পুজোর বিসর্জনের ভীড় এড়িয়ে বিসর্জন দেখতে সর্দারজির ছদ্মবেশ সৌরভ গাঙ্গুলীর

পুজোর বিসর্জনের ভীড় এড়িয়ে বিসর্জন দেখতে সর্দারজির ছদ্মবেশ সৌরভ গাঙ্গুলীর 1

দূর্গাপুজো মানেই বাঙালির আবেগ, বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব। চারদিন ধরে চলা এই উৎসব প্রায় সমস্ত বাঙালিকেই নিয়ে আসে এক জায়গায়। এই উৎসবকে উপভোগ করতে চান না এমন বাঙালি পাওয়া মুশকিল। বাদ যান রা সেলিব্রেটিরাও। তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালি হয়ে কি করে এই উৎসব থেকে দূরে থাকেন? ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে প্রিন্স অফ ক্যালকাটা নামে পরিচিত সৌরভ তার আসন্ন বই প্রকাশ করতে চলেছেন এই ফেব্রুয়ারিতেই। নাম ‘ এ সেঞ্চুরি ইস নট এনাফ’। এই বইতে এই ৪৫ বছর বয়েসী ভারতীয় ক্রিকেটের রোল মডেল নিজের জীবনের বহু না বলা কথাই প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে একটি হল পুজোকে ঘিরে তার আবেগ। একটি সর্বভারতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী সৌরভ ওই বইটিতে তার দূর্গাপুজোর উপভোগ করার কথা লিখেছেন। তিনি ওই বইটিতে জানিয়েছেন যে তার ভারত অধিনায়ক থাকাকালীণ একবার তিনি পুজো উপভোগ করতে ভীড় এড়াতে সর্দারজির ছদ্মবেশ ধারন করেছিলেন। পুজোর বিসর্জন দেখার জন্য তিনি এতটাই ডেসপারেট ছিলেন যে লরিতে করে বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লরিতে করে বিসর্জন দেখতে যাওয়ার জন্য ছদ্মবেশ ধরতেও তিনি কুন্ঠিত বোধ করেন নি।

পুজোর বিসর্জনের ভীড় এড়িয়ে বিসর্জন দেখতে সর্দারজির ছদ্মবেশ সৌরভ গাঙ্গুলীর 2

এ নিয়ে সৌরভ তার বইতে লিখেছেন যে, “ আমি পুজো নিয়ে এতটাই পাগল ছিলাম যে আমি প্রতিমার শেষ যাত্রায় তার সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম। বাংলায় পুজোর শেষ দিনের জন্য একটা অল্প দুঃখজন শব্দ রয়েছে – বিসর্জন। এই সময় প্রতিমা গঙ্গায় ভাসান দেওয়া হয়। অসাধারণ সেই দৃশ্য। সেইসময় মানুষের উত্তেজনা থাকে আকাশচুম্বি, আনন্দ এবং দুঃখ মিশ্রিত ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে, কারণ মা দূর্গা এই সময় ফেরত চলে যান। যা সত্যিই ভীষণ স্মরণীয়। সেই সময় আমি অধিনায়ক ছিলাম, একবার পুজোর নদীর ধারের পুরো জায়গাটি ভীরে ভর্তি ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিই যে হরভজনের দেশের লোকের মত ছদ্মবেশ নেব”। ওই বইটিতে গাঙ্গুলী লেখেন তার পরের ঘটনা। তিনি লেখেন, “ এখন সমস্যা হলে আমাকে অনেক সময়েই ভীড়ের মধ্যে মবড হয়ে যেতে হত। এবং পরিস্থিতি চলে যেত হাতের বাইরে। কিন্তু পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিমা বয়ে নিয়ে যাওয়ার লরিতে করে যাওয়া সত্যিই অপ্রতিরোধ্য”। ৪৫ বছর বয়েসী সৌরভ বর্ননা দেন কি করে তিনি ভাসান দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন যে তার স্ত্রী এবং মেয়েই সব আয়োজন করে তাকে ছদ্মবেশ ধারণ করার সাহায্য করতে। যদিও তার পদক্ষেপ সফল হয় নি। একজন পুলিশ তাকে চিনে ফেলেন। তার লরিতে করে যাওয়াও আটকে যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি ওই বিসর্জন উপভোগ করেছিলেন।

পুজোর বিসর্জনের ভীড় এড়িয়ে বিসর্জন দেখতে সর্দারজির ছদ্মবেশ সৌরভ গাঙ্গুলীর 3

সৌরভ তার বইতে লিখেছেন, “ আমার স্ত্রী ডোনা বাড়িতে একজন মেকআপ আর্টিস্ট ভাড়া করে নিয়ে আসে আমাকে বিশ্বাস যোগ্যভাবে সিখদের মত দেখানোর জন্য। আমার খুড়তুতো ভাইরা মজা করে বলেছিল লোকে আমাকে চিনে ফেলবে। আমি যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি, শেষ পর্যন্ত আমি ভাইয়ের চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেলি। সব ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু পুলিশ আমাকে লরিতে উঠতে দেয় নি। ফলে আমি আমার মেয়ে সানা কে নিয়ে আমাদের গাড়িতে প্রতিমার লরিকে ফলো করতে থাকি। আমাদের গাড়িটা যখন বাবুঘাটে পৌঁছোয় তখন এক পুলিশ আধিকারিক এসে আমার গাড়ি আটকে দিয়ে জানলা দিয়ে উঁকি দেন। খুব কাছ থেকে দেখার ফলে তিনি আমাকে চিনতে পারেন, হালকা হেসে ফেলেন চিনে যাওয়ার পর। আমিও ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে যাই, তাকে অনুরোধ করি তিনি যেন আমার এই সিক্রেট গোপন রাখেন। আমার এই পদক্ষেপটা কাজে লেগে গিয়েছিল। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সেই বিসর্জনের দৃশ্য দেখাটা ভাষায় বর্ননা করা সম্ভব নয়। এটা বোঝার জন্য আপনাকে এটা দেখতে হবে। যতই হোক বছরে একবার আসেন মা দূর্গা”।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *