ক্রিকেটের অংশ হয়েছিলেন। এবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হয়েছিলেন সৌরভ। সৌরভের বোর্ড সভাপতি হয়ে বেশ সমালোচনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল সৌরভকে। বিরাট কোহলি ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের ক্যাপ্টেনসি ছাড়ার পর তাঁর থেকে ওডিআই দলের ক্যাপ্টেনসি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আসলে, গাঙ্গুলি সহ নির্বাচকরা ভারতীয় দলের সাদা বলের জন্য দুজন অধিনায়ক রাখতে চাইনি। যে কারণে, কোহলির বদলে রোহিত শর্মাকে সাদা বলের দুই ফরম্যাটে অধিনায়ক বানিয়েছিলেন সৌরভ।
এরপর কোহলি টেস্ট ফরম্যাট থেকেও অবসর নিয়েছিলেন, তখন সৌরভ রোহিতকে টেস্ট ক্যাপ্টেনসি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। রোহিতের নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেটে আবার অগ্রগতি শুরু হয়েছিল। ২০২৩ সালে WTC ফাইনাল ওডিআই বিশ্বকাপ হারার পর রোহিত ও সৌরভকে নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছিল। তবে, রোহিতের নেতৃত্বে ২০২৪ সালে জুন মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৫ সালের মার্চ মাসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে ভারত। সৌরভের রোহিতকে ক্যাপ্টেন বানানোর সিদ্ধান্ত একেবারেই কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।