আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপের শেডিউল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ২০২০র পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ ১৮ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে খেলা হবে। এই বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা হবে। পুরুষ বিশ্বকাপে মোট ১৬টি দল অংশ নেবে। যারমধ্যে মোট ৪৫টি ম্যাচ খেলা হবে। ৮টি দলের মধ্যে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলা হবে যার মধ্যে থেকে ৪টি দল সুপার ১২য় নিজেদের জায়গা করে নেবে। আজ আমরা আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদনে সেই ১১জন খেলোয়াড়ের নাম জানাতে চলেছি, যাদের হয়ত এই টি-২০ বিশ্বকাপে দলে সুযোগ দেওয়া হবে না।
শিখর ধবন
ভারতের ওপেনিং ব্যাটসম্যান কেএল রাহুলের টি-২০ ফর্ম ভীষণই ভালো রয়েছে। তিনি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা হওয়া ট-২০ সিরিজে ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হয়েছিলেন। এই অবস্থায় তারই রোহিতের সঙ্গে টি-২০ বিশ্বকাপে ওপেনিং করা প্রায় নিশ্চিত। যদি ভারতের হয়ে কেএল রাহুল আর রোহিত শর্মা টি-২০ বিশ্বকাপে ওপেনিং করেন তো নিশ্চিতই শিখর ধবনকে টি-২০ বিশ্বকাপে নির্বাচিত নাও করা হতে পারে। আসলে শিখর ধবনের মতো ব্যাটসম্যানকে প্রথম একাদশের বাইরে রাখা মুশকিল হবে। এই কারণে তাকে টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে নির্বাচকরা বাইরেও রাখতে পারেন।
ক্রিস গেইল
ক্রিস গেইল অফিসিয়ালি নিজের অবসর ঘোষণা করেননি। তবে ওয়েস্টইন্ডিজের নির্বাচকরা তাকে টি-২০ বিশ্বকাপে জায়গা দেওয়ার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা করছেন না। সম্ভবত এই কারণে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ওয়েস্টইন্ডিজের টি-২০ দল থেকে বাইরে রয়েছেন। ক্রিস গেইল টি-২০ ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। তা সত্ত্বেও তার ওয়েস্টইন্ডিজের টি-২০ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাকা নয়। ক্রিস গেইলকে টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানদের একজন মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে টি-২০ ক্রিকেটে তার নামে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড রয়েছে।
ফাফ দু’প্লেসি
ভারত সফরের টি-২০ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকরা ফাফ দু’প্লেসিকে দলে জায়গা দেননি। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে ফাফ দু’প্লেসি বিশেষ কিছুই করতে পারেননি। এই অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকরা এই তারকা খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপে দল থেকে বাইরেও রাখতে পারেন। ফাফ দু’প্লেসি গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ফর্ম্যাটেই অধিনায়কত্ব করছিলেন। কিন্তু কিছু মাস আগেই তিনি নিজের অধিনায়কত্ব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছিলেন।
শোয়েব মালিক
শোয়েব মালিকের পাকিস্তান সুপার লীগ খুব ভালো যায়নি। অন্যদিকে পাকিস্তানের নতুন কোচ আর নির্বাচক প্রধান মিসবাহ উল হক তরুণ খেলোয়াড়দের উপর নিজের ভরসা দেখাচ্ছেন। এই অবস্থায় শোয়েব মালিকেরও টি-২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়া মুশকিল মনে হচ্ছে। শোয়েব মালিল পাকিস্তান দলের হয়ে মোট ২৮৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তিনি ৩৪.৫ গড়ে ৭৫৩৪ রান করেছেন। তিনি ৯টি সেঞ্চুরি আর ৪৪টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। টি-২০ কেরিয়ারের ১১৩টি ম্যাচে তিনি ৩১.৪ গড়ে মোট ২৩২১ রান করেছেন। শোয়েব মালিক ওভারঅল টি-২০ ক্রিকেটে ৯০০০ এর বেশি রান করা খেলোয়াড়ও।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ
