বিশ্ব ক্রিকেটে সব থেকে চর্চিত নাম ছিল সৌরভ গাঙ্গুলী (Sourav Ganguly)। ফিক্সিং এর মুখ থেকে তুলে নিয়ে ভারতীয় দলকে বিশ্বের দরবারে টেনে তুলেছিলেন বাংলার গর্ব সৌরভ। তিনি ২০০০ সালের প্রাক্কালে অধিনায়কত্ব না পেলে হয়তো টিম ইন্ডিয়াকে ইতিহাস হিসাবে মনে রাখত ক্রিকেট বিশ্ব। শুধু টিম ইন্ডিয়ার জন্য নয়, ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক গাঙ্গুলী একাধিক প্লেয়ার কে বানিয়েছেন। ক্যাপ্টেন হওয়ার সাথে সাথে যুবক প্লেয়ারদের দলে সুযোগ দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটারদের একটি পরিবেশ তৈরি করানো ছিল গাঙ্গুলীর মূল উদ্দেশ্য। যে কারণে বর্তমান টিম ইন্ডিয়াতে তরুণ ও বরুনের প্রাধান্য দেখা যায়। তবে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলীর সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল প্লেয়ারদের ব্যাক করা। তিনি বরাবরই প্লেয়ারদের কে অতিরিক্ত সুযোগ দিতেন, এমনকি তার অধিনায়কত্বে এমন এমন প্লেয়াররা খেলেছেন ও সৌরভ তাদেরকে যা সুযোগ দিয়েছেন তাতে তাদেরকে মহারথী বানিয়ে তুলেছে। সৌরভ না থাকলে তালা পড়তো এই ৩ প্লেয়ারের ক্যারিয়ার, ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দাদা।
Read More: World Cup 2023: জৌলুস হারিয়েছে ভারত-পাক দ্বৈরথ, সৌরভ গাঙ্গুলীর নজর থাকবে এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার উপর !!
১. বীরেন্দ্র সেহবাগ
তালিকা শীর্ষস্থানে রয়েছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ধ্বংসাত্মক ওপেনার বীরেন্দ্র সেহবাগ (Virendra Sehwag)। ভারতীয় দলের একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছেন বিরু। তিনি ওডিআই ক্রিকেটে ব্যাটিং করতেন টি-টোয়েন্টি স্টাইলে এবং টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং করতেন ওডিআই স্টাইলে। তার কাছে কোন ফরম্যাট বড় ছিল না কেবলমাত্র বল দেখা ও চারমারা ছিল তার কাজ। ভারতীয় দলের হয়ে একাধিক ম্যাচ খেলেছেন সেহবাগ। তবে এই সেগবাগকে বড় পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। ভারতীয় দলের হয়ে বীরেন্দ্র সেহবাগকে এতদুর ক্রিকেট খেলতে দেখা যেত না, একদা এক সময়ে মিডিল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু হয়েছিল সেবাগের ক্যারিয়ারের। তবে সেই সময় দলে সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar), সৌরভ গাঙ্গুলী (Sourav Ganguly), ভিভিএস লক্ষণদের (VVS Laxman) মতন প্রভাবশালী ব্যাটসম্যানদের থাকার জন্য মিডিল অর্ডারে জায়গা হচ্ছিল না সেহবাগের।
যে কারণে দাদা তাকে ওপেনার বানিয়ে ফেলেন এবং এর পরে তৈরি হয়ে যায় ইতিহাস। টেস্ট ক্রিকেটে দুই বার ৩০০ এর গণ্ডি অতিক্রম করেছেন বীরেন্দ্র সেহবাগ। পাশাপাশি ওয়ানডে ক্রিকেটে ও ২০০ রান করেছেন তিনি, তার পারফরমেন্সের কথা বলতে গেলে ভারতীয় দলের হয়ে তিনি ১০৪ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে ৪৯.৩৪ গড়ে ৮৫৮৬ রান করেছেন এবং বানিয়েছেন ৩২ টি অর্ধশতরান ও ২৩ টি শতরান। পাশাপাশি একদিনের খেলায় ২৫১ বার খেলেছেন সেহবাগ ৩৫.০৬ গড়ে ৮২৭৩ রান করেছেন তিনি এছাড়া ৩৮ বার ৫০ এর গন্ডি পার করেছেন ও ১৫ বার করেছেন শতরান।
২. হরভজন সিং
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন হরভজন সিং (Harbhajan Singh)। ভারতীয় দলের এই প্রমুখ স্পিনার কে দলে জায়গাতে রাজি ছিল না টিম ম্যানেজমেন্ট। মূলত প্রথমদিকে তার রাগ তার ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব ফেলেছিল । এমনকি ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি থেকে তিনি পালিয়েও এসেছিলেন। তবে পরবর্তীকালে ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক যে তিনিই নেবেন তা কেউ ভাবতে পারেনি। কেবলমাত্র তার মধ্যে প্রতিভা দেখেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী (Sourav Ganguly)। সাল ২০০১, ভাজ্জির কামব্যাক টেস্ট, সামনে ছিল টিম অস্ট্রেলিয়া, যারা কিনা বিশ্বের প্রতিটি দেশকে হারিয়ে ভারতে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিল।
খুব সহজে প্রথম ম্যাচটিতে জয়লাভ করে যায় টিম অস্ট্রেলিয়া, কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে শুরু হয় হরভজন এর ম্যাজিক। ওই টেস্ট ম্যাচেই হরভজন প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করে ফেললেন, এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সৌরভের বিশ্বাস ও হরভজনের পারফরমেন্স তাক লাগিয়ে দেয় ক্রিকেট বিশ্বকে আর জন্ম হয় নতুন অফ স্পিনারের। হরভজনও এটি শিকার করেন যে, সৌরভ গাঙ্গুলী (Sourav Ganguly) না থাকলে তিনি কোনোদিন এত বড় মাপের ক্রিকেটার হতে পারতেন না। ভারতীয় দলের হয়ে তিনি দীর্ঘ সময়কাল খেলেছেন, প্রমুখ স্পিনার হিসাবে দলের হয়ে তিনি ১০৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন যেখানে ৪১৭ টি উইকেট পেয়েছেন ও ২৩৬টি ওডিআই ম্যাচ খেলে ২৬৯ টি উইকেট নিয়েছেন হরভজন।
৩. অনিল কুম্বলে
তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অনিল কুম্বলে (Anil Kumble)। এই তালিকায় তার নাম দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। তবে বিস্মিত হওয়ার কোন কারণ নেই, অনিল কুমলে একজন মহান স্পিনারদের মধ্যে বিবেচিত হন। তবে একটা সময় এসেছিল যখন দলে তার গুরুত্ব কমতে শুরু হয়। একের পর এক খারাপ পারফরমেন্সের পরে বেশ টানাপড়েন দেখা যায় অনিলের ক্যারিয়ারে। আর সেই সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌরভ (Sourav Ganguly)। ভারতীয় দল তখন অস্ট্রেলিয়া সফরে যাবে আর সফরটি হতে চলেছিল স্টিভ ওয়ার (Steve Waugh) শেষ টেস্ট সিরিজ, আর এই সিরিজে নিজের ক্যারিয়ারকে বাজি রেখেই নির্বাচকদের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন সৌরভ।
একটি ইন্টারভিউতেই গাঙ্গুলী এই কথা দাবি করে বলেছিলেন যে, কুম্বলে যদি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে না জেতেন তাহলে ভারত অস্ট্রেলিয়ায় জিততে পারতো না ও কুম্বলের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত। পাশাপাশি এটাও বলেন যে, কুম্বলে ব্যর্থ হলে তার আগে সৌরভের চাকরি যেত। অনিল কুম্বলে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় দলে খেলার পরে তার খারাপ সময়ে তৎকালীন ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলী তার ঢালে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশাপাশি তার ক্যারিয়ারের কথা বলতে গেলে ভারতীয় দলের হয়ে একসময় অধিনায়কত্ব করেছেন কুম্বলে। ১৩২ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৬১৯ টি উইকেট পেয়েছেন তিনি ও ২৭১ টি ওডিআই ম্যাচে ৩৩৭ টি উইকেট নিয়েছেন।