কানপুরের উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট অ্য়ায়োসিয়েশনের স্টেডিয়ামে গত রবিবার (২৯ অক্টোবর) নিউজিল্য়ান্ডকে ৬ রানে হারিয়েছে ভারত। একেবারে ‘কাঁটে কি টক্কর‘ যাকে বলে। তবে, তিন ম্য়াচের একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে শেষ হাসি বিশ্বের এক নম্বর দলই হাসল। গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে ভারত একদিনের সিরিজ ২-১ ব্য়বধানে জিতেছে। মুম্বইয়ে প্রথম একদিনের ম্য়াচ ৬ উইকেটে জেতার পর কিউয়িরা লড়াই করা না ছাড়লেও ভারত তাদের খেলায় উন্নতি করায়, বলা ভালো একদিনের আসরের শীর্ষস্থানে থাকা দল সুলভ আচরণ করায় সিরিজ জিতল। পুনে ম্য়াচ ৬ উইকেটে জিতে বিরাট কোহলির দল সিরিজে সমতা ফেরায়।
ব্ল্য়াকক্য়াপদের অধিনায়ক টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, শীতের শুরু এখন ভারতে, তার ওপরে দিনরাতের ম্য়াচ। দিনরাতের ম্য়াচে ‘টস ভাগ্য়, ম্য়াচ ভাগ্য়‘ গড়ে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে শিশিরের কারণে বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হওয়ার পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ের সময়ও বল স্কিড করে যাওয়ার কারণে অ্য়াডভান্টেজে থাকে ব্য়াটিং টিম। কিউয়ি অধিনায়কের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলা যাবে না। কারণ, বেশ উত্তেজনায় ভরে উঠেছিল ম্য়াচ। আসলে স্কোর বোর্ডে বড় রান ভারতীয় বোলারদের ভরসা জুগিয়েছে ডিফেন্ড করতে।
ওপেনার রোহিত শর্মা ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি, এই দু‘জনকে বাহবা দিতে হবে। তৃতীয় উইকেটে জুটিতে ২৩০ রানের ওই পার্টনারশিপটা প্রথম পর্বেই নিউজিল্য়ান্ডের হাত থেকে ম্য়াচ অর্ধেকটা বের করে নেয় ভারত। ১৩৮ বলে ১৪৭ রান করেন রোহিত। বিরাট ৩২তম সেঞ্চুরি (১১৩ রান) করতে নেন ১০৬ বল। নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ভারত ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩৭ রান তোলে।
ম্য়াচ জিতে সিরিজ নিজেদের দখলে করার মনোভাব নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন কিউয়িরা, একথা হলফ করে বলতেই হয়। ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম ওভারে ১৯ রান তুনে নিয়ে কিউয়ি ওপেনার কলিন মুনরো লড়াইটা বিপক্ষে শিবিরে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই পৌঁছে দিয়েছিলেন। ৬২ বলে ৭৫ রানের একটি ইনিংস খেলে দলকে ভাল সূচনা দিয়ে যান তিনি। ওখান থেকে কিউয়িদের দরকার ছিল স্কোরবোর্ডকে সচল রাখা। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস ৮৪ বলে ৬৪ রান করে একটা দিক ধরে রেখেছিলেন। ১৬৮ রানে তিন উইকেট পড়লেও ওয়াংখেড়ের মতো গ্রিন পার্কেও দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন টম ল্য়াথাম (৬৫) ও অভিজ্ঞ ব্য়াটসম্য়ান রস টেলর (৩৯)। টেলরকে যদি বুমরাহ ফিরিয়ে না দিতেন এবং ল্য়াথাম যদি রান আউট না হতেন, ভারতের পক্ষে কানপুর ম্য়াচ জেতা অসম্ভব হত বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।
ভারত ম্য়াচ জেতার জন্য় পেস বোলার জসপ্রীত বুমরাহ (৩ উইকেট) ও স্পিনার যুজবেন্দ্র চহলকে (২ উইকেট) বাহবা দিতে হবে। কিউয়িদের সাত উইকেটের মধ্য়ে পাঁচ উইকেটে এই দু‘জনেই তুলে নেন। বাকি ভারতীয় বোলাররা ব্য়র্থ। দলের সেরা পেসার ভুবনেশ্বর এই ম্য়াচে চূড়ান্ত ব্য়র্থ। ১০ ওভারে ৯২ দেওয়ার স্মৃতিটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুলতে হবে ভুবিকে। কারণ, এরপরই শুরু হবে টি-২০ সিরিজ। নিউজিল্য়ান্ড সিরিজটা খুব একটা ভালো কাটল না হার্দিক পান্ডিয়ার জন্য়ও। কানপুরে ৫ ওভারে ৪৭ রান খরচ করেছেন।
ম্য়াচের পর সাংবাদিক সম্মলনে বিরাট বলেন, ”হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। নিউজিল্য়ান্ডকে বাহবা দিতেই হবে। ওরা পুরো সিরিজটাতেই লড়াই করেছে। আমাদের থেকেও সেরা খেলাটা বের করে নিয়েছে। ওদের ক্রিকেটীয় দক্ষতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট প্রশংসাযোগ্য। লোকে বলে বোলাররা সব জানে। কারণ, তারাই ম্য়াচ জেতায়। তবে, শিশিরের কারণে মাঝেমধ্য়ে এমন সময় আসে, যেদিন বাইশ জন ফিল্ডারও কম মনে হয়। ওরা যে ম্য়াচটা বের করে এনেছে, সেজন্য় আমি খুশি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্য়াট ভালোভাবে ব্য়াটে আসছিল। আমাদের সময়েও উইকেট সাহায্য় করেছিল ব্য়াট করতে, তবে তুলনায় ধীর গতির ছিল। ম্য়াচ জেতাই আমাদের লক্ষ্য় থাকে সবসময়। দলের কাজে লাগাই আমার লক্ষ্য়, তাতে নিজে কত রান করলাম কিছু এসে যায় না। টি-২০ সিরিজ শুরু আগে আরেকটা জয় ঝুলিতে পুরতে পারায় আমি খুশি।”