বর্তমানের টাইট ক্রিকেট শিডিউলে এক বছর এমন কোনো বড়ো সময় নয় কোনো ক্রিকেটারের কেরিয়ারে। কিন্তু করুণ নায়ারের জন্য এটাই সত্যি। মাত্র এক বছর আগেই কিংবদন্তী বীরেন্দ্র সেহবাগের পর টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন করুণ নায়ার। গত বছরটি সম্ভবত এই ডান হাতি ব্যাটসম্যানের কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় বছর ছিল। গত বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করার উপর ভিত্তি করেই জুলাইতে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ঘটান নায়ার। তার তিনমাস পরেই তিনি কর্নাটক দলের অধিনায়কত্ব পান, তারও একমাস পরে তার অভিষেক হয় টেস্ট ক্রিকেটে, এরপরই মাত্র তৃতীয় টেস্টেই তিনি তার ত্রিপল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এবং টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে ত্রিপল সেঞ্চুরিতে পরিবর্তন করেন। যদিও সেই মাস থেকেই এই কর্ণাটকী ব্যাটসম্যানের কাছে সমস্ত কিছুই নীচের দিকে যেতে শুরু করে। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে খারাপ পারফর্মেন্সের কারণেই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। ওই সিরিজে চার ইনিংসে তিনি করেন ২৬, ০, ২৩ এবং ৫ রান।
২৬ বছর বয়েসী এই ব্যাটসম্যান এখনও অপেক্ষা করে আছেন ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ার আশায়। এবং বিশ্বাস করেন তার খারাপ পারফর্মেন্সের পেছনে তার উপর থাকা প্রবল চাপুই একমাত্র কারণ। তিনি আরও বলেন যে ২০১৬র তার বিপরীত ভাগ্যই আগামি দিনগুলিতে তাকে সাহায্য করবে। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নায়ার বলেন, “ আমার উপর প্রবল চাপ নিয়েই আমি শুরু করেছিলাম। এটা বুঝতে আমার অনেক সময় লেগেছিল যে আমি আমার উপর অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছি। এটা এমন একটা পয়েন্টে চলে এসেছিল যে আমাকে এটা নিয়ে কিছু একটা করতে হত। এবং যেটা করা আমার পক্ষে সেরা ছিল তা হল এটা নিয়ে ভাবা ছেড়ে দেওয়া”।
তিনি আরও বলেন, “ আমি যখন স্কুলে পড়ি তখনই আমি ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করা শুরু করি। আমি ব্যাটের মাঝখান দিয়ে বল মারাও পছন্দ করতে শুরু করি। আমি এখনও এটার উপরেই কাজ করে চলেছি কারণ আমি মনে করি এটা দু’মাসে পরিবর্তিত হতে পারে না। আমি এখন নাম্বারের মধ্যে নেই, আর এমনকী যখন আমি ভাল কিছু করতে পারি না তখন আমি জানি যে আরও একটা ম্যাচ খেলার জন্য আসবে। গত বছর আমি উচ্চতার শিখরও দেখেছি আবার নীচের নীচ অবস্থাও দেখেছি। এটা ভালো যে আমি আমার আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শুরুতেই আমি এই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। সামনের দিকে এগোতে এই এক বছর আমাকে আমার খেলার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে এবং আমার মানসিক কাঠিন্য তৈরিতেও সাহায্য করবে। আমি না ভোলার মতই শিক্ষা পেয়েছি”।

এই কর্ণাটকী তারকা যিনি এ বছর রঞ্জি সেমিফাইনালে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন আরও জানিয়েছেন যে তিনি ভীষণই হতাশ যে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হন নি। তার বক্তব্য, “ আমি ভীষণই হতাশ যে আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নির্বাচিত ১৭ জনের মধ্যে নেই। গত বছরই আমি ত্রিপল সেঞ্চুরি করেছি এবং ঘরোয়া ক্রিকেটেও বেশ কিছু সেঞ্চুরি করেছি। আমি ভেবেছিলাম আমার পেছনে বেশ কিছু ভালো ইনিংস রয়েছে। এই হতাশা থেকে বেরতে আমার প্রায় দিন দু’য়েকের মত লেগেছে। এটা আমার গত ম্যাচেও প্রভাব ফেলেছে। মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে। ওই ম্যাচে আমার মানসিকতা নিয়ে আমি ভীষণই অখুশী। আমার হতাশাকে আমার ম্যাচের উপর প্রভাব ফেলতে দেওয়া উচিৎ হয়নি আমার”। তিনি ওই ঘটনার অনুতপ্ত হয়ে আরও জানান যে ত্রিপল সেঞ্চুরি করার পর তিনি নিজেকে প্রমান করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পান নি। এবং জানান যে যখন তিনি আরও একবার সু্যোগ পাবেন তখন অবশ্যই আরও ভালো করার চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে ওই ইন্টারভিউতে তিনি বলেন, “ ওই ত্রিপল সেঞ্চুরির পর আমি খুবই কম সুযোগ পেয়েছি। আমি আরও একটি সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছি, এবং আমি জানি আমি যখন সেটা পাবো, আমি গত বছর যা করেছি তার থেকেও ভালো করে দেখাবো। এই বছর আমি অনেকবেশি মেহেনত করেছি যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক অনেক বেশি”।