শ্রীলঙ্কার নির্বাচকদের ব্যবহার গত কিছু বছর ধরে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের সঙ্গে খুব ভালো ছিল না। এই অবস্থায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজেরও শ্রীলঙ্কার টি-২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়া মুশকিল দেখাচ্ছে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ শ্রীলঙ্কা দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। কিন্তু এই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে গত ৩-৪ বছরে বেশ কয়েকবার শ্রীলঙ্কান নির্বাচকরা উপেক্ষা করেছেন।
মহেন্দ্র সিং ধোনি
মহেন্দ্র সিং ধোনি বিশ্বকাপ ২০১৯ এর পর থেকে প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেট খেলেননি। ভারতীয় দলের নির্বাচকরা নিয়মিত তাকে উপেক্ষা করছেন। এই অবস্থায় তার টি-২০ বিশ্বকাপে খেলার চান্স ভীষণই কম। মহেন্দ্র সিং ধোনির বয়স ৩৯ বছরের কাছাকাছি হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় তিনি দ্রুতই নিজের অবসরের ঘোষণা করতে পারেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৪ এ ডেবিউ করেছিলেন। তিনি ভারতের হয়ে টেস্টে ৯০টি ম্যাচ, ওয়ানডেতে ৩৫০টি ম্যাচ এবং টি-২০তে ৯৮টি ম্যাচ খেলেছেন। ধোনি ৯০টি টেস্টে ম্যাচে ৩৮.০৯ গড়ে ৪৮৭৬ রান করেছেন। অন্যদিকে ৩৫০টি ওয়ানডেতে ৫০.৬ গড়ে ১০৭৭৩ রান করেছেন। অন্যদিকে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনি ৩৭.৬০ গড়ে ১৬১৭ রান করেছেন।
মঈন আলি
মঈন আলির সঙ্গে ইংল্যান্ড দলের টিম ম্যানেজমেন্টের কিছু সময় ধরে ভালো সমর্থন নেই। বিশ্বকাপ ২০১৯এ তাকে বেশকিছু ম্যাচে প্রথম একাদশে জায়গা দেওয়া হয়নি। এখন টি-২০ বিশ্বকাপেও মঈনকে দলের বাইরে রাখা হতে পারে। মঈন আলি একজন অলরাউন্ডার আর তিন বিভাগেই দলের হয়ে প্রদর্শন করেন। তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে এখনো পর্যন্ত ৬০টি টেস্ট ম্যাচ এবং ১০১টি ওয়ানডে ম্যাচও খেলেছেন।
লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট
লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট গত ২-৩ বছর ধরে ইংল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন আর ইংল্যান্ড দলকে বেশকিছু ম্যাচ জিতিয়েছেন। আজ যদি ইংল্যান্ড ওয়ানডে ক্রিকেটে এক নম্বরে রয়েছে তো তাতে লিয়াম প্ল্যাঙ্কেটেরও বড়ো হাত রয়েছে। তিনি বল হাতে তো কামাল করেইছেন সেই সঙ্গে দরকার পড়লে ব্যাট হাতেও দলের হয়ে যোগদান দিয়েছেন। তবে ক্রিস ওকস আর জোফ্রা আর্চারের মতো বোলারের দলে হওয়ার কারণেই এই বোলারকে বিশ্বকাপ ২০১৯ এর দলে প্রথম একাদশে বেশি সুযোগ দেওয়া হয়নি। এখন তাকে বিশ্বকাপ ২০২০ দল থেকেও বাদ দেওয়া হতে পারে।
ডেল স্টেইন
ডেল স্টেইন অফিসিয়ালি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করে দিয়েছেন। তিনি এখনো টি-২০ ক্রিকেট খেলতে চান, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকরা তাকে দলে নির্বাচিত করছেন না। এই অবস্থায় তারও টি-২০ বিশ্বকাপ খেলা মুশকিল মনে হচ্ছে। ডেল স্টেইন এখনো পর্যন্ত নিজের দেশের হয়ে ৯৩টি টেস্ট ম্যাচ, ১২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ এবং ৪৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৬টি উইকেট তিনি ওয়ানডেতে, টেস্টে ৪৩৯টি উইকেট এবং টি-২০ ক্রিকেটে ৬১টি উইকেট নিয়েছেন। তাকে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ জোরে বোলারদের মধ্যে একজন মনে করা হয়।
মহম্মদ আমির
মহম্মদ আমির টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু তিনি এখনো টি-২০ খেলতে চান। তবে মহম্মদ আমিরকে পিসিবি নিজেদের সেণ্ট্রাল চুক্তি থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। নিজের বলে বিশ্বের বড়ো বড়ো ব্যাটসম্যানকে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করা পাকিস্তানের এই বিশ্বস্তরীয় ব্যাটসম্যান নিজের দুর্দান্ত সুইংয়ের জন্য পরিচিত। তার কাছে নতুন বলে দুই দিকে সুইং করানো এবং পুরোনো বলে রিভার্স সুইং করানোর সক্ষমতা রয়েছে।
ইমরান তাহির
ইমরান তাহিরও এখনো পর্যন্ত টি-২০ ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকরা তাকে নিয়মিত উপেক্ষা করছেন। এই অবস্থায় এই স্পিনারের খেলাও নিশ্চিত নয়। ইমরান তাহির বর্তমানে বিশ্বজুড়ে টি-২০ লীগ খেলছেন আর ভালো প্রদর্শনও করছেন, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকদের তার এই প্রদর্শন দলে জায়গা দেওয়ার মতো যথেষ্ট মনে হচ্ছে না।