আইপিএল ২০২০র শুরু হতে এখন আর কিছু সময়ই বাকি থেকে গিয়েছে। আইপিএলের প্রত্যেক মরশুমে বিদেশী খেলোয়াড়দের কর্তৃত্ব থাকে। দলের মালিকরা তাদের নির্বাচন যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করে করেন। কিন্তু যদি তাদের মধ্যে থেকে একজন খেলোয়াড়ও ভালো প্রদর্শন করেন তো এটা জয় আর হারের মধ্যে পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায়। আইপিএলের গত সংস্করণে অনেক খেলোয়াড়ই নিজেদের বিস্ফোরক হিটিং আর প্রভাবশালী বোলিংয়ে টুর্নামেন্টে ক্রিকেট সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। ক্রিস গেইল, লাসিথ মালিঙ্গা, এবি ডেভিলিয়র্স, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট আর ডেল স্টেইন সেই হাতে গোনা খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। প্রত্যেক বছরের মতোই এই বছরও বেশকিছু বিদেশী খেলোয়াড় নিজের নিজের দলের হয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করবেন। আজ এই বিশেষ প্রতিবেদনে এমন ৫ জন খেলোয়ড়ের কথা বলব, যারা এই বছর আইপিএলে একার দমে দলকে জেতাতে পারেন।
রশিদ খান – সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের লেগ স্পিনার রশিদ খান দলের হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্লাওন করবেন। ২০১৭য় নিজের আইপিএল ডেবিউর পর থেকে রশিদ খান সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে তারকা পারফর্মার থেকেছেন আর দলকে নিজের দমে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। নিজের বোলিংয়ের সঙ্গে রশিদ খান নিজের ব্যাটিং নিয়েও কাজ করেছেন। যে কারণে তিনি দলের হয়ে শেষ দিকে দ্রুত গতিতে রান করতে পারেন। এটাই কারণ যে রশিদ খান এই দলের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ। রশিদের কাছ থেকে এই বছরও দল যথেষ্ট আশা করে থাকবে আর হবে নাই বা কেন, এই খেলোয়ড়ের ফিল্ডিং, ব্যাটিং তথা বোলিং সবকিছুই উচ্চমানের। এই কারণে এই খেলোয়াড় আমাদের এই তালিকায় শামিল রয়েছেন।
শেন ওয়াটসন – চেন্নাই সুপার কিংস

শেন ওয়াটসনকে আমরা ২০১৮য় হওয়া আইপিএল থেকে চেন্নাইয়ের দলের সঙ্গে দেখতে পেয়েছি। ২০১৮য় পাওয়া জয়ে শেন ওয়াটসনেরও যথেষ্ট যোগদান থেকেছে। অন্যদিকে ২০১৯ এর ফাইনালে তার ইনিংসকে কেউ ভুলতে পারবে না। ওয়াটসন আহত হওয়া সত্ত্বেও সেঞ্চুরি করে সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তবে তিনি দলকে ফাইনাল জেতাতে পারেননি। ২০১৯এ শেন ওয়াটসন ১৭টি আইপিএল ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে তিনি ২৩ গড়ে ৩৯৮ রান করেছিলেন। যার মধ্যে তিনি একটি সেঞ্চুরিও করেছিলেন। শুধু তাই নয় অলরাউন্ডার হওয়ার কারণে তিনি নিজের দলে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নেন। এই অবস্থায় এই ধরণের প্রদর্শন সকলেরই তার কাছে আরও একবার করবে। ওয়াটসন দলের জন্য ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ প্রমানিত হতে পারেন।
শিমরন হেটমেয়ার – দিল্লি ক্যাপিটালস

গত মরশুমে দিল্লি ক্যাপিটালস দল সবচেয়ে বেশি একজন ফিনিশারের অভাব বোধ করেছিল, এই কারণে এই বছরের আইপিএল নিলামে দিল্লি ক্যাপিটালস দল শিমরণ হেটমেয়ার আর অ্যালেক্স ক্যারির মতো খেলোয়াড়দের নিজেদের দলে শামিল করেছে। ওয়েস্টইন্ডিজের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান হেটমেয়ার নিজের দলের হয়ে ফিনিশারের ভুমিকা পালন করেন আর তিনি দিল্লি ক্যাপিটালস দলের হয়েও এই কাজ করতে পারেন। দিল্লি ক্যাপিটালস তার উপর ভরসা করে এই বছরের আইপিএল নিলামে ৭.৫ কোটি টাকার মোটা দামে তাকে শামিল করেছে। দিল্লির এমন একজন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন রয়েছে যিনি যে কোনো জায়গায় এসে বিস্ফোরক ইনিংস খেলতে পারেন আর হেটমেয়ার এমন করতে দক্ষ আর এই অবস্থায় তার প্লেয়িং ইলেভেনে থাকা নিশ্চিত। হেটমেয়ারও দলের দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম।
অ্যান্দ্রে রাসেল – কলকাতা নাইট রাইডার্স

