সেহবাগ এই ৩টি ইনিংসকে বললেন ওয়ানডে আর টেস্টের বছরের শ্রেষ্ঠ ইনিংস,এই তারকাদের করলেন উপেক্ষা

টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন বিস্ফোর ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র সেহবাগ ২০১৯ সালের নিজের পছন্দের সেরা ইনিংসগুলিকে বেছেছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা যে সেহবাগ বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ইনিংসগুলির তালিকায় না তো বিরাট কোহলি আর না এমএস ধোনিকে জায়গা দিয়েছেন। বীরু নিজের এই তালিকায় প্রপার ব্যাটসম্যানদের বাইরে সেই খেলোয়াড়দেরও ইনিংসগুলিকে এই তালিকায় জায়গা দিয়েছেন যারা ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি নিজের বোলিংয়ের জন্য পরিচিত। তিনি এই তালকায় একজনও ভারতীয় খেলোয়াড়কে জায়গা দেননি। আসলে বীরেন্দ্র সেহবাগ ক্রিকবাজের একটি শো চলাকালীন এই বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ইনিংসগুলির ব্যাপারে নিজের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। সেহবাগ সর্বপ্রথম টেস্টের তিন সবচেয়ে সেরা ইনিংসের উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি ওয়ানডেতে খেলা হওয়া খেলা তিনটি অসাধারণ ইনিংসের ব্যাপারেও জানিয়েছেন। সবার আগে আমরা আপনাদের সেহবাগের এই বছরের সবচেয়ে পছন্দের টেস্ট ইনিংসগুলির ব্যাপারে জানব।

বীরেন্দ্র সেহবাগ মানলেন টেস্ট ক্রিকেটে এই তিন ইনিংস হলো সর্বশ্রেষ্ঠ

১. কুশল পেরেরা (নট আউট ১৫৩*)

সেহবাগ এই ৩টি ইনিংসকে বললেন ওয়ানডে আর টেস্টের বছরের শ্রেষ্ঠ ইনিংস,এই তারকাদের করলেন উপেক্ষা 1

শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরক ওপেনার কুশল পেরেরা টেস্ট ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করেন। শ্রীলঙ্কার তারকা প্লেয়ার কুশল পেরেরার নামে টেস্ট ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠতম ইনিংস খেলার রেকর্ড নথিভুক্ত রয়েছে। ভীষণ কম মানুষই জানেন যে ২৯ বছরের কুশল গত বছর শ্রীলঙ্কার গলের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার দলকে একার দমে হারিয়ে দিয়েছিলেন। কুশলের এই ইনিংসকে দ্য গোল্ডেন উইলোতে সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়েছিল। বিশেষ ব্যাপার এটাই যে এই তালিকায় ডন ব্র্যাডম্যান আর স্বয়ং বীরেন্দ্র সেহবাগের ইনিংসও শামিল রয়েছে। কুশলের ইনিংসের সবচেয়ে বিশেষ ব্যাপার এটাই ছিল যে তিনি নীচের দিকের পাঁচজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে ১৯৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। অন্যদিকে শেষ উইকেটের সঙ্গে ৮৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। কুশলের এই ইনিংসকে এই কারণেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কারণ যে ডারবানের পিচে তিনি রান করেছেন তাতে গত ১০টি টেস্ট ম্যাচের গড় স্কোর ২০০ রানের ছিল। কুশল না শুধু সেঞ্চুরি করেছেন বরং কঠিন পিচে দলের স্কোর ৩১১ রান পর্যন্ত পৌঁছেও দিয়েছিলেন।

২. বেন স্টোকস (নটআউট ১৩৫*)

সেহবাগ এই ৩টি ইনিংসকে বললেন ওয়ানডে আর টেস্টের বছরের শ্রেষ্ঠ ইনিংস,এই তারকাদের করলেন উপেক্ষা 2

