এই ক’দিন আগেও যাঁকে চোখ রাঙাচ্ছিলেন, এখন তাঁকে নিয়ে প্রশংসায় মেতেছেন জাতীয় নির্বাচক মণ্ডলীর চেয়ারম্য়ান। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও তৃতীয় একদিনের ম্য়াচে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে মহেন্দ্র সিং ধোনির বিকল্প কেউ নেই। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্য়াচে ধোনি না থাকলে সিরিজের ভাগ্য় নির্ধারণ হতো কি না সন্দেহ।! দল নির্বাচন পর যাঁরা প্রধান নির্বাচকের বক্তব্য় শুনে এক্সপার্ট ওপিনিয়ন রেখেছিলেন, তাঁরাও এখন চুপ করে দিন গুনছেন, আবার কবে ধোনি ব্য়র্থ হবেন এবং তাঁরা আবার গেল গেলো রব তুলে সমালোচনা শুরু করবেন। কিন্তু, প্রধান নির্বাচক হিসেবে মান্নাভা প্রসাদের পক্ষে মুখ বন্ধ করে বসে থাকা সম্ভব নয়। মাহিকে কড়া শাসানির পর, তাঁকে নিজের অন্তর্জাতিক কেরিয়ার নিয়ে প্য়াঁক খেতে হয়েছিল সোশ্য়াল মিডিয়াতে। তারপর থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ভারতীয় দলে আগামী দিনে সিনিয়র ক্রিকেটারদের ভবিষ্য়ৎ নিয়ে এরমধ্য়ে অনেকবার নিজের অবস্থান থেকে সরেছেন প্রধান নির্বাচক। ধোনি পরপর দুই ম্য়াচে দলের জয়ে বড় ভূমিকা নেওয়ায় নিজের বক্তব্য় থেকে এখন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন মাননীয় প্রধান নির্বাচক।
ইদানিং নানান জায়গায় ধোনিকে নিয়ে ছোটোখাটো গল্প শুনিয়ে তাঁর প্রশংসা করছেন মান্নাভা প্রসাদ। এরকম একটি অনুষ্ঠানে ধোনির সাহসীকতা ও দেশভক্তি গল্প শোনান তিনি। গল্পটি এশিয়া কাপের সময় পাকিস্তান ম্য়াচের আগে। সেই সময় নির্বাচক দলের সদস্য ছিলেন প্রসাদ। প্রধান নির্বাচকের মুখেই গল্পটি শোনা যাক। ”রাতের দিকে জিমে গা ঘামানোর সময়, ওয়েটলিফ্টিং করতে গিয়ে আচমকা পিঠে টান ধরে যায় ধোনির। সঙ্গে সঙ্গে ওই ওজন নিয়েই মাটিতে পড়ে যায় ও। ভাগ্য় ভালো, ওই ওয়েটলিফ্টিং’য়ের জিনিসটা ওর গায়ে পড়েনি। কিন্তু ধোনি হাঁটতে পারছিল না একেবারে। রীতিমতো হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে অ্য়ালার্ম বাজিয়ে মেডিকেল স্টাফদের ডাকে। তারপর ওকে স্ট্রেচার করে বাইরে নিয়ে যেতে হয় ওই ঘর থেকে।” প্রসাদ এরপর বলেন, ”আমি ঢাকা পৌঁছতেই সাংবাদিক বন্ধুরা ধোনিকে নিয়ে প্রশ্ন শুরু করে। আমার কাছে তখন কোনও উত্তর ছিল না। এশিয়া কাপে ভারতের পরের ম্য়াচ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। গুরুত্বপূর্ণ ম্য়াচ। পিচ আবার সিম বোলিং সহায়ক ছিল। আমি সময় নষ্ট না করে তড়ঘড়ি ধোনির কাছে ছুটে যাই, ও কেমন আছে জানতে। সাংবাদিকদের কি বলব, ওকে তখনও জানতে চাইনি। ধোনি নিজে থেকেই বলে ওঠে, ‘চিন্তা কোরো না এমএসকে ভাই। আমি খেলব।’ আমি সে কথায় কান না দিয়ে, জিজ্ঞাসা করি, তোমার পরিবর্ত হিসেবে কাউকে আনাতে হবে কি! সে কথা শুনেও, একই উত্তর, ‘চিন্তা করো না।’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্য়াচ হওয়ায়, আরও চিন্তিত ছিলাম। ধোনি খেলতে না পারলে কি হবে! সব বড় ম্য়াচের আগেই একটা আলাদা চাপ থাকে মাথায়। সেদিনও ছিল। সকালে উছেই ধোনির কাছে ছুটে যাই ওর খবর নিতে। ওর মুখে তখনও সেই একই কথা। এরপর আমি তখনকার প্রধান নির্বাচক সন্দীপ পাটিলকে ফোন করে সব কথা জানাই। পার্থিব প্য়াটেলকে উড়িয়ে আনানো হয়।”
”সেদিন সন্ধেবেলা ফের ধোনির ঘরে যাই। কারণ, চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্রথম একাদশের নাম জমা দিতে হবে। তখনও সেই এখই কথা ধোনির মুখে, ‘চিন্তা কোরো না।’ এরপর রাত এগারোটার সময় গিয়ে দেখি, ও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সুইমিং পুলের দিকে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করতেই বলে ওঠে, ‘আমি হাঁটার চেষ্টা করছি। আর এমনিও চিন্তার কি আছে, আমায় না জানিয়েই পার্থিবকে তো উড়িয়ে আনা হয়েছে।’ ম্য়াচের দিন দুপুর বেলা ধোনি সবাইকে চমকে দেয়। প্রথম একাদশ ঘোষণার সময় দেখি, ও জার্সি পরে বসে আছে। আমি যেতেই বলে ওঠে, ‘চিন্তা করার দরকার নেই আমি তো বলেই ছিলাম। একপায়ে খেলতে হলেও, আমি মাঠে নামব।’ এরপর ওই ম্য়াচে ভারত ধোনির নেতৃত্বে পাকিস্তান হারিয়েছিল। সেদিন ওর সেই কথা, আমার মাথা সবসময় ঘোরে। ভারতীয় দলের জন্য় ধোনি এতটাই ভাবে। মহেন্দ্র সিং ধোনি এরকমভাবেই তৈরি।”
আবারও ধোনিকে কে নিয়ে নির্বাচক প্রধানের বিশাল মন্তব্য! ভক্তরা অবাক!
