ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে ভারতের টানা নবম ম্য়াচে জয়ের সঙ্গে একটি চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ জড়িয়ে গিয়েছে। আর তা এমন অভিযোগ, যাকে কোনওভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। ম্য়াচের আগেই ম্য়াচের ভাগ্য় নির্ধারণ। কথাটা শুনে ফিক্সিং‘য়ের কথা মাথায় আসবে। তবে, এটি ম্য়াচ ফিক্সিং নয়। এ অভিযোগ টস ফিক্সিং‘য়ের। কিন্তু, এর সঙ্গে কারা জড়িত সে ব্য়াপারটি পরিষ্কার নয়। খবরে প্রকাশ, গত ছয় সেপ্টেম্বর কলম্বোতে ভারত ও শ্রীলঙ্কা মধ্য়ে টি-২০ ম্য়াচটিতে টস ফিক্সিং হয়েছে। ফলে, ভারতের জয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঠিক কি হয়েছিল ব্য়াপারটা?
আসুন জেনে নিই..
ক্রিকেটে একটা প্রচলিত কথা আছে। যে যতবড় ক্য়াপ্টেন, তার টস ভাগ্য়ের কপাল ততটা চওড়া। আর দিনরাতের ম্য়াচে টস কতটা বড় ফ্য়াক্টর হয়ে ওঠে, যাঁরা নিয়মিত খেলা দেখেন, তাঁরা কথাটা সহজেই বুঝতে পারবেন। এরজন্য় ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার দরকার পড়বে না। টস অনেক সময়তেই ম্য়াচের ভাগ্য় গড়ে দেয়। পিচে ভাঙন ধরা, শিশির, ম্য়াচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পিচ মন্থর হয়ে ওঠা আবার অনেক সময় পিচ সহজ হয়ে আসা।
তবে, গত বুধবার শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মধ্য়ে হওয়া সিরিজের একমাত্র টি-২০ ম্য়াচে যা হয়েছে, তাতে লঙ্কান লায়নদের অধিনায়ক সম্ভবত এখন হাত কামড়াচ্ছেন এই ভেবে, টসটা জিতলে হয়ত তাঁদের হারতে হতো না। ভারত সেদিন টসে জেতে। কিন্তু, শ্রীলঙ্কা যদি সেদিন টসে জিতত, তাহলে ভারতকে আগে ব্য়াট করতে পাঠাতে পারত। কারণ, ভারত অধিনায়ক বিরাট টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নিতে পছন্দ করেন।
আসলে ওই ম্য়াচে শ্রীলঙ্কা টসে জিতে ছিল, ভারত নয়।
সেদিন কলম্বোতে ওই টি-২০ আন্তর্জাতিকে ম্য়াচ প্রেজেন্টার ছিলেন ভারতের প্রাক্তন স্পিন বোলার মুরলি কার্তিক। ম্য়াচের আগে নিয়ম অনুযায়ী দুই দলের ক্য়াপ্টেনদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ক্য়ামেরা সামনে তাঁদের পরিচয় করাতে হয়। আর তার পরে টস করানো হয়। সঙ্গে থাকেন ম্য়াচ রেফারি। গত বুধবার ম্য়াচ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি, শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা ও ম্য়াচ রেফারি অ্য়ান্ডি পাইক্রফ্টের সঙ্গে পরিচয় করান কার্তিক। তারপর যা হলো, তা নিয়েই এই অভিযোগ উঠেছে।
অথিথি টিমের অধিনায়ক হিসেবে বিরাটকে তাঁর টস পছন্দ জানতে চাওয়া হয়। আর বিরাট বলেন, ”হেড”। আয়োজক দেশের অধিনায়ক হিসেবে থারাঙ্গা টস করেন। ম্য়াচ রেফারি কয়েনটা তুলতে যান যখন, তখন তা টেইলের দিকে পড়ে, হেড নয়। কিন্তু, কার্তিক বিরাটকে ডাকার আগেই বলে দেন, ”হেড পড়েছে, ভারত টসে জিতেছে।” এই অভিযোগ যদি সত্য়ি হয়ে থাকে, তাহলে শ্রীলঙ্কা সেদিন টসে জিতেছিল, ভারত নয়। আর আইসিসি নিযুক্ত ম্য়াচ রেফারিই বা কিছু বললেন না কেন সেদিন? এটা কি শুধুই একটা ভুলের কাকতালীয় সংযোগ, নাকি আগে থেকেই টস ফিক্সিং করা ছিল!
আশ্চর্যের বিষয় হল, টসের পর তাঁদের বক্তব্য় জানাতে গিয়ে দুই দলের অধিনায়কই বলেন, এই পিচে পরে ব্য়াট করা ভালো। কারণ, বৃষ্টি হওয়ায়, পিচে আর্দ্রতা রয়েছে। পরের দিকে উইকেট সহজ হয়ে আসবে। এর চাইতেও বড় আশ্চর্যের বিষয়, টেইল পড়া সত্ত্বেও বিরাট টসে জিতেছেন, আগেই ঘোষণা করে দেওয়ায় ম্য়াচ রেফারির চোখেমুখে মজা উপভোগ করার একটা হাবভাব ছিল। কার্তিক যখন বিরাট টসে জিতেছেন বলে ভারত অধিনায়কের দিকে হাঁটা দেন তাঁর সিদ্ধান্ত জানতে, তখন পাইক্রফ্ট খানিকটা এগিয়েও যান কোহলি এবং কার্তিকের দিকে। কিন্তু, এনিয়ে কোনও বক্তব্য় রাখেননি তিনি বা তাঁকে সংশোধন করতেও যাননি।
তবে, টস বিতর্ক এটাই প্রথম নয়। আইপিএলের সঙ্গেও এমন ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। ২০১৬‘তে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ম্য়াচে এখনকার ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রী ম্য়াচ প্রেজেন্টার ছিলেন। ওই ম্য়াচে কেকেআর ক্য়াপ্টেন গৌতম গম্ভীর টস করার আগে কিংস ইলেভেনের অধিনায়ক মুরলি বিজয় হেড বলেন। টস হওয়ার পর ম্য়াচ রেফারি অমিত শর্মা বলেন টেইল পড়েছে। তবে, শাস্ত্রী ম্য়াচ রেফারির কোনও কথাতে কান না দিয়ে সরাসরি বলে দেন, ওটা হেড ছিল। হতভম্ব হলেও ম্য়াচ রেফারি আর এনিয়ে কথা বাড়াননি তারপর।