প্রত্যেক ক্রিকেটারের কাছেই নিজের কেরিয়ারকে বিদায় জানানোর মূহুর্ত ভীষণই আবেগী হয়। কারণ একজন খেলোয়াড় যিনি অনেক বছর ধরে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার পর তার সঙ্গে ত্যাগ করার দুঃখ এত সহজে ভুলতে পারেন না। কিন্তু যখন ব্যাপারটা এমন হয় যে, যে খেলোয়াড় নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার যে মাঠ থেকে শুরু করেছিলেন তিনি সেখানেই তার কেরিয়ার শেষ করার সুযোগ পান, তখন তা সেই খেলোয়াড়ের কেরিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর মূহুর্ত হয়ে ওঠে।
এই তারকারা নিজেরদের প্রথম এবং শেষ ম্যাচ একই মাঠে খেলেন
বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ কিছু এমন ক্রিকেটার রয়েছেন যারা নিজের দেশের হয়ে ১৫ বছরেরও বেশ সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আর তাদের জন্য নিজের কেরিয়ার যে মাঠে শুরু হয়েছিল সেই মাঠেই যদি শেষ হয় তাহলে তা তাদের কেরিয়ারের সবচেয়ে বিশেষ মুহুর্ত হয়ে ওঠে। আজ এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের সেই চার মহান ক্রিকেটারের ব্যাপার জানাতে চলেছি যারা যে মাঠে নিজেদের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সেই মাঠেই শেষ করেন।
রিকি পন্টিং (পার্থ)
অস্ট্রেলিয়ার মহান ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিংয়ের তুলনা বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তী ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে করা হয়। রিকি পন্টিং নিজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ১৬৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন যাতে তিনি ৫১.৮৫ গড়ে ৪১টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ১৩৩৭৮ রান করেন। রিকিং পন্টিং ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ মাঠে নিজের টেস্ট কেরিয়ারের শুরুয়াত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করেছিলেন। সেই ম্যাচে ৯৬ রান করেছিলেন পন্টিং। এরপরে ১৬ বছরের কেরিয়ারের চলার পর পন্টিং এই পার্থের মাঠেই ২০১২য় দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে নিজের কেরিয়ার শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের শেষ টেস্টে পন্টিং দুই ইনিংসে চার এবং আট রানই করতে পেরেছিলেন।
জ্যাক কালিস (ডারবান)
দক্ষিন আফ্রিকার অলরাউন্ডার ক্রিকেটার জ্যাক কালিসকে তার সময়ের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় হিসেবে মনে করা হত। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারদের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন কালিস। নিজের সম্পুর্ণ কেরিয়ারে মোট ১৬৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন কালিস। আর এত সংখ্যক টেস্টে তিনি ৫৫.৩৭ গড়ে ৪৫টি সেঞ্চুরির সাহায্যে মোট ১৩২৮৯ রান করেছেন। কালিস নিজের কেরিয়ারের শুরুয়াত করেন ১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডারবানের কিংসমিড মাঠে। নিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংস খালি মাত্র ১ রানই করতে পেরেছিলেন। জ্যাক কালিস ২০১৩য় ভারতের বিরুদ্ধে এই মাঠেই নিজের দুরন্ত কেরিয়ারকে বিদায় জানিয়েছিলেন। ওই ম্যাচে মাত্র ৩ রানই করতে পেরেছিলেন কালিস।
গ্রেম স্মিথ (ডারবান)
দক্ষিন আফ্রিকান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক এবং তারকা ব্যাটসম্যান থাকা গ্রেম স্মিথ নিজের কেরিয়ারে বেশ কিছু বড় সাফল্যে হাসিল করেছেন। গ্রেম স্মিথ নিজের কেরিয়ারের শুরুয়াত করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০০২ সালে নিউল্যান্ডস মাঠে। এই ম্যাচে স্মিথ প্রথম ইনিংসে ৩ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর স্মিথ মোট ১১৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৪৭. ৭৬ গড়ে ২৭টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ৯২৬৫ রান করেন। ২০১৪য় স্মিথ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই মাঠেই নিজের কেরিয়ারকে বিদায় জানান। এই ম্যাচে স্মিথ দুই ইনিংসে মোট ৫ আর ৩ রানই করতে পেরেছিলেন।
শেন ওয়ার্ন (সিডনি)
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মহান বোলার থাকা অস্ট্রেলিয়ার তারকা স্পিন বোলার শেন ওয়ার্নের বোলিংয়ের সামনে ব্যাটসম্যানদের নাচতে দেখা যেত। কিংবদন্তী লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন নিজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার ১৯৯২ সালে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতের বিরুদ্ধে করেছিলেন। এই প্রথম ম্যাচে মাত্র একটিই উইকেট নিতে পেরেছিলেন ওয়ার্ন। এরপর তো ওয়ার্ণের কেরিয়ারের সাক্ষী থেকেছে সমস্ত ক্রিকেট জগত, যিনি নিজের কেরিয়ার ১৪৫টি টেস্ট ম্যাচে ২৫.৪২ গড়ে ৭০৮টি উইকেট নিজের নামে করেছেন। নিজের দুর্দান্ত কেরিয়ারের শেষে ওয়ার্ন ২০০৭ এ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন। ওয়ার্ন নিজের শেষ টেস্টের দুই ইনিংসের মাত্র ১-১টি করে উইকেট নিয়েছিলেন।