বল ট্যাম্পারিংয়ের পর প্সট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বিতর্কে রয়েছে। এটাও বলা হচ্ছে যে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো চিটিং আর স্লেজিংয়ের বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেই যুক্ত কিন্তু যদি ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো চিটিংয়ের কথা বলা হয় তো তা ইংল্যান্ড করেছিল। এতে ক্রিকেট খেলা সমস্ত দেশগুলি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। এই চিটিংয়ের নাম ছিল বডিলাইন।
১৯৩২-৩৩এ ইংল্যান্ডের দলের অস্ট্রেলিয়ার সফরে যাওয়ার ছিল। দলের মনোবল ভাঙা ছিল। কারণ তারা বারবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে অ্যাসেজ সিরিজে হারছিল। ইংল্যান্ডের দলের সামনে একটাই প্রশ্ন ছিল কীভাবে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ব্যাটকে থামানো যায়। কিন্তু এমন একজন ব্রিটিশ ক্রিকেটার ছিলেন যার বিশ্বাস ছিল যে এবার তিনি সবকিছু বদলে দেবেন। তার জন্য তিনি যে কাজ করেছিলেন সেটা সরাসরি এমন চিটিং ছিল যা ভদ্রোলোকের ক্রিকেটের সমস্ত ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করে দিয়েছিল। এই চিটিংকে এখনো পর্যন্ত বডিলাইন সিরিজ হিসেবে স্মরণ করা হয়ে থাকে।
কী ছিল পরিকল্পনা
এই পরিকল্পনার সূত্রধার ছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ডগলাস হারবার্ট জর্ডিন। তিনি নিজের দলের জোরে বোলার হেরল্ড লারউডকে আলাদাভাবে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেন। তবে জর্ডন সিরিজের জন্য যে জোরে বোলারদের পেয়েছিলেন তাদের নাম বিল বোসে, গবী অ্যালন আর বোবসও ছিলেন। জার্ডিন রণনীতি তৈরি করেন যে লারউড আর বোসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মাথা লক্ষ্য করে শর্ট বল করবেন। ক্রিকেটের দৃষ্টিতে দেখা হলে এটি অনৈতিক ছিল অর্থাৎ ভুল অর্থাৎ চিটিং ছিল। কিন্তু জার্ডিনের কোনো পরোয়া ছিল না।
আহত হয়ে যেতে ব্যাটসম্যানরা
এই রণনীতি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কেহ্লা হওয়া অ্যাসেজ সিরিজের প্রত্যেকটি টেস্ট ম্যাচে লেগ সাইডে সাতজন ফিল্ডার দাঁড় করানো হয়। দুটি লেগ স্লিপ, একটি লেগ গালি, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ, স্কোয়ার লেগ আর লং লেগ। যখন লারউড আর বোসে জোরে বোলিং করতেন তো ব্যাটসম্যানদের জন্য মাথা বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেত। এই চক্করে তারা নিজেদের ক্যাচ দিয়ে বসতেন বা আহত হয়ে যেতে। সিরিজে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত আহত হতে থাকেন।
লারউড ছড়ান আতঙ্ক
প্রথম টেস্টে যখন জার্ডিন লেগ সাইডে সাতজন ফিল্ডার রাখেন তো অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়রা আর দর্শকরাও অবাক হয়ে যান। এই ছিল বডিলাইