পইপই করে যে কাজটা না করতে বলেছিলেন বিরাট, সেই কাজটাই করে বসলেন ভারতীয় দলের টেস্ট স্পেসালিস্ট উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা। ভারত অধিনায়কের অবাধ্য় হয়ে মিডিয়াতে বলে বসলেন, ব্য়ক্তিগতভাবে কোচ হিসেবে কুম্বলেকে কোনও দিনই খুব কড়া মনে হয়নি তাঁর। এখানেই না থেমে থেকে কোহলির অত্য়ন্ত পছন্দের পাত্র বর্তমান ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কুম্বলের কোচিং স্টাইলের খুব একটা পার্থক্য় নেই বলেও মন্তব্য় করে বসেছেন তিনি। ভারতীয় দল যখন বিরাটের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কায় একদিনের ক্রিকেট সিরিজ খেলতে নামবে নামবে করছে রবিবার, তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগেই কুম্বলে সম্পর্কে এরকম মন্তব্য় করে কোচ বিতর্ককে ফের উস্কে দিলেন বাংলার এই উইকেটকিপার।
শ্রীলঙ্কা থেকে টেস্ট সিরিজ খেলে সবে কলকাতা ফিরেছেন ভারতীয় দলের এই উইকেটকিপার-ব্য়াটসম্য়ান। কুম্বলে প্রসঙ্গে ঋদ্ধির বক্তব্য়, ”ব্য়ক্তিগতভাবে কোনওদিনই কুম্বলেকে কড়া মনে হয়নি। কোচ হিসেবে ওকে একটু কঠোর হতেই হতো। সেটাই হয়েছিল। কারও সেটা পছন্দ হয়নি, আবার কারও খারাপ লাগেনি। অনিল ভাই থাকাকালীন আমার তো একবারও ওকে কড়া মনে হয়নি।” কাকে বেশি ভালো মনে হয় – কোচ কুম্বলে, নাকি কোচ শাস্ত্রী? উত্তরে যা জানালেন, তাতে শাস্ত্রীর বিষনজরে পড়ার জন্য় যথেষ্ট। ঋদ্ধির জবাব, ”খুব একটা পার্থক্য় নেই। কুম্বলে ভাই আর শাস্ত্রীর মধ্য়ে একটাই পার্থক্য়। কুম্বলে ভাই আমাদের সবসময় বলত, স্কোর বোর্ডে বড় রান চাই – মানে ৪০০, ৫০০ বা ৬০০ (টেস্টের আসরে)। আর ওর মনে হতো, আমাদের বোলাররা বিপক্ষ দলতে ১৫০-২০০ রানের মধ্য়ে আউট করে ফেলবে। সেটা সবসময় সম্ভব নয়। অন্য়দিকে, রবিভাই ওসব চায় না। ও শুধু আমাদের বলে, যাও মাঠে গিয়ে বিপক্ষ দলকে শেষ করে ফেলো একেবারে। তাই দু‘জনের মধ্য়ে খুব একটা পার্থক্য় দেখি না। দু‘জনেই পজিটিভ। রবি ভাই যখন টিম ডিরেক্টর ছিল, সেই সময় আক্রমণাত্মক ছিল। এখন নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও বেশি করে দলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ”
চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে ফেরার পরই ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে ইস্তফা দেন অনিল কুম্বলে। তিনি কেন ইস্তফা দিলেন হঠাৎ করে, তার ব্য়াখ্য়া এখনও পর্যন্ত দেয়নি বিসিসিআই। সেই রহস্য়ের জট খুলতে কোনও ক্রিকেটারও আগ বাড়িয়ে এগিয়ে আসেননি। বোর্ডের বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল, আসলে কোচ হিসেবে কুম্বলেকে ব্য়ক্তিগতভাবে মোটেই পছন্দ ছিল না কোহলির। তাঁর কোচিং স্টাইলের বিরোধিতা করতে করতে দ্বন্দ্ব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে কুম্বলের পরামর্শ অগ্রাহ্য় করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনালে আগে বোলিং নেন বিরাট। আর এই ব্য়ক্তিগত ইগোর জেরে ভারতকে আইসিসি পরিচালিত কোনও টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের কাছে প্রথমবার হারতে হয়। কোচ ও অধিনায়কের মধ্য়ে কথা আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই কাউকে কিছু না জানিয়েই বোর্ডের কাছে নিজের ইস্তফা পাঠিয়ে দেন কুম্বলে। ক্য়ারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে পা রাখার পরই বিরাটরা জানতে পারেন, কুম্বলে আর কোচ নেই। ওদিকে, পাকিস্তানের কাছে লজ্জাজনক হারের কারণ নিয়ে কোনও রকম ব্য়াখ্য়া দেওয়া তো দূরে থাকা, বিরাট উল্টে দলের ক্রিকেটারদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন, এনিয়ে মিডিয়াতে কোনও রকম মন্তব্য় না করতে। দলে জায়গা হারানোর ভয়ে অধিনায়কের সঙ্গে কেউ আর সঙ্ঘাতে যাননি। কিন্তু, শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে ঋদ্ধি এবিষয়ে তাঁর মন্তব্য় রেখে ফের জলঘোলা করে দিলেন। এরপর জাতীয় দলে তাঁর জায়গা থাকবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল। দলের অধিনায়কের নির্দেশ অমান্য় করে তিনি কি ঠিক কাজ করলেন?
তবে, অধিনায়ক বিরাট সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য় করেছেন ঋদ্ধি। ”সময়ের সঙ্গে বিরাট উন্নতি করেছে। দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আরও একাত্ম হয়ে গিয়েছে। আমরা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া সারি। আবার বেড়াতেও যাই।” প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র সফরে ভারত টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে শ্রীলঙ্কাকে। এর কারণ, হিসেবে ঋদ্ধি শ্রীলঙ্কান ব্য়াটসম্য়ানদের খারাপ ব্য়াটিংয়ের কথা উল্লেখ করেন। বাংলা দলের সতীর্থ মহম্মদ সামি‘ও ভারতীয় দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলেন টেস্ট সিরিজে। তাঁর সম্পর্কেও ইতিবাচক শোনাল ঋদ্ধিকে, ”চেট সারিয়ে দলে ফিরলেও সামি এখনও আগের মতোই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে বল করছে। এটা ওর জন্য়ও ভালো আর টিমের জন্য়ও। আক্রমণাত্মক বল করলে উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।”