ক্রিকেট হোক বা অন্য খেলা, তাতে অধিনায়কের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ তাদের নিজেদের দেশের জনতার বিশ্বাসের ভরসার প্রমাণ দিতে হয়। টি-২০ ক্রিকেট যবে থেকে এসেছে তবে থেকেই ক্রিকেটের রূপই বদলে গিয়েছে। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা টি-২০ ক্রিকেট আসার পর যথেষ্ট বেড়ে গিয়েছে। টি-২০ এমন একটা ফর্ম্যাট যেখানে অধিনায়কদের যথেষ্ট দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
টি-২০ ক্রিকেটে অধিনায়কের আসল পরীক্ষা হয় আর কিছু অধিনায়ক এই পরীক্ষায় সফলও হন। তো কিছু অধিনায়ক ব্যর্থ থেকেছেন। কখনও কখনও এমনটা দলের শীর্ষ খেলোয়াড় অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে তারা দুর্দান্ত প্রদর্শনও করেন কিন্তু তাকে কেউ মনে রাখে না।
ক্রিকেটেও কিছু এমন পার্ট টাইম অধিনায়ক থেকেছেন যিনি নিজেদের দেশের হয়ে কিছু ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন আর সফলতাও হাসিল করেছেন। তো আসুন আপনাদের আজ আমরা জান্নি তী-২০ ক্রিকেটে পার্ট্টাইম অধিনায়কত্ব করা এমন ৫জন তারকা ক্রিকেটারের ব্যাপারে।
অজিঙ্ক রাহানে
ভারতীয় ক্রিকেট দলে এমনিতে তো এক সে এক প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু কিছু এমন খেলোয়াড়ও রয়েছেন যারা সবসময় নিজের প্রতিভা মাঠে বড়ই শান্ত ভাবে দেখিয়ে চলে যান। তাদের ব্যাটই তাদের প্রতিভার সাক্ষ্য দেয়। এমনই একজন ক্রিকেটার টিম ইন্ডিয়ার সহঅধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে।
সম্ভবতই আপনারা কেউ জেনে থাকবেন যে বর্তমান টেস্ট দলের সহঅধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে টি-২০তেও ভারতীয় দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছেন। আসলে যখন ভারতীয় দল জিম্বাবীয়ে সফরে গিয়েছিল তখন রাহানে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ২টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন, যার মধ্যে একটি ম্যাচ তিনি জেতেন এবং একটি হারেন। রাহানেকে সকলেই টেস্ট ব্যাটসম্যান মনে করেন। কিন্তু আপনারা কী জানেন যে রাহানে আইপিএলে এক ওভারে পরপর ৬টি বাউন্ডারি মারা ব্যাটসম্যানও হয়েছেন। তিনি আইপিএল ২০১২য় রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ওপেনিং করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের জোরে বোলার এস অরবিন্দের এক ওভারে পরপর ৬টি বাউন্ডারি মেরেছিলেন।
জেমস ট্রেডওয়েল
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অসাধারন অফ স্পিনার জেমস ট্রেডওয়েল ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-২০ তিন ফর্ম্যাটেই প্রদর্শন করেছেন। ট্রেডওয়েল ২০০০এ কেন্টের হয়ে ডেবিউ করেছিলেন। নিজের কেরিয়ারে শেষে তিনি কাউন্টিতে ৬১৩টি ম্যাচে ৮৩০টি উইকেট হাসিল করেন। জেমস সেপ্টেম্বর ২০১৮য় ক্রিকেটকে বিদায় জানান। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে শান্ত স্বভাবের জন্য জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের টি-২০ দলের অধিনায়কুত্ব করেছিলেন। আসলে জেমস ট্রেডওয়েল ইংল্যান্ডের হয়ে ২০১৩য় একটি টি-২০ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অধিনায়কত্ব করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতই ওই ম্যাচের কোনো পরিণাম বেরয়নি। তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ২০১০ এ ডেবিউ করেছিলেন। তখন থেকে তিনি ৪৫টি ওয়ানডে, ১৭টি টি-২০ আর ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৪য় তিনি ভারতের বিরুদ্ধে শেষবার টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে তিনি ৭৮টি উইকেট নিয়েছিলেন।
কাইল মিলস
নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত জোরে বোলার কাইল মিলস নিজের ১৪ বছরের দুর্দান্ত কেরিয়ারে প্রায়ই শীর্ষ দশ ওয়ানডে বোলারদের মধ্যে থেকেছেন আর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এক নম্বর বোলার থেকেছেন। মিলস নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৭০টি ওয়ানডেতে ২৪০টি উইকেট নিয়েছেন। সেই সঙ্গেই তিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছেন।
মিলসের চেয়ে বেশি ওয়ানডে উইকেট তার দেশের হয়ে একমাত্র ড্যানিয়েল ভেত্তরি (২৯৭) নিয়েছেন। মিলস নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। তিনি দেশের হয়ে ৪২টি টি-২০ আর ১৯টি টেস্ট ম্যাচও খেলেন। এই দলের কাছে এক সে এক দিগগজ অধিনায়ক থেকেছেন যাদের আপনারা সকলেই চেনেন। কিন্তু এদের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন জোরে বোলার কাইল মিলসও টি-২০ আন্তর্জাতিকের দেশের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যদি সমস্ত ফর্ম্যাট মিলিয়ে মিলসের উইকেটের কথা বলা হয় তো তিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৭০টি ওয়ানডে ম্যাচে ২৪০টি উইকেট, টেস্টে ১৯টি ম্যাচে ৪৪টি উইকেট আর টি-২০তে মিলস ৪৩টি উইকেট নিয়েছেন।
ব্র্যাড হ্যাডিন
অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্র্যাড হ্যাডিন ইয়ান হিলি আর অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সবচেয়ে সফল উইকেটকিয়াপ্র। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দুর্দান্ত উইকেটকিপিং করেছেন। সকলেই তাকে একজন দুর্দান্ত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মনে করেন। কিন্তু আপনারা কী জানেন ব্র্যাড হ্যাডিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একবার অধিনায়কত্বও করেছেন। আসলে হ্যাডিনকে পন্টিং আর মাইকেল ক্লার্কের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্বের সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে তিনি ২টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন আর তার জয়ের হার ৫০ শতাংশ থেকেছে। সম্ভবতই কারও মনে আছে যে হ্যাডিন অধিনায়কত্ব করেছিলেন। হ্যাডিন এখন ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। তিনি এই সময় দলের সহায়ক কোচের পদে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার ১২৬টি ম্যাচে হ্যাডিন ৩১.৫৩ গড়ে ৩১২২ রান করেছেন। এর মধ্যে ১৬টি হাফসেঞ্চুরি আর ২টি সেঞ্চুরি রয়েছে। সেই সঙ্গেই তিনি ১৭০টি ক্যাচ আর ১১টি স্ট্যাম্প আউটও করেন।
বীরেন্দ্র সেহবাগ
এমনিতে ত বীরেন্দ্র সেহবাগকে সকলেই ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান হিসেবে চেনেন। তার নামে বেশকিছু দুর্দান্ত বিশ্বরেকর্ডও রয়েছে। যখন যখন বীরেন্দ্র সেহবাগের নাম ওঠে তো মনের মধ্যে ঝড়, তুফান, প্রলয়ের মত শব্দের কথা মনে আসে। কারণ যখন সেহবাগ কোনো বোলারকে মারতে শুরু করতেন তো তাকে এতটাই মারতেন যে বোলার বল করতেই ভুলে যেত। বোলারদের মধ্যে সেহবাগের আতঙ্ক এতটাই ছিল যে তাদের লাইন, লেংথ আর গতি সবকিছুই বিগড়ে যেত। এই কারণে সেহবাগ ক্রিকেটে যে উচ্চতা অর্জন করেছেন তা বিরল। সেহবাগ ক্রিকেট ইতিহাসে ট্রিপল সেঞ্চুরি আর একদিনের ক্রিকেটে ডবল সেঞ্চুরি করা প্রথম আর একমাত্র ব্যাটসম্যান। এগুলো আপনারা সকলেই জানেন। কিন্তু আপনারা কী জানেন যে সেহবাগ দেশের হয়ে টি-২০ ক্রিকেটে অধিনায়কত্বও করেছেন। আসলে সেহবাগ ১ ডিসেম্বর ২০০৬ এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে টি-২০ ইতিহাসের প্রথম ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছিলেন আর তাতে জয়ও পেয়েছিলেন। এই ম্যাচে ভারত ৬ উইকেটে দুর্দান্ত জয় হাসিল করেছিল। এই ম্যাচে সেহবাগ ৩৪ রান করেছিলেন।