শরীরে ভেতরে মারণরোগ ক্য়ান্সার বাসা বাঁধার পরও বিশ্বকাপে দেশের জান লড়িয়ে দেওয়া। তারপর ওই মারণরোগ সারিয়ে ফের ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসা, সেই একই রকম প্রাণোচ্ছলভাবে – যুবরাজ সিং যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অন্য়দের কাছে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য যথেষ্ট। এই মন্তব্য় করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ভেরি ভেরি স্পেশাল ম্য়ান বাঙ্গিপুরম বেঙ্কটসাই লক্ষ্মণ। ভি ভি এসের মতে যুবির মধ্য়ে লড়াই করার অসীম সাহস রয়েছে। আর এই কারণেই যুবরাজ অন্য়দের জন্য় রোল মডেল। কিভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবন বাজি রেখে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যেতে হয়, যুবি তা দেখিয়ে দিয়েছেন।
২০১১ বিশ্বকাপের পর জানা যায়, ভারতের স্টার-অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং’য়ের ক্য়ান্সার হয়েছে এবং সবকিছু জেনেও ক্য়ান্সার নিয়েই বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসার সময় একের পর এক কেমো নেওয়ার ছবি পোস্ট হওয়ার পর সবাই তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার শুভ কামনা করলেও, কোথাও কোথাও না কোথাও মনের কোণায় সন্দেহ ছিল, যুবি কি আবার মাঠে ফিরতে পারবেন! সম্ভবত এখানেই তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারে ইতি পড়ে গেল। কিন্তু, সেসবকে ভুল প্রমাণ করে আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসেন যুবরাজ।
ক্য়ান্সার সারিয়ে ভারতীয় দলে ফেরার পর সেই আগের যুবরাজ আর নেই তিনি। ক্য়ান্সার সেরে গেলেও, তার শরীরকে মারণরোগের ধকল সামলাতে হয়েছে। আগের মতে তাঁর খেলায় আর ধারাবাহিকতা নেই। ক্য়ান্সার সারিয়ে ভারতীয় দলে ফেরার পর একাধিকবার দলের বাইরে চলে গিয়েছেন। তবে, খেলা চালিয়ে যাওয়ার লড়াইটা তাঁর থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি ক্য়ান্সার। আর তার জোরেই যতবার দল থেকে বাদ পড়েছেন, ততবার কামব্য়াক করেছেন। যদিও যুবি এখন তাঁর অতীতকালের ছায়া। তবে, ২০১১ বিশ্বকাপে ক্য়ান্সার নিয়ে যেভাবে দলকে টেনেছিলেন এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোযাড় হয়েছিলেন, তা সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল।
পুরনো দিনের সেইসব কথা মনে করে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মণ বলেন, ”যুবরাজ আমার ভালো বন্ধু। আবার আমার অন্য়তম রোল মডেল। ২০১১ সালে ও যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার এখনও মনে পড়ে, ইংল্য়ান্ডে ওর চিকিৎসা করানোর কথা। আমরা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, অসুখ লুকিয়ে ও বিশ্বকাপ খেলেছিল। তা সত্ত্বেও ম্য়ান অফ দ্য় সিরিজ হয়েছিল। ভারত বিশ্বকাপ জেতার পরই ও চিকিৎসা করাতে যায়। তারপর ধরা পড়ে ওর ক্য়ান্সার হয়েছে। আমরা খবরটা শুনেই চমকে গিয়েছিলাম।”
ক্য়ান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সেরে ওঠা ব্য়ক্তিদের ওপর আধারিত ‘আই অ্য়াম আ সারভাইভর’ বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে গত শুক্রবার হাজির ছিলেন লক্ষ্মণ। তিনি আরও বলেন যে যুবরাজ তাঁর মানসিক কাঠিণ্য় অনেক বেশি। আর সেই কারণেই যুবি ক্য়ান্সার সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর যুবরাজের উদ্দেশে স্টাইলিশ হায়দরাবাদী ব্য়াটসম্য়ানটি বলেন,
”তুমি দুর্দান্ত, তুমি দেশের মানুষের হার্টথ্রব। তোমার ক্য়ান্সার ধরা পড়েছিল। কিন্তু, তুমি লড়াই করে ফের সুস্থ হয়ে ওঠো। তাই তুমি অন্য়দের জন্য় অনুপ্রেরণা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার যুবরাজ যদি ক্য়ান্সার সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, তাহলে বাকিরাও পারবেন।”
উল্লেখ্য়, বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে একটি ছোটো ভিডিও দেখানো হয়। তাতে যুবরাজের সঙ্গে আরেক ক্য়ান্সার সারভাইভর বলিউড অভিনেত্রী মণীষা কৈরালাও তাঁর বক্তব্য় রাখেন ক্য়ান্সার রোগীদের উদ্দেশে। ‘আই অ্য়াম আ সারভাইভর’ বইটির লেখক বিখ্য়াত ক্য়ান্সার স্পেশালিস্ট বিজয় আনন্দ রেড্ডির প্রশংসা করেন লক্ষ্মণ। বইটিতে ১০৮ জন এমন মানুষের কথা রয়েছে, যাঁরা মারণরোগ ক্য়ান্সার সারিয়ে ফের জীবনের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। অনুষ্ঠানে আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা একসময় ক্য়ান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁরা লড়াই করে সুস্থ হয়ে ওঠেন।