ভারতীয় ক্রিকেট এক নতুন দিশা ছুঁয়েছিলো বঙ্গতনয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে।তার অধিনায়কত্বের মধ্যে দিয়ে লড়াইয়ের এক অনন্য বীজবপন হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্তরে।গোটা দেশ তাকে চেনে ” দাদা ” নামে।গোটা দেশের ক্রিকেটের আবেগ তিনি।
দেশের ক্রিকেটের বিপ্লব সাধন করেছিলেন ” প্রিন্স অফ ক্যালকাটা “, বিশ্ব ক্রিকেটের একাধিক নজিরবিহীন রেকর্ডের সাথে নাম জড়িয়ে আছে তার।পাশাপাশি দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।আজ এমনই পাঁচ বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে।
১. সমস্যা যখন সবুজে
দাদার সবুজ পিচে খেলা সমস্যা প্রসঙ্গে প্রথম বার কথা তুলেছিলেন ভারতের একসময়ের কোচ গ্রেগ চ্যাপেল।সেই সময় তিনি জানিয়েছিলেন ” সবুজ পিচ “এ খেলা থাকে এড়িয়ে যান সৌরভ।পরবর্তী সময়ে এই একই বিষয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায় তারকা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার এ্যডাম গিলক্রিস্ট এবং ম্যাথু হেডেন।২০০৪ সালে ভারত – অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সিরিজ খেলাকালীন তৃতীয় টেস্টে ” সবুজ পিচ ” দেখে খেলতে নিমরাজি হয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং হরভজন সিং।এমনটাই বলেছিলেন তারা।
ম্যাথু হেডেন তার ” স্ট্যান্ডিং মাই গ্রাউন্ড ” বইতে এবিষয় সম্পর্কে লিখেছেন, ওদের ” সবুজ পিচে “খেলতে একটা অসন্তোষের বিষয়ে আমরা লক্ষ্য করেছিলাম সেইদিন।হয়তো এইধরনের পিচে স্পিনাররা তেমন কিছু করে ওঠার সুযোগ পায়না, এছাড়া ব্যাটসম্যানদের’ও ব্যাটিং করতে সমস্যার সন্মুখীন হওয়াটাই এর প্রধান কারণ।
২. রাজকীয় চালচলণ !
প্রাক্তন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার এ্যন্ড্রু ফ্লিন্টফ তার বই ” বিইং ফ্রেডি ” তে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিপক্ষে।এই শতকের শুরুতে কাউন্টি ক্রিকেট মরশুমে ল্যাংকাশায়ারে খেলাকালীন তার দলের বাকী সতীর্থদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন দাদা, এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি।
বইতে দাদা সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিলো, সেইবার দলে রাজকীয় চলন ছিলো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের।যেনো একেবারে ” প্রিন্স চার্লস ” ।দলের বাকী ক্রিকেটারদের সাথে তার খুব একটা ভাব বিনিময় ছিলো না বলেই জানিয়েছিলেন তিনি।শুধুমাত্র তাই নয়, অন্য ক্রিকেটারদের দিয়ে নিজের ” কিটব্যাগ ” বওয়াতেন সৌরভ , এমনটাই অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।যদিও তার সাথে কখনও এমনটা হয়নি বলেই জানিয়েছেন এ্যন্ড্রু।
৩. রোষানলের মুখে দ্রাবিড়
২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে সতীর্থ রাহুল দ্রাবিড় সম্পর্কে অভিযোগ তুলেছিলেন দাদা।তার বক্তব্য ছিলো দলের মধ্যে কোথাও একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে, এবং সেই সমস্যার জন্য দায়ী গ্রেগ চ্যাপেল।তিনি যে ভুল করছেন ,তা দেখে শুনেও তার সামনে সেই কথা বলতো না দ্রাবিড়।
এছাড়াও দেশের অধিনায়কত্ব ছাড়া নিয়ে দাদার সেইদিন জানিয়েছিলেন ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের আগে অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগের মুহুর্ত গুলোতে একজন ক্রিকেটার হিসেবে যেসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে, সেটা যেকোনও অধিনায়ক’কে অধিনায়কত্ব ছেড়ে বরং খেলার দিকে বেশি নজর দিতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করবে।
পরবর্তী সময়ে দাদার মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেন দ্রাবিড়।তিনি জানিয়েছিলেন দাদার সাথে কখনও এমন বিষয়ে তার আলোচনা হয়নি।
৪. মিথ্যে চোট !
দেশের জন্যে একাধিক ম্যাচে নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছেন কাঙ্খিত জয়টা এনে দেওয়ার।এমন একজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে চোটের ভান করে ম্যাচ এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন তৎকালীন ভারত কোচ গ্রেগ চ্যাপেল।
চ্যাপেল তার ” ফিয়ার্স ফোকাস ” বইটিতে লিখেছেন , একবার একটি ম্যাচে গাঙ্গুলী ” রিটয়ার হার্ট ” দিলে তিনি তার সেই চোট পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।কিন্তু তার সেই পরামর্শ এড়িয়ে গেছেন সৌরভ।কঠিন পরিস্থিতিতে না খেলার জন্য এমনটা করেছিলেন দাদা , সেই সময় এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি।
৫. টসে অপেক্ষায় বিপক্ষের অধিনায়ক !
২০০৬ সালে একটি সাক্ষাৎকারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ ওয়া’কে তার ঔদ্ধত্যের জন্য উচিত শিক্ষা দিতে ২০০১ সালে টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন দেড়িতে এসেছিলেন টস করতে।
এবিষয়ে পরবর্তী সময়ে নিজের বই ” আউট অফ মাই কমফোর্ট জোন ” এ স্টিভ ওয়া লিখেছিলেন, সেইবার সিরিজে মোট সাতবার তার সাথে এমনটা করেছিলেন সৌরভ।
পরবর্তী সময়ে ঠিক একই রকম ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল প্রাক্তন তারকা অজি স্পিনার শেন ওয়ার্নকে।২০০৮ সালে আইপিএলে ‘ কলকাতা বনাম রাজস্থানের ম্যাচ চলাকালীন এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।ওয়ার্ন তখন রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক।ম্যাচ শেষ তার কথায় বিরক্তির ছাপ ছিলো স্পষ্ট।দলের ব্যাটিং এবং বোলিং, দুই ক্ষেত্রেই ইনিংস শুরুর হওয়াকালীন অনেকটা সময় তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদের দলকে, বিষয়টি একেবারেই ভালো ভাবে নেননি ওয়ার্ন।