ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে রাঁচির ঝাড়খন্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের স্টেডিয়ামে আজ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলা হচ্ছে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি এই ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতীয় দলে এই ম্যাচে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দল নাথান কুল্টার নাইলের জায়গায় ঝায় রিচার্ডসনকে তাদের প্লেয়িং ইলেভেনে জায়গা দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত শুরুয়াত
অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার রান করতে পারছিল না। কিন্তু আজ উসমান খোয়াজা আর অ্যারণ ফিঞ্চ প্রথম উইকেটের জন্য ১৯৩ রান যোগ করেছেন। এই পার্টনারশিপে তারা সমস্ত ভারতীয় বোলারদেরই জমিয়ে ধোলাই করেছেন। দুজনে ১৯১ বলে এই রান যোগ করেন। এরপর কুলদীপ যাদব অ্যারণ ফিঞ্চকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন। যদিও অন্য ওপেনার খোয়াজা শেষপর্যন্ত সেঞ্চুরি করেন।
ভারতের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ
walks off after he was dismissed during game one of the T20I Series between India and Australia at ACA-VDCA Stadium on February 24, 2019 in Visakhapatnam, India. (Photo by Robert Cianflone/Getty Images)
ভারতীয় দল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে। দুই ওপেনার শিখর ধবন এবং রোহিত শর্মা ভারতকে আবারো বড়ো শুরুয়াত দিতে ব্যর্থ হন। শিখর ধবন যেখানে মাত্র এক রানই করেন সেখানে রোহিত করেন মাত্র ১৪ রান। তৃতীয় উইকেট হিসেবে আম্বাতি রায়ডুকে একটি দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন প্যাট কমিন্স। এরপর এমএস ধোনি আর বিরাট কোহলি ভারতের ইনিংস সামলান। কিন্তু ধোনিও বড়ো রান করতে ব্যর্থ হন। এরপর কেদার যাদব কিছুক্ষণ ভারতীয় ইনিংসকে নির্ভরতা দিলেও শেষ মেশ তিনিও আউট হয়ে যান।
বিরাট করলেন সেঞ্চুরি
একদিক ধরে রেখে ভারতকে নির্ভরতা দেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাকে যথাযথ সঙ্গ দেন বিজয় শঙ্কর। এক সময় মনে হচ্ছিল ভারত এই ম্যাচ সহজেই জিতে যাবে কিন্তু তখনই অ্যাডাম জাম্পার একটি বলে বোল্ড হয়ে যান বিরাট। ভারত অধিনায়ক ৯৫ বলে ১৬টি চার এবং ১টি ছক্কার সাহায্যে ১২৩ রান করেন। এরপর আর কোনো ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারেন নি আর ভারত ৪৮.২ ওভারে মাত্র ২৮১ রানেই অলআউট হয়ে যায়।
ম্যাচ শেষে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেন,
“আমরা লাস্ট ১০ ওভার যেভাবে বল করেছি তাতে ম্যাচে ফিরে এসেছিলাম। যেভাবে অস্ট্রেলিয়া এগোচ্ছে তাতে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের ৩৫০ বেশি রান তাড়া করতে হবে। আমার মতে ওরা প্রথম৪০ ওভার দুর্দান্ত ব্যাট করেছে, কিন্তু আমরা ম্যাক্সওয়েলের রান আউটের পর শেষ দশ ওভারে ফিরে এসেছি ম্যাচে। আমরা আমদের সুযোগ নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলাম কিন্তু কি আর করা যাবে”.
“আমি বলেই ছিলাম যে সাতটা সাড়ে সাতটার দিকে শিশির পড়বে, কিন্তু তা হয়নি আর এখনো পড়ছে না। আমার হিসেবে সামান্য ভুল হয়ে গিয়েছিল। যে কোনো মূল্যেই আমরা স্কোরবোর্ড সচল রাখতে চেয়েছি। উইকেটেরও উন্নতি হয়নি এবং ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ হয়নি। এই জন্য আমরা যতটা লুজ বল পেয়েছি তার ফায়দা তুলতে চেয়েছি। একটা সময় পর্যন্ত আমি সেটাই চেষ্টা করে গিয়েছি আমার ইনিংসে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই আমি জানতাম যে যদি আপনি একটাও ভুল রিস্ক নেন এবং একটা উইকেট পড়ে যায় তো ম্যাচ শক্ত হয়ে যাবে। আর এটাই হয়েছে। যদি আমাদের ৩ উইকেট পড়ত আর শেষ ১৩-১৪ ওভারে ১০০ রান করতে হত তাহলে সেটা তোলা যেত। কিন্তু ৫ উইকেট পড়ায় সেটা মুশকিল হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া সেটা ভালোভাবেই জানত তাই ওরা আমাদের হিট করানোর জন্য ভালো জায়গায় বল রাখছিল। তারপর আমি আর বিজয় আউট হয়ে যাই। সেখান থেকে আর পেছনে তাকানোর জায়গা ছিল না।”

“কোনো দলই এটা চায় না (শুরুতেই ৪-৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা)। আমরা এমন একটা দল যারা আমাদের ক্রিকেটকে অনেক গর্বের মুহূর্ত এনে দিয়েছি। আমরা এমন একটা দল যারা পার্টনারশিপ গড়েছে। আমরা একসঙ্গে অনেক সময়েই তিন উইকেট হারাইনি। এটা দু একবার এই সিরিজে হয়েছে আর এটাই সেই জায়গা যেখানে এই সিরিজে আমাদের কাজ করতে হবে। যারা আজ আউট হয়েছে তারা বেশিরভাগ সুযোগকেই ফায়দা নিতে চাইবে। আমরা ভেঙে পড়তে চাইনা। আমরা পার্টনারশিপ চাই যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। বল হিট করার ব্যাপারে এটা আমার অন্যতম সেরা সেঞ্চুরি। প্রথম বল থেকেই আমার মাথা পরিস্কার ছিল। এমনকী তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও আমি আমার নিজের খেলা খেলার কথা ভেবেছিলাম ভাবিনি আমি শট খেললে কি ক্ষতি হতে পারে। আমার আউট হয়ে যাওয়াতে আমি খুবই হতাশ হয়েছি। আমি বাস্তবে ভেবেছিলাম যে বল আর রানের মধ্যে ২০ রানের ব্যবধান থাকার সুযোগ থাকবে।”
“আজ অস্ট্রেলিয়া ভালো খেলেছে। অ্যাডাম ভালো বল করেছে আর ওরা ম্যাচ জিতেছে। পরের দুটি ম্যাচে আমরা দলে কিছু পরিবর্তন করব। কি পরিবর্তন দরকার সেটা আমরা খুঁজে বার করব। কিন্তু পরিকল্পনা হল মাঠে নামা আর ম্যাচ জেতা এবং দেশের জন্য ম্যাচ জেতার গর্ব নিয়ে আসা। আমাদের মানসিকতা বদলাবে না। আমাদের কাছে বেশ কিছু নতুন মুখ আছে আর এবং তাদের সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে হবে। কারণ বিশ্বকাপ আসছে এবং সকলেই সেই ফ্লাইটে উঠতে চায়। ছেলেরা উৎসাহিত হয়ে আছে আর সামনের দিকে তাকাতে চাইছে। মিডল অর্ডারে সামান্য সমস্যা আছে, কিন্তু আমরা সেটা ঠিক করে নেব এবং আরো শক্তিশালীভাবে ফিরে আসব”।