ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা অধিনায়কদের তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) নাম। ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর ভারতীয় দলের হাল ধরেছিলেন সৌরভ। সেই সময় তার সামনে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এত কিছুর পরেও সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায় লেখেন যা আজও সকলের মনে আছে। সৌরভের অধিনায়কত্বের বিশেষ বিষয় হল, তিনি সিদ্ধান্ত নিতে কখনও দ্বিধা করেননি। এ ছাড়া তার সিদ্ধান্তগুলোও ছিল দুর্দান্ত। সমালোচক যাই হোক না কেন, দাদা নিজের চিন্তা-চেতনা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন।
ভারতীয় দলের অনেক খেলোয়াড়কে সুযোগ দিয়ে তৈরি করার কাজটি করেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এমন খেলোয়াড়দের তুলে আনেন যাদের মধ্যে তিনি প্রতিভা দেখেছেন এবং শেখার সুযোগ দিয়েছেন। এটাই ছিল বিশেষত্ব যে সৌরভের অধিনায়কত্বে খেলা খেলোয়াড়রা সবসময় তার পাশে দাঁড়াতেন। ভারতীয় দলকে বিদেশে জিততে শিখিয়েছিলেন তিনি। সৌরভের দল বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও উঠেছিল। এসবের পেছনে রয়েছে তার অনবদ্য সিদ্ধান্ত। সৌরভ তার অধিনায়কত্বের অধীনে পরীক্ষা করতে দ্বিধা করেননি। এখানে এবার সৌরভ গাঙ্গুলীর এমন ৩টি সিদ্ধান্তের কথা বলা হযবে যা ভারতীয় ক্রিকেটে পরিবর্তন এনেছে।
বীরেন্দ্র সেহওয়াগকে ওপেনার বানিয়ে দেওয়া
ভারতের সেরা ওপেনার ব্যাটসম্যানদের তালিকায় অবশ্যই বীরেন্দ্র সেহওয়াগের নাম অবশ্যই উঠে আসবে। সেহওয়াগকে নির্ভীক ওপেনার বানিয়েছিলেন সৌরভই। ওপেনার হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেননি বীরু। তিনি একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ছিলেন এবং টেস্ট অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার সময় ৬ নম্বরে ব্যাট করতে আসেন। তবে সেহওয়াগের ব্যাটিং স্টাইল দেখে দাদা মনে করেছিলেন বীরুর জায়গা লোয়ার অর্ডারে নয়।
অবশেষে, তিনি ডানহাতি এই মারকুটে ব্যাটসম্যানকে ইনিংস ওপেন করতে বলেন। পরবর্তী ফলাফল প্রমাণ করে যে সিদ্ধান্তটি প্রকৃতপক্ষে সৌরভই নিয়েছিলেন এবং তা ছিল একদম ঠিক। ভারতীয় ক্রিকেটের চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন তিনি। এরপরই সেহওয়াগ ভারতের অন্যতম সফল টেস্ট ওপেনার হয়ে ওঠেন। তিনি দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং ৫০ এর কাছাকাছি গড়ে রান করে অনেক ভারতীয় জয়ে অবদান রাখেন।
দ্রাবিড়কে দিয়ে উইকেটকিপিং করানো
তার কেরিয়ারের বেশিরভাগ সময় সৌরভ ধোনির সাথে খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি। ধোনির আগমনের পর, ভারতের একজন নিয়মিত উইকেটরক্ষকের সন্ধান শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গাঙ্গুলিকে যখন প্রাথমিকভাবে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়, তখন তার আরও ভালো উইকেটরক্ষকের প্রয়োজন হয়। সোরভের অনুসন্ধান শেষ পর্যন্ত শেষ হয় যখন তিনি রাহুল দ্রাবিড়কে দলের ভারসাম্য উন্নত করতে উইকেটরক্ষকের গ্লাভস পড়তে বলেছিলেন।
দ্রাবিড় প্রথমে কিপিং করতে চাননি কিন্তু সৌরভ তাকে রাজি করান এবং রাহুল উইকেটকিপিংয়ে রাজি হন। সৌরভ শুধুমাত্র কাজের জন্য সঠিক ব্যক্তিকেই খুঁজে পাননি বরং ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যানের ভূমিকাও পালন করেছিলেন। দ্রাবিড়কে ৫ নম্বরে ঠেলে দেওয়া হয় এবং সেই পজিশনে তার সেরা ওডিআই ইনিংস খেলেন।
তরুণ খেলোয়াড়দের বড় করেছেন
বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, জহির খান, এমএস ধোনির মতো খেলোয়াড়দের বড় করতে সৌরভ গঙ্গোপাদ্যায়ের ভূমিকা ছিল। সোরভের দৃঢ়তা এবং সংকল্পের কথা আজও বলা হয়। তিনি স্ক্র্যাচ থেকে দল তৈরি করেছিলেন এবং একটি দুর্দান্ত তরুণ দল তৈরি করেছিলেন। সৌরভ দলে আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছিলেন এবং তাদের বিশ্বাস করেছিলেন যে তারা যে কোনও জায়গায় জিততে পারে।
সৌরভ যে আরেকটি মাস্টারস্ট্রোক খেলেছিলেন তা হল কেনিয়াতে একটি সফল ভারতের ‘এ’ সিরিজের পরেই একজন তরুণ এমএস ধোনিকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা। তার নির্বাচন সবাইকে অবাক করেছিল কিন্তু দাদা ধোনির মধ্যে ভবিষ্যত দেখেছিলেন। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে ধোনি ১৪৮ রান করেছিলেন এবং তারপর থেকে ধোনিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উল্লেখ্য, সৌরভের ২৮ টেস্টে ১টি জয়ের বিদেশী রেকর্ড রয়েছে – বিরাট কোহলির পরে দ্বিতীয় সেরা।