এবারের আইপিএল-এ আমরা একাধিক ক্রিকেটের দুর্দান্ত উত্তরণ দেখেছি। আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফ থেকে এরকম একাধিক অনামী খেলোয়াড় রয়েছেন যারা দিনের পর দিন ভালো পারফর্ম করেই চলেছে। অথচ সেই পারফর্মেন্স অনুযায়ী তাদের বেতন ও আর্থিক মূল্য অনেকটাই কম। তাই চলুন, দেখে নেওয়া যাক আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফ থেকে এমন এক একটি খেলোয়াড়কে, যারা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী পাচ্ছন না আর্থিক মূল্য।
১. মুম্বই ইন্ডিয়ান্স – সূর্যকুমার যাদব (৩.৯ কোটি টাকা)
এই মুহুর্তে লিগ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আর এই তারকাখচিত দলের টপ অর্ডারে নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন মুম্বইয়ের রঞ্জি দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। কলকাতা নাইট রাইডার্স থেকে এসে নিজের প্রকৃত ফর্ম দেখিয়েছেন নীল জার্সি পড়ে। তিন বছরে দুবার জিতেছেন আইপিএল-এর খেতাব। গত তিন মরশুমে ১০০০ এর বেশি রান করেছেন সূর্য। পাশাপাশি দুরন্ত ফিল্ডার হিসেবেও পরিচিত তিনি। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও তার আর্থিক বেতন মাত্র ৩.৯ কোটি টাকা, যা তার যোগ্যতা অনুযায়ী অনেক কম।
২. চেন্নাই সুপার কিংস – দীপক চাহার (৮০ লক্ষ টাকা)
গত দুই মরশুমে নতুন বলে চেন্নাই সুপার কিংসের ভরসা হয়ে উঠেছেন সুইং বোলার দীপক চাহার। পাওয়ার প্লেতে উইকেট তুলে নেওয়ার সক্ষমতা রাখেন, পাশাপাশি গত মরশুম থেকে ডেথ ওভারেও বেশ প্রতিভা দেখিয়েছেন দীপক। কিন্তু দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেও দীপক চাহারকে মাত্র ৮০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়, যা সিএসকে-এর প্রথম একাদশে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে সবথেকে কম।
৩. সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ – কেন উইলিয়ামসন (৩ কোটি টাকা)
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের দুর্বল মিডল অর্ডারকে ধরে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কেন উইলিয়ামসন। যদিও এই হায়দ্রাবাদ দলের বিদেশী স্কোয়াড শক্তিশালী বলে নিয়মিত সুযোগ পান না নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক, কিন্তু ২০১৮ এর আইপিএল-এ ডেভিড ওয়ার্নারের অনুপস্থিতিতে হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক ছিলেন উইলিয়ামসন, এবং সেই বছর ৭০০ এর বেশি রান করে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এমন দুর্ধর্ষ একজন ক্রিকেটারের বেতন মাত্র ৩ কোটি টাকা, যা অনেকটাই কম।
৪. দিল্লি ক্যাপিটালস – কাগিসো রাবাডা (৪.২ কোটি টাকা)
এই বছর দিল্লি ক্যাপিটালসের বোলিং বিভাগকে কার্যত নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা পেসার কাগিসো রাবাডা। বর্তমানে তিনি এই বছরের আইপিএল এর সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অত্যন্ত সুপরিচিত নাম রাবাডা। নিজের দুর্ধর্ষ গতি এবং লাইন ও লেংথের দারুণ মিশেলে অসাধারণ ভূমিকা নেন রাবাডা। তবে তার যোগ্যতা অনুযায়ী আর্থিক মূল্য অনেকটাই কম, মাত্র চার কোটি ২০ লক্ষ টাকা পান তিনি।
৫. রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর – দেবদত্ত পাডিক্কাল (২০ লক্ষ টাকা)
গত বছরের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক দেবদত্ত পাডিক্কাল এই বছরের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সদস্য হবেন, তা ধরেই নিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এবং সেই মতই দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছেন কর্নাটকের এই তরুণ ওপেনার। ইতিমধ্যেই আরসিবির হয়ে তিনটি অর্ধশতরানের ইনিংস খেলেছেন ওপেনিংয়ে। তবে তার আর্থিক মূল্য মাত্র ২০ লক্ষ টাকা। এত কম অর্থে এমন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের থাকাটা অন্যায়ের। ফলে যদি পরবর্তী নিলামে পাডিক্কাল আসেন, তাহলে তাকে আরও বেশি টাকায় দলে নিয়ে আসা উচিত ব্যাঙ্গালোরের।
৬. কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব – মায়াঙ্ক আগরওয়াল (১ কোটি টাকা)
এই বছর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব লিগ তালিকার তলানিতে থাকলেও ব্যাটিংয়ে ফুল ফোটাচ্ছেন ভারতীয় টেস্ট দলের ওপেনার মায়াঙ্ক আগরওয়াল। সংযমী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নির্ভয়ে বড় শট মারতে সক্ষম আগরওয়াল। এই বছর আইপিএল এর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের লড়াইয়ে রয়েছেন মায়াঙ্ক। কিন্তু তার আর্থিক মূল্য অনেকটাই কম, মাত্র এক কোটি টাকা। জাতীয় দলের নিয়মিত এক ক্রিকেটারের এরকম বেতন থাকা কখনই ঠিক নয়।
৭. কলকাতা নাইট রাইডার্স – শুভমন গিল (১.৮ কোটি টাকা)
এবারের আইপিএল-এ ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন তরুণ ব্যাটসম্যান শুভমন গিল। গত কয়েক বছর মিডল অর্ডারে নেমে সেরকম সুবিধা না করলেও এই বছর প্রচুর রান করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএল-এ। অনেকেই জাতীয় দলের ভবিষ্যতের সম্পদ হিসেবে ধরছেন শুভমনকে। এমন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের পক্ষে ১.৮ কোটি টাকা বেতন অনেকটাই কম। যেখানে তিনি ম্যাচের পর ম্যাচ নাইটদের ভালো শুরু দিচ্ছেন, সেখানে এই মূল্য তার প্রতিভাকে জাস্টিফাই করে না।
৮. রাজস্থান রয়্যালস – শ্রেয়স গোপাল (২০ লক্ষ টাকা)
রাজস্থান রয়্যালসের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে দিনের পর দিন নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন লেগস্পিনার শ্রেয়স গোপাল। হারের ধারা বজায় থাকলেও রাজস্থানের বোলিংয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ভালো বোলিং করে চলেছেন এই অভিজ্ঞ টি২০ স্পেশালিস্ট। গত বছরের আইপিএল-এ তিনি ২০টি উইকেট নিয়েছিলেন, আর এই বছরেও প্রয়োজনীয় সময়ে উইকেট তুলে নিচ্ছেন তিনি। যদিও তার আর্থিক মূল্য অনেকটাই কম, মাত্র ২০ লক্ষ টাকা।