সেলিব্রিটি হলে এটাই হয়। কখন কোথায় কি বলতে হয়, দিকবিদিক জ্ঞান থাকে না। কিন্তু, থাকাটা তো স্বাভাবিক। বলা ভালো, আয়ত্ত করে নেওয়া উচিত। কারণ, সিনেমায় পর্দায় আমরা যাঁদের দেখি, তারাই তো আমাদের সবচেয়ে কাছের। আমরা তো তাঁদের দেখেই শিখি। তাঁদের মতোই আচরণ করি।
মনে আছে, লর্ডসের সেই ফাইনাল? মনে আছে, সৌরভ গাঙ্গুলিকে? আর সেই খালি গায়ে ছবিটা। যা নিয়ে, লোকজন অনেক কথা বলেছিলেন। আবার বেশিরভাগ লোকজন বলেছিলেন, হ্য়াঁ, যা করেছে ঠিক করেছে। ওটাই দরকার ছিল। ঠিক ধরেছেন, ন্য়াটওয়েস্ট ট্রফির সেই ফাইনাল ম্য়াচটার কথা বলছি। অ্য়ান্ড্রু ফ্লিন্টফ ভারতে এসে ভারতকে হারানোর পর জামা খুলে মাথার ওপর তুলে বনবন করে ঘুরিয়ে গিয়েছিলেন। সেই জ্বালাটা বহুদিন ধরে ভেতরে ছিল সব ভারতবাসীর। তাই মহম্মদ কাইফ যখন ফাইনাল ম্য়াচ জিতিয়ে প্য়াভিলিয়নে ফিরছেন, ভারতবাসীর সেই জ্বালা মেটাতে সৌরভ নিজের জার্সিটা খুলে ফেলে মাথার ওপর বনবন করে ঘোরালেন। গোটা বিশ্বের সামনে তখন টেলিভিশন ক্য়ামেরার কল্য়াণে পৌঁছে গিয়েছে দাদার লোমশ আদুল গায়ের ছবিটা।
২০০২ আর এটা ২০১৭। ১৫ বছর পর সেই লর্ডস আর আর ভারতীয় ক্রিকেট। মহিলাদের বিশ্বকাপ চলছে। ভারত আর ইংল্য়ান্ডের মধ্য়ে। কল্পনার ভাবরাজ্য়ে একবার যান আর ভাবুন ভারত ম্য়াচ জিতেছে। তারপর ভারত অধিনায়িকা তাঁর পরনের ইন্ডিয়া লেখা জার্সিটা খুলে মাথার ওপর তুলে বনবন করে ঘোরাচ্ছেন। টেলিভিশন ক্য়ামেরায় তখন অন্তর্বাস পরিহিতা ভারত অধিনায়িকা। ভাবনাটা কিছু মানুষের কাছে মুচকি হাসির খোরাকের হলেও বিকৃত মানসিকতার লক্ষণ। আর ঠিক এই কারণেই রবিবার ভারত-ইংল্য়ান্ড যখন ফাইনাল ম্য়াচে ব্য়স্ত, নেটিজেনরা তখন চূড়ান্ত ক্ষেপে একহাত নিচ্ছেন প্রবীন অভিনেতা ঋষি কাপুরকে। এত বয়স হয়ে গিয়েছে, তার এমন আলটপকা মন্তব্য়!
কি হয়েছিল, কাল রাতে?
লর্ডসে তখন মিতালিরা লড়ছেন। সারা দেশ তাঁদের জয় কামনা করছে। প্রার্থনা করছে, দাদার ভারত ২০০৩-এর বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতে ফিরেছিল, সেভাবে যেন মিতালির ভারতকে ফিরতে না হয়। আর তখনই চরম অশালীন ইঙ্গিত ঋষির। ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালের দিনের সৌরভের খালি গায়ে জার্সি ঘোরানো সেই ছবি দিয়ে ট্য়ুইট করে বসলেন। “ন্য়াটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালের সময় লন্ডনে লর্ডসের ব্য়ালকানিতে সৌরভ যা করেছিল, সেইটা দেখার জন্য় অধীর অপেক্ষায় আছি।”
Waiting for a repeat of Sourav Ganguly's act on the balcony of The Lords Ground,London,when India beat England 2002 NatWest series final! YO pic.twitter.com/z1XAde3JLb
— Rishi Kapoor (@chintskap) July 23, 2017
ট্য়ুইট পড়েই বোঝা যাচ্ছে, শালীনতার বিন্দুমাত্র ধার ধারেননি ঋষি কাপুর। কোনও সুস্থ মনষ্ক মানুষ এধরণের কথা বলতে গিয়ে একশোবার ভাববেন। ছবি দিয়ে ট্য়ুইট করায় ইঙ্গিতটা আরও পরিষ্কার। ভারতের জয় চাওয়াটা স্বাভাবিক। দেশভক্তি দেখাতে, অন্য় ধরণের ছবি দিয়েও ট্য়ুইট করা যেত। সেই কারণেই ট্য়ুইটারেই নেটিজেনরা চেপে ধরলেন ঋষিকে। অনেকে লিখেও বসেন, “ইদানিং উল্টোপাল্টা কথা বলা অভ্য়াস হয়ে গিয়েছে ঋষির। এই অসুখটা যেন তাড়াতাড়ি সারিয়ে ওঠেন উনি।” মহিলারা বলেও বসেন, অত্য়ন্ত অসভ্য় আচরণ। ঋষি কাপুরের এই ধরনের মন্তব্য় যৌন হেনস্থার সামিল।
ট্য়ুইটারে রোষ ঝরে পড়ছে দেখে ঋষি কাপুর ক্ষমা চাওয়ার বদলে পাল্টা ট্য়ুইট করেন, “আমি ভুলটা কি বলেছি? আমি কোনও মহিলা ক্রিকেটারকে ওটা করতে বলিনি। আমি বলেছি. সৌরভ যা করেছিল, সেটাই হোক। তোমরা ভুল ভাবছ।” পরবর্তী ট্য়ুইটে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে, সেই যৌনতা ভরা ইঙ্গিত। মিতালি রাজের নাম না লিখেও, তাঁকে অন্তর্বাসে দেখার অভীপ্সা।