এরপর বীরেন্দ্র সেহবাগ বর্তমান সময়ের ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সেরা অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের অ্যাসেজ সিরিজ চলাকালীন খেলা ১৩৫ রানের ইনিংসকে রেখেছেন। আপনাদের জানিয়ে দিই যে স্টোকসের এই ইনিংসের সৌজন্যেই ইংল্যান্ড সিরিজে সমতা ফেরাতে সফল হয়েছিল। এই ম্যাচ শেষ ওভার পর্যন্ত গিয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে যখন শেষ ওভাআর পর্যন্ত কোনো ম্যাচ যায় তো সেই ম্যাচের রোমাঞ্চ আপনি স্বয়ংই বুঝতে পারবেন। যখনই টেস্ট ক্রিকেটে বেন স্টোকসের সবচেয়ে ভালো ইনিংসের কথা বলা হবে তাতে স্টোকসের এই ইনিংস সবার উপরে থাকবে। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য ৩৫৮ রানের অসম্ভব লক্ষ্য ছিল। এই অবস্থায় মনে হচ্ছিল যে ইংল্যান্ডের হার নিশ্চিত, কিন্তু বেন স্টোকস এই ম্যাচে ২১৯ বলে অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে ম্যাচে জিতিয়ে দেন। বেন স্টোকস ২০১০এর পর অ্যাসেজের কোনো টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করা প্রথম আর দ্বিতীয় ইংলিশ ব্যাটসম্যান হয়েছিলেন। এর আগে অ্যাসেজ ২০১৩য় তিনি ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ১২০ রান করেছিলেন আর এখন তিনি আবারো ১৩৫ রানের ইনিংস খেলে অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছিলেন।

৩. ডেভিড ওয়ার্নার (নট আউট ৩৩৫*)

সেহবাগ এই ৩টি ইনিংসকে বললেন ওয়ানডে আর টেস্টের বছরের শ্রেষ্ঠ ইনিংস,এই তারকাদের করলেন উপেক্ষা 3

অস্ট্রেলিয়ার বিস্ফোরক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের ৩৩৫ রানের ইনিংসকে সেহবাগ নিজের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রেখেছেন। ওয়ার্নারের এই ইনিংস পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিল। ওয়ার্নার যে মেজাজে ব্যাটিং করছিলেন তাতে এমন মনে হচ্ছিল যে তিনি সম্ভবত লারা টেস্ট ক্রিকেটের সর্বাধিক ব্যক্তিগত স্কোরের (অপরাজিত ৪০০ রান) ভেঙে দিতে সফল হবেন। যদিও অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের স্কোর যখন তিন উইকেটে ৪৮৯ রান ছিল তখন অধিনায়ক টিম পেন ইনিংস সমাপ্তি ঘোষণা করে দেন আর ওয়ার্নার এই বড়ো রেকর্ড পর্যন্ত পৌঁছনোর চেষ্টা করতে পারেননি।

বীরেন্দ্র সেহবাগের নজরে এই বছরের এই তিনটি ইনিংস হল সবচেয়ে স্পেশাল

১. থিসেরা পেরেরা ১৪০ (৭৪)

সেহবাগ এই ৩টি ইনিংসকে বললেন ওয়ানডে আর টেস্টের বছরের শ্রেষ্ঠ ইনিংস,এই তারকাদের করলেন উপেক্ষা 4

বীরেন্দ্র সেহবাগ এই বছরের সবচেয়ে ভালো ওয়ানডে ইনিংসগুলির মধ্যে সবার উপরে শ্রীলঙ্কার থিসেরা পেরেরাকে রেখেছেন। আসলে নিউজিল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদেরই ঘরের মাঠে মাউন্ট মাউঙ্গানুইয়ের মাঠে ৩২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ১২৮ রানের ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। এই অবস্থায় থিসেরা পেরেরা ইনিংস সামলান আর রান বৃষ্টি শুরু করে দেন। তিনি ৫৭ বলে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন যা শ্রীলঙ্কার হয়ে তৃতীয় সবচেয়ে দ্রুত গতির সেঞ্চুরি। তার চেয়ে কম বলে সনৎ জয়সূর্য দু বার ৪৮ আর ৫৫ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এক সময় এমন মনে হচ্ছিল যে পেরেরা একার দমে নিউজিল্যাণ্ডের গ্রাস থেকে এই ম্যাচ বের করে নেবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অন্য প্রান্তে কিছু টেল এন্ডার থাকায় পেরেরা দলকে জয়ের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে পারেননি। শ্রীলঙ্কান দল ২৯৮ রানেই শেষ হয়ে যায়। পেরেরা ৪৭ ওভারের দ্বিতীয় বলে শেষ উইকেট হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। থিসেরার এই ইনিংসকে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহসে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা হবে।

২. বেন স্টোকস ৮৪* (৯৮)

সেহবাগ এই ৩টি ইনিংসকে বললেন ওয়ানডে আর টেস্টের বছরের শ্রেষ্ঠ ইনিংস,এই তারকাদের করলেন উপেক্ষা 5

২০১৯ বিশ্বকাওএর ফাইনাল ম্যাচে যখন কিউয়ি বোলাররা ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল তখন বেন স্টোকস ক্রিজে অভেদ্যভাবে নিজের পা শক্ত করে ফেলেছিলেন। আর তার নট আউট ৮৪ রানের ইনিংস প্রথমে ম্যাচকে টাই পর্যন্ত পৌঁছোয়। এরপর সুপার ওভারে হওয়া ১৫ রানের মধ্যে স্টোকস আট রান করেন। যদিও সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হয়ে যায়। এই অবস্থায় বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের সিদ্ধান্ত বাউন্ডারির ভিত্তিতে হয়, এই ম্যাচে বেন স্টোকসের ব্যাট থেকে ২টি ছক্কা সহ সাতটি বাউন্ডারি বেরিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ড যদি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকে তাতে সবচেয়ে বড়ো যোগদান বেন স্টোকসের থেকেছে। তাই তো ইংলিশ অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যানকে বলতে হয়েছিল যে স্টোকস প্রায় সুপার হিউম্যানের মতোই। বেন স্টোকসের এই ইনিংসকে সেহবাগ দ্বিতীয় নম্বরে রেখেছেন।

৩. কুল্টার নাইল ৯২ (৬০)

সেহবাগ এই ৩টি ইনিংসকে বললেন ওয়ানডে আর টেস্টের বছরের শ্রেষ্ঠ ইনিংস,এই তারকাদের করলেন উপেক্ষা 6

বীরেন্দ্র সেহবাগ তৃতীয় নম্বরে এমন ব্যাটসম্যানের ইনিংসকে রেখেছেন যিনি ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি নিজের বোলিংয়ের জন্য পরিচিত। আসলে বিশ্বকাপ ২০১৯ এর দশম ম্যাচে সেটাই হয়েছিল যার কল্পনা সম্ভবত কেউই করেননি। এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার দল ৭৯ রানে নিজেদের ৫টি উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। এমন মনে হচ্ছিল যে এই দল সম্ভবতই ১৫০ রান পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে, কিন্তু এই ম্যাচে আট নম্বরে ব্যাটিং করার জন্য নামা নাথান কুল্টার নাইল নিজের জীবনের সেরা ইনিংস খেলেন আর দলের স্কোর ২৮৮ রানে পৌঁছে দেন। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আট নাম্বার বা তার পর খেলে কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ স্কোর ৬৪ রানের ছিল। এই কৃতিত্ব ২০০৩ এ অ্যান্ড্রু বিকেল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পোর্ট এলিজাবেথে করেছিলেন। ওই ম্যাচে কুল্টার নাইল এই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন আর এই নম্বরে সবচেয়ে বেশি রান করা অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ব্যাটসম্যান হয়ে গিয়েছেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *