হঠাৎ করে তাকে দেখলে মনে হবে লুইস গার্সিয়া! কিংবা তাকে স্বচ্ছন্দেই স্প্যানিয়ার্ডের বিখ্যাত ‘লুক-অ্যালাইক’ বলেও চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে গভীরভাবে তাকে লক্ষ্য করলে ভুল ভাঙবে। ইনি কিন্তু মোটেই আইএসএলের এটিকে দলের লুইস গার্সিয়া নন। তিনি এডুয়ার্ডো মোয়া ক্যান্টিলো! ইন্ডিয়া সুপার লিগে দিল্লী ডায়নামোস দলের রক্ষণের প্রধান ভরসা তিনি। দলের সতীর্থরা তাকে ডাকেন ‘মোয়া’ বলে। এবং ঘটনা চক্রে তিনিও স্প্যানিশ। প্রথম সারির স্প্যানিশ দলগুলোতে খেললেও লুই গার্সিয়ার মত দুর্দান্ত বায়োডাটা তার নেই। তবে গার্সিয়ার সঙ্গে এখানেই তার কানেকশন শেষ নয়, তিনি ১৩ বছর আগে লা লিগায় বিখ্যাত স্প্যানিয়ার্ডের মোকাবিলাও করেছিলেন। আর দিল্লির এই আদরের মোয়া বাজিমাত করেছিলেন সেখানেও। আইএসএলএ ম্যাচ ডে উপলক্ষে তিনি দলের সঙ্গে দিল্লি দলের সঙ্গে তিনি কলকাতায় এসেছেন। এখানেই তিনি শোনালেন গার্সিয়া কাহিনী। মোয়া ২০০৪ সালে চুটিয়ে লা লিগায় মায়োরকার হয়ে খেলছেন সেই সময়। স্প্যানিশ ফুটবলে প্রতিশ্রুতিমান রাইট ব্যাক হিসেবে অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার বলে ধরা হচ্ছিল তাকে। সেই সময় তিনি স্প্যানিশ ফুটবলে তিকিতাকা-যুগের পথিকৃৎ লুইস আরাগোনেসকে কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন । বিশ্বখ্যাত সেই কোচের কেরিয়ার গ্রাফে লেখা রয়েছে একটা করে লা লিগা, সুপারকাপ, ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ এবং তিনটে কোপা ডেল রে। যিনি পরে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে ইউরো কাপ জিতিয়ে, স্প্যানিশ ফুটবলের আগমনের বার্তা গোটা ফুটবল বিশ্বকে দেবেন! অন্যদিকে বরাবরে মতোনই সে বছরও বার্সোলোনা দল তারকার ঔজ্জ্বল্যে ঝলমলে। প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট, কার্লোস পুওল, জাভি, রোনাল্ডিনহো, স্যামুয়েল এটো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং সর্বপরি লুইস গার্সিয়া – কে ছিলেন না সেই দলে। গার্সিয়া তার আগের বছরই ফুল ফুটিয়েছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে । ঠিক তার পরের বছরেই স্প্যানিশ ফুটবলের অন্যতম সেরা লেফট উইঙ্গারের আবির্ভাব ঘটে কাতালান ক্লাবে ।
এডুয়ার্ডোর উপর দায়িত্ব বর্তেছিল লা লিগায় মায়োরকা-বার্সেলোনা ম্যাচে সেই সময়েই তারকা বনে যাওয়া গার্সিয়াকে সামলানোর। তেরো বছর আগেকার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন এডুয়ার্ডো। তিনি বলেন, ‘‘স্প্যানিশ ফুটবলের ওই ম্যাচটা নিয়ে বেশ লেখালেখি হয়েছিল সেই সময়ে। কারণ ওই দুই দলের ম্যানেজার ছিলেন লুইস আরাগোনেস এবং ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড। সেই সময় স্পেন উত্তাল হয়েছিল দুই বিশ্ববিখ্যাত ম্যানেজারের ফুটবল মস্তিষ্কের লড়াই নিয়ে। অবশ্য বার্সেলোনাই সেই ম্যাচে শেষ হাসি হাসে।’’ তবে দিল্লির বর্তমান ডিফেন্ডার হেরে গেলেও পেয়েছিলেন বীরের মর্যাদা । তার কথায় ‘‘আরাগোনেস সেই ম্যাচের আগে গার্সিয়াকে সামলানোর জন্য আলাদা করে স্ট্র্যাটেজি বাতলে দিয়েছিল আমাকে। আমাকে প্রায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে কোচ বলেছিলেন, ‘গার্সিয়ার বিরুদ্ধে আজ তোমার প্রমাণ করার ম্যাচ। যাও তুমিই যে সেরা তা দেখিয়ে দাও গোটা স্পেনকে।’ রাজারহাটে পাঁচতারা হোটেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লনে বসে দিল্লির স্প্যানিশ তারকা এখনও উত্তেজিত হয়ে পড়েন সেই ম্যাচের কথা বলতে গিয়ে, ‘‘ আমি কিন্তু সেই ম্যাচে গার্সিয়াকে একদম নড়তেই দিইনি। গোটা ম্যাচে বাঁ প্রান্ত দিয়ে একটাও ক্রস বাড়াতে পারেনি ও।’’ গার্সিয়া এসে সেই ম্যাচের পর আলাদা করে প্রশংসা করে গিয়েছিলেন তার। সবথেকে বড় সংশাপত্র পেয়েছিলেন কোচ আরাগোনেজের কাছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দল হারলেও তোমার খেলা আমাকে গর্বিত করেছে। তোমার জন্য খুব ভাল লাগছে।’’ মায়োরকার পরে মোয়া সেল্টা ভিগো, এক্সট্রিমাদুরো, হারকিউলিস- সহ স্পেনের একাধিক দলে খেলেছেন। প্রতিপক্ষ হিসেবে তাকে সামলাতে হয়েছিল তাঁরই ‘প্রিয়’ মেসি, এটো, রোনাল্ডিনহো-র মতো মহাতারকাদেরও। তবে তার কেরিয়ারের সেরা গার্সিয়া-ম্যাচেই।
সেই ব্যাপারে তিনি আজও অকপটে বলেন, ‘‘ আমি একাধিক ম্যাচে খেলেছি মেসির বিরুদ্ধে । কিন্তু রাইট উইং দিয়ে অপারেট করছিল মেসি। তাই ওকে সরাসরি সামলাতে হয়নি। এটোর ক্ষেত্রেও তাই। গার্সিয়ার বিরুদ্ধে ডুয়েলে জিতেছিলাম আমিই । এখনও তাই ওটাই আমার কেরিয়ারের সেরা ম্যাচ ।’’ এখন দেখার তেরো বছর আগে গার্সিয়াকে থামিয়ে দেওয়া স্প্যানিশ তারকার ‘পা’ ধরেই চলতি আইসিএল মরশুমে দিল্লি ডায়নামোসের মন্দ-ভাগ্য ফেরে কিনা।