ওয়েস্টইন্ডিজের ঝোড়ো অলরাউন্ডার অ্যান্দ্রে রাসেল গত কিছু বছর ধরে আইপিএলে কামাল করে চলেছেন। আইপিএল ২০১৯এ আমরা কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে অ্যান্দ্রে রাসেলের এমন প্রদর্শন দেখতে পেয়েছিলাম যিনি অন্য সমস্ত দলের ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিলেন। এই বিস্ফোরক খেলোয়াড় একার দমেই পাঁচটি ম্যাচে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। রাসেল আইপিএল ২০১৯ এর ১৪টি ম্যাচে ২০৪.৮১ স্ট্রাইক রেটে মোট ৫১০ রান করেছিলেন। তিনি কেকেআরের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানও ছিলেন। শুধু তাই নয় রাসেল গত মরশুমে সবচেয়ে বেশি ৫২টি ছক্কা মারা ব্যাটসম্যানও ছিলেন। এই অবস্থায় রাসেলের কাছ থেকে তেমনই প্রদরশনের আশা আইপিএল ২০২০তেও করা হচ্ছে আর সম্ভবত তিনি দলের হয়ে সবচেয়ে সেরা ম্যাচ ফিনিশারও প্রমানিত হবেন।
জোস বাটলার – রাজস্থান রয়্যালস

ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান জোস বাটলার নিজের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ২০১৯এ রাজস্থান রয়্যালসের হয়েও আমরা তার দ্বারা কিছু বিস্ফোরক ইনিংস দেখতে পেয়েছিলাম। বাটলার ২০১৯ এ রাজস্থানের হয়ে আটটি ম্যাচে ১৫১ স্ট্রাইক রেটে ৩১১ রান করেছিলেন। অন্যদিকে নিজের ৪ বছরের আইপিএল কেরিয়ারে বাটলার ৪৫টি ম্যাচে ১৩৮৬ রান করেছেন। যদি এই বছর বাটলার পুরো আইপিএল খেলেন তো তিনি দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় প্রমানিত হতে পারেন। বাটলারকে তার খেলার আক্রামণাত্মকতার জন্য মনে রাখা হয় আর এটা বলা যেতে পারে যে তিনি আইপিএল ২০২০তেও নিজের দলকে আরও একবার দুর্দান্ত শুরু এনে দিতে পারেন। বাটলারও এমনই খেলোয়াড় যিনি দলকে একার দমে ম্যাচ জেতাতে পারেন।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল – কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অস্ট্রেলিয়ার একজন বিস্ফোরক অলরাউন্ডার। টি-২০ ক্রিকেট ম্যাক্সওয়েলের পছন্দের ফর্ম্যাট, কারণ তার বিস্ফোরক ব্যাটিং এই ফর্ম্যাটকে সুট করে। তিনি আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে ৩টি সেঞ্চুরিও করেছেন। ম্যাক্সওয়েলের কাছে আইপিএলের ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি আইপিলের ৬৯টি ম্যাচে ১১৬.১৩র দুর্দান্ত স্ট্রাইকরেটে মোট ১৩৯৭ রান করেছেন। সেই সঙ্গে তার নামে ১৬টি উইকেটও রয়েছে। ম্যাক্সওয়েলের ইউএই-তে দুর্দান্ত রেকর্ড রয়েছে। তিনি আইপিএল ২০১৪য় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে খেলে ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্টের খেতাবও জিতেছেন। এই অবস্থায় এই বিস্ফোরক খেলোয়ড়ও নিজের দলকে একার দমে ম্যাচ জেতাতে সক্ষম।
কায়রন পোলার্ড – মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

২০১০এ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে যোগ দেওয়া কায়রন পোলার্ড নিয়মিত মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন আর এটাই কারণ যে এই ফ্রেঞ্চাইজি একবারও তাকে দলের বাইরে যেতে দেয়নি। পোলার্ডের গগনচুম্বি ছক্কা সমর্থকদের মন জয় করে নেয়। অলরাউন্ডার কায়রন পোলার্ড তখন থেকে এখনও পর্যন্ত মুম্বাইয়ের হয়ে মোট ১৪৮ ম্যাচ খেলেছেন আর ২৮.৬৯ গড়ের সঙ্গে ২৭৫৫ রান করতে সফল হয়েছেন। পোলার্ড নিয়মিত দলের অংশ থেকেছেন। বোলিংয়ে পোলার্ড ৮.৮৫ ইকোনমি রেটে মুম্বাইয়ের হয়ে ৫৬টি উইকেট নিয়েছেন আর ফিল্ডিংয়েও তার প্রদর্শন অসাধারণ থেকেছে। এই খেলোয়াড় বেশকয়েকবার একার দমে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। এটাই কারণ এই খেলোয়াড় আমাদের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছেন।
এবি ডেভিলিয়র্স – রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর

এবি ডেভিলিয়র্স ২০১১য় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলে যোগ দিয়েছিলেন আর তখন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত এই তারকা আরসিবি দলের অংশ থেকেছেন। তার প্রত্যেক আইপিএলে রেকর্ড দুর্দান্ত। এবি ডেভিলিয়র্সের ব্যাটিংয়ের সমর্থক পুরো বিশ্বে পাওয়া যাবে। তার ৩৬০ ডিগ্রি শট খেলার ধরণ বোলারদের জন্য মাথাব্যাথা হয়ে যায়। বল যেমনই হোক এই ব্যাটসম্যান তা মাঠের বাইরে পৌঁছতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম। এবি ডেভিলিয়র্সও এমনই ব্যাটসম্যান যিনি একার দমে দলকে ম্যাচ জেতাতে পারেন। তিনি এমনটা বেশকয়েকবার আরসিবি দলের হয়ে করেওছেন। এই কারণে এই খেলোয়াড় আমাদের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন।