যে খেলাতে দল অংশ নেয় তাতে অধিনায়কের ভূমিকা যথেষ্ট বেড়ে যায়। ক্রিকেটও এমনই একটা খেলা যেখানে একজন অধিনায়ক ১০জন খেলোয়াড়কে নেতৃত্ব দেন। এই অবস্থায় অধিনায়কের দায়িত্ব যথেষ্ট বেশি বেড়ে যায় আর আত্র নেতৃত্বের প্রভাব দলের উপর পড়ে। প্রায়ই ক্রিকেটে দেখা যায় যে ভালো ফর্মে থাকা খেলোয়াড়কে দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটে টপ-৮ দলের অধিনায়কের ব্যাপারে তো আপনারা জানেনই। কিন্তু কখনও কী আপনারা ভেবেছেন সেই দলগুলির অধিনায়কত্বের বিকল্প কে হতে পারেন? তো আসুন এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানানো যাক বিশ্ব ক্রিকেটের টপ -৮ অধিনায়কের বিকল্পের ব্যাপারে যাদের বর্তমান অধিনাইয়কের পর দলের দায়িত্ব তিন ফর্ম্যাটে দেওয়া যেতে পারে।
১- শ্রেয়স আইয়ার (টিম ইন্ডিয়া)
মহেন্দ্র সিং ধোনির পর টিম দায়িত্ব বিরাট কোহলির হাতে দেওয়া হয়েছিল। কোহলিকে ২০১৪য় টেস্ট এবং ২০১৭য় সীমিত ওভারের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়েছিল। এমনিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রায়ই বিরাটের জায়গায় রোহিত শর্মাকে অধিনায়ক করার দাবী উঠতে থাকে। কিন্তু যদি আপনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের তিন ফর্ম্যাটের অধিনায়ক হিসেবে কোনো খেলোয়াড়কে ধরেন তো সবার আগে টিম ইন্ডিয়ার ৪ নম্বরের সমস্যার সমাধান করে দেওয়া শ্রেয়স আইয়ারের নাম মনে আসে। এখনো পর্যন্ত শ্রেয়স আইয়ার যতটাই ক্রিকেট খেলেছেন তা সত্যিই দুর্দান্ত ছিল।
এছাড়াও শ্রেয়স আইয়ারের আকছে অধিনায়কত্বেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে। মিডল অর্ডারের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান আইয়ারকে ২০১৮য় দিল্লি ক্যাপিটালসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আর তিনি দলকে আইপিএল ২০১৯ এ ৭ বছর পর প্লে অফের রাস্তা দেখান। এছাড়াও আইয়ারকে মুম্বাই ক্রিকেট দলেরও অধিনায়কত্ব করতে দেখা যায়। এই অবস্থায় যদি টিম ম্যানেজমেন্ট বিরাটের পর তিন ফর্ম্যাটের জন্য অধিনায়কের সন্ধান করে তো আইয়ার একজন ভালো বিকল্প প্রমানিত হতে পারেন।
১– বাবর আজম (পাকিস্তান)
সরফরাজ আহমেদকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড দুর্দান্ত ফর্মে চলা তরুণ ওপেনিং ব্যাটসম্যান বাবর আজমকে সীমিত ওভারের দায়িত্ব দিয়েছে। অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটের দায়িত্ব আজহার আলির হাতে রয়েছে। কিন্তু যদি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তিন ফর্ম্যাটের একজন অধিনায়ক হিসেবে কাউকে খোঁজে তো তাদের খোঁজ বাবর আজমের রূপেই পূর্ণ হবে। বাবর আজম বিশ্ব ক্রিকেটে কম সময়েই বড়ো নাম করেছেন। তিন ফর্ম্যাটে দুর্দান্ত ফর্মে চলা বাবর আজম খুবই শিরোনামে থাকেন। পরিসংখ্যানের কথা বলা হলে বাবর এখনো পর্যন্ত ২৬টি টেস্ট, ৭৪টি একদিনের ওয়ানডে এবং ৩৮টি টি-২০আই ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে তার ব্যাট থেকে ক্রমশ; ১৮৫০, ৩৩৫৯ এবং ১৪৭১ রান করেছেন। শুধু তাই নয় বাবর আজম দীর্ঘ সময় ধরেই টি-২০ আইতে আইসিসি র্যা ঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন।
৩—বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে জো রুট এবং সীমিত ওভারের অধিনায়ক হিসেবে ইয়োন মর্গ্যান রয়েছেন। দুই অধিনায়কই ভালোভাবে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একদিকে মর্গ্যান দলকে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। তো অন্যদিকে জো রুট অ্যাসেজ সিরিজ ২০১৯ কে ২-২ ফলাফলে ড্র করতে সফলতা হাসিল করেছেন। কিন্তু যদি ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ভবিষ্যতে অন্য অধিনায়কের সন্ধান করে তো ইংলিশ দলের তিন ফর্ম্যাটের নেতৃত্ব বেন স্টোকস করতে পারেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস নিজের দুর্দান্ত প্রদর্শনে দলকে একের পর এক জয় এনে দিয়েছেন। তবে এই কথা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে ইংলিশ বোর্ড অধিনায়কের বিকল্প হিসেবে বেন স্টোকসকেই দেখছেন। কারণ ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেট দলের সঙ্গে ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রথম টেস্টে বেন স্টোকসকেই দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে স্টোকস না শুধু টেস্ট বরং সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও দলের নেতৃত্ব সামলাতে পারেন।
৪- স্টিভ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের টেস্টের অধিনায়ক টিম পেন এবং সীমিত ওভারের দলের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের ভালো হাতে রয়েছে। কিন্তু যদি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পরবর্তী অধিনায়কের ব্যাপারে ভাবে তো তাদের কাছে স্টিভ স্মিথের রূপে একজন দুর্দান্ত বিকল্প মজুত রয়েছেন। আসলে স্মিথ অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব তিন ফর্ম্যাটে করেছেন, এই অবস্থায় যদি তাকে দ্বিতীয়বার দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয় তো তাতে দলের ফায়দা হতে পারে। যদিও ২০১৮য় হওয়া বল টয়াম্পারিংয়ের পর স্টিভ স্মিথের উপর এক বছর ব্যান করা হয়েছিল আর তার নেতৃত্বের উপরও ব্যান ঘোষিত হয়েছিল।
কিন্তু এখন তার উপর লাগা সমস্ত ব্যান সরে গিয়েছে আর সেই সঙ্গেই তিনি যখন থেকে মাঠে ফিরেছেন তার ফর্মও দুর্দান্ত থেকেছে। এই অবস্থায় স্টিভ স্মিথকে আরও একবার অস্ট্রেলিয়া তিন ফর্ম্যাটের দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারে।
৫—কুইন্টন ডি’কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি’ককও সেই খেলোয়াড়দের তালিকায় রয়েছেন যিনি কম সময়ে বড়ো বড়ো উপলব্ধি হাসিল করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড ফাফ দু’প্লেসির পর ডি’কককে সীমিত ওভারের ক্রিকেট দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়কত্ব নিযুক্ত করা হয়নি। কিন্তু যেভাবে তিন ফর্ম্যাটে দুর্দান্ত প্রদর্শন এগিয়ে চলেছে তা উল্লেখযোগ্য। ডি’ককের অধিনায়কত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা দল যতই কোনো সিরিজ জিততে না পারুক কিন্তু দল ভালো প্রদর্শন করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং ভারতের বিপক্ষে কড়া চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডের কাছে বর্তমানে তিন ফর্ম্যাটে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কোনো দ্বিতীয় বিকল্প মজুত নেই। জানিয়ে দিই যে ফাফ দু’প্লেসির অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর ডি’কককে টেস্ট অধিনায়ক করার খবর এসেছিল কিন্তু এখনো ডি’কক টেস্ট দলের অধিনায়ক হননি।
৬—রশিদ খান (আফগানিস্তান)
আফগানিস্তান ক্রিকেট দলে প্রায়ই দেখা গিয়েছে যে দলের অধিনায়ক ঘন ঘন বদল করা হয়। এই অবস্থায় খেলোয়াড়দের এবং দলকে মুশকিলে পড়তে হয়। এখন আফগানিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের প্রয়োজন যে তারা কোনো একজন খেলোয়াড়কে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অধিনায়কের পদে বহাল রাখেন যাতে দলে স্থিরতা আসে। এখন যদি তিন ফর্ম্যাটে তারা অধিনায়ক নিযুক্ত করতে চান তো তাদের কাছে বিকল্প হিসেবে তারকা স্পিনার রশিদ খান মজুত রয়েছেন। তরুণ স্পিনার রশিদ খানকে বিশ্ব ক্রিকেটে তার দুর্দান্ত স্পিন বোলিংয়ের জন্য চেনা হয়। বর্তমান সময় তিন ফর্ম্যাটের নেতৃত্ব আজগর আফগানের হাতে রয়েছে। কিন্তু যদি বোর্ড তারপর দ্বিতীয় অধিনায়কের সন্ধান করে তো তাদের খোঁজ রশিদ খানের রূপে পূর্ণ হতে পারে। বিশ্বকাপ ২০১৯ এরপর আফগানিস্তান রশিদ খানকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়ছিল, কিন্তু তারপর হঠাত করেই আজগর আফগানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে রশিদ বোর্ডের কাছে একটি ভালো অধিনায়ক।
৭—কুশল পেরেরা (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল ২০১৫র পর থেকে ভালো অধিনায়কের সন্ধান করছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের এমন অধিনায়ক পাওয়া হয়নি যিনি দলের নেতৃত্বে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দিতে পারেন আর সেই সঙ্গেই দলকে জয় এনে দিতে পারেন। বর্তমান সময়ে ওয়ানডে আর টেস্ট দলের অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গার অধিনায়কত্ব ছাড়া পর থেকে টি-২০ দলের অধিনায়কত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। এখন এই অবস্থায় যদি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বর্ড এমন একজন খেলোয়াড়ের সন্ধান করে যিনি তিন ফর্ম্যাটে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে শক্তিশালীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যদি এখন শ্রীলঙ্কা বোর্ড অধিনায়কত্বের বিকল্পের দিকে দেখে তো তাদের সন্ধান কুশল পেরেরার রূপে পূর্ণ হতে পারে। বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরার নামে টেস্ট ক্রিকেটের অসাধারণ ইনিংস খেলার রেকর্ড রয়েছে। অনেক কম মানুষই জানেন যে ২৯ বছরের কুশল গত বছর শ্রীলঙ্কার গালের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার দলকে একার দমে হারিয়ে দিয়েছিলেন।
শাই হোপ (ওয়েস্টইন্ডিজ)
ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেট দলের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান শাই হোপও সেই খেলোয়াড়দের তালিকায় শামিল রয়েছেন যাকে তার দলের অধিনায়কের সরে দাঁড়ানোর পর তিন ফর্ম্যাটের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। হোপ ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটে ওয়েস্টইন্ডিজের হয়ে দুর্দান্ত প্রদর্শন করছেন। বিশ্বকাপ ২০১৯ চলাকালীনও তার ব্যাট নিশ্চুপ ছিল না। তিনি সবচেয়ে দ্রুত ৩০০০ রান পূর্ণ করা ওয়েস্টইন্ডিজের প্রথম ব্যাটসম্যান হয়েছেন। শুধু তাই নয় শাই হোপের দুর্দান্ত ব্যাটিং কৌশলের আন্দাজ আপনারা এই বিষয়েও করতে পারেন যে তিনি গত বছরই এক দুর্দান্ত রেকর্ড নিজের নামে করেছিলেন। জানিয়ে দিই যে বর্তমান সময়ে ওয়েস্টোইন্ডিজের টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব জেসন হোল্ডার আর সীমিত ওভারের নেতৃত্ব কায়রন পোলার্ডের কাছে রয়েছে। তবে দুই অধিনায়কই ভালো প্রদর্শন করছেন, কিন্তু যদি বোর্ড ভবিষ্যতে অধিনায়ক বদলানোর ব্যাপারে ভাবে তো শাই হোপ একজন ভালো বিকল্প হতে পারেন।