আইপিএল সারা ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-২০ লীগ। ২০০৮ এ প্রথম মরশুমেই রাজস্থান রয়্যালসকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন কিংবদন্তী লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের খেতাব জেতে রাজস্থান। আর এই অভিযানে তাকে সামলাতে হয়েছিল অনেক কিছু। তার মধ্যে মোহাম্মদ কাইফের ‘ইগো’ সামলেছিলেন কীভাবে? মুনাফ পটেলের বয়স জানতে গিয়ে তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল? রবীন্দ্র জাদেজাকে কীভাবে শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলেছিলেন? রাজস্থান রয়্যালসের সাবেক অধিনায়ক ও মেন্টর শেন ওয়ার্ন এ সবেরই মজাদার বর্ণনা দিয়েছেন তার নতুন বইতে।
মহম্মদ কাইফের ইগো সামলেছিলেন এভাবে

ওয়ার্ন তার নতুন বই নো স্পিনে লিখেছেন,
‘‘হোটেলে চেক-ইন করার সময় দলের ছেলেরা প্রত্যেকে যে যার ঘরের চাবি নিয়ে চলে যায়। কয়েক মিনিট পরে দেখি রিসেপশনে এসে মোহাম্মদ কাইফ বলছে, আমি কাইফ। রিসেপশনিস্ট বললেন, হ্যাঁ, আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি, বলুন? কিন্তু ও সেই একই কথা বলে চলল, আমি কাইফ। তখন আমি নিজেই ওর কাছে গিয়ে বললাম, সব ঠিক আছে তো বন্ধু? তখনও বলল, হ্যাঁ, আমি কাইফ।’’
কিছুক্ষণ এ রকম চলার পরে ওয়ার্ন বললেন, ‘‘আমি জানি, ওরাও জানে তুমি কাইফ। কী বলতে চাইছ, বলো।’’ ওয়ার্নের বয়ান অনুযায়ী, এর পর কাইফ বলেন, ‘‘সবার মতো আমাকেও ছোট ঘর দেয়া হয়েছে।’’ ওয়ার্ন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি কি আরো ভাল কিছু চাও?’’ তখন তিনি আবার বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি কাইফ।’’
ভারতীয় দলের সিনিয়ররা চায় বেশি সুবিধা

এরপরই শেন ওয়ার্ন লিখেছেন, ‘‘তখন আমি বুঝলাম ও বলতে চায়, ও একজন সিনিয়র, ভারতীয় দলে খেলা ক্রিকেটার, তাই ওকে ব়ড় ঘর দেয়া উচিত।’’ এই ঘটনাকে টেনে বইয়ে ওয়ার্ন লিখেছেন, ‘‘তখনই বুঝি যে, ভারতের সিনিয়র ক্রিকেটাররা চায় তাদের বেশি সুবিধা দেয়া হোক আর তরুণরা যেন তাদের ব্যাগ বইবার জন্য দলে থাকে।’’ ওয়ার্নের মন্তব্য, ‘‘সে দিনই উপলব্ধি করেছিলাম, দলের প্রত্যেকের জন্য একই নিয়ম চালু করতে হবে।’’
মুনাফ প্যাটেলের বয়েস জানার অভিজ্ঞতা
অন্যদিকে ভারতীয় দলের প্রাক্তন জোরে বোলার মুনাফ পটেলের বয়স জানারও অভিজ্ঞতা নিজের বইয়ে লিখেছেন প্রথম আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক। তিনি লিখেছেন বয়স জানতে চাওয়ায় মুনাফ ওয়ার্নকে উত্তর দেন, ‘‘তুমি কি আসল বয়স জানতে চাইছ? না আইপিএলের বয়স? যেটা অন্যরা জানতে চাও।’’
ওয়ার্ন মুনাফকে জানান, ‘‘আমি তোমার কাছে জানতে চাইছি তোমার সঠিক বয়স কত।’’ মুনাফের উত্তরটা শুনে ওয়ার্ন বেশ অবাকই হয়ে যান। মুনাফ বলেন,
‘‘আমি ২৪। তবে যদি ৩৪-ও হত, তাও ২৪-ই বলতাম। কারণ, ৩৪ বললে কেউ দলে নিত না। ২৮ বললে ভাবত, আর কয় বছরই বা খেলার বাকি আছে ওর। আমি তাই ২০-র ঘরেই থাকতে চাই দীর্ঘদিন।’’
শৃঙ্খলাবোধ ছিল না রবীন্দ্র জাদেজার
ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাকে দেখে প্রথমে দারুণ ক্রিকেটার মনে হলেও গুজরাটি অলরাউন্ডারের শৃঙ্খলাবোধ মোটেই পছন্দ হয়নি কিংবদন্তী অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের। তিনি তার বইতে জাদেজা সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘তরুণ ক্রিকেটাররা এই দোষেই ভুল পথে চলে যায়। জাদেজা সব সময় দেরি করে আসত।’’ অনুশীলনে যাওয়ার বাস ধরতে জাদেজার দুই দিন দেরি হওয়ার পরে এক দিন ফেরার পথে মাঝ রাস্তায় তাকে নামিয়ে দিয়ে ওয়ার্ন তাকে বলেন, ‘‘তুমি বাকি রাস্তা হেঁটে ফেরো।’’ তার পর থেকে জাদেজা আর কখনও দেরি করেননি বলে দাবি ওয়ার্নের। কোনো সন্দেহ নেই, অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি লেগস্পিনারের নতুন বই ভারতীয় ক্রিকেট মহলে বিতর্কের ঝড় তুলতে চলেছে।