অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর থেকেই ভারতের জার্সি থেকে মুছে যেতে পারে স্টারের নাম। কারণ স্টার কত্তৃপক্ষ আর চাইছেন না ভারতীয় ক্রিকেট দলকে স্পনসর করতে।এমনটাই জানালেন স্টার ইন্ডিয়া নেটওয়ার্কের সিইও উদয় শঙ্কর।
আইপিএল ২০১৭: বোলিং বিভাগকে মজবুত করতে মিলস-নেগিদের নিল আরসিবি
কেন এই ছন্দপতন? জানা গিয়েছে বিসিসিআই ও আইসিসি-এর মধ্যে চলতে থাকা বিবাদের জেরেই ভারতকে আর স্পনসর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্টার ইন্ডিয়া। এবিষয়ে স্টার ইন্ডিয়ার সিইও উদয় শঙ্কর বিসিসিআইয়ের নাম না করে বলেন, ‘আসিসি ও বিশ্বের একটি শক্তিশালী ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে টানাপোড়েন আসলে বিশ্ব ক্রিকেটের দুর্যোগময় সময়।’ বেশ কয়েকদিন ধরেই আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে অশান্তি চলছে। কারণ, আইসিসি চায় রাজস্ব মডেল থেকে ‘বিগ ত্রি’ প্রক্রিয়াকে লুপ্ত করতে। ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে এই মডেলের মধ্যে। আর এতেই বেজায় চটেছে বিসিসিআই। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসির এই নিয়ম বলবৎ হলে, বিসিসিআইয়ের প্রাপ্ত রাজস্বে বেশ অনেকটাই ঘাটতি আসতে চলেছে। সেটাই মেনে নিতে পারছে না বিসিসিআই। কারণ, বিশ্বের ক্রিকেটে ভারতীয় দর্শক ও অনুরাগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে আইসিসির প্রাপ্ত রাজস্বের বেশিরভাগটাই আসে ভারতের জন্য। তাই আইসিসির মোট প্রাপ্ত রাজস্বের মূল অংশটাই বিসিসিআইয়ের প্রাপ্য। মূলত যে দেশর জন্য বেশী রাজস্ব আদায় হয় তাদের কথা মাথায় রেখেই রাজস্ব বিতরনের জন্য ‘বিগ ত্রি’ প্রথা চালু ছিল। কিন্তু এই প্রথার অন্য দুই অংশীদার ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া এক্ষেত্রে আইসিসির পক্ষ নিয়েছে। তবুও বিসিসিআই প্রতিবাদের সুর নরম করেনি। এই ডামাডোলের ফলে হয়ত এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে নাও দেখা যেতে পারে। যা ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যাবে।
ক্রিকেটের ইতিহাসে এই বিপর্জয়ের অনুমান করেছেন স্টার সিইও। তিনি বলেন, ‘ যদি ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে একটি খারাপ ঘটনা হয়ে থেকে যাবে।কিন্তু ভারত নিয়ামক সংস্থার বিরুদ্ধে সুর না চড়ালে তা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য দুর্যোগময় হবে।’ বিশ্ব ক্রিকেটের রাজস্বে ভারতের অবদান বেশি একথা মেনে নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতীয় অনুরাগীদের সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই আইসিসির অধিক রাজস্ব আসে ভারতের জন্যই। কাজেই প্রধাণ এই নিয়ামক সংস্থায় বিসিসিআইয়ের কথার দাম থাকা উচিৎ। ভারতে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা লাভ না করলে বিশ্ব মানচিত্রে ক্রিকেটের এই সাফল্য্ আসত না।’
এদিকে, এমাসের প্রথমদিকে ভারতীয় ক্রিকেটের জার্সি স্পনসরশিপের জন্য বিসিসিআই টেন্ডার ডেকেছে। কারণ, বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি শেষ হলেই স্টারের স্পনসরশিপের চুক্তি সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু স্টার সিইও জানান, এই টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেনা স্টার। কেন এই সিদ্ধান্ত? শঙ্কর বলেন, ‘এই ধরনের অনিশ্চয়তার জন্য ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। ক্রিকেটকে আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করার আলোচনা করোর মধ্যে দেখিনা।আমরা খুব খুশি যে এতদিন ভারতীয় দলের জার্সি স্টারের প্রতীক ভন করেছে। কিন্তু আইসিসির সঙ্গে বিসিসিআইয়ের টানাপোড়েনের জেরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে স্টার পড়তে চায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্রিকেটের এই রাজনীতির মধ্যে পড়তে চাই না। এতদিন আমরা ক্রিকেটে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছি, যা অনেক মিডিয়া করেনি। ব্যবসা সংক্রান্ত ঝঁউকি অনেক বেশি হলেও আমরা প্রায় কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি ক্রিকেটে।’ উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে স্টার ভারতীয় ক্রিকেটে বিনিয়োগ করে আসছে।এর আগে সুব্রত রায়ের ‘সাহারা’ ১২ বছর ধরে স্পনসর করছিল।স্টারের এই সিদ্ধান্তে ভারতীয় ক্রিকেটে এক দুঃসময় ধেয়ে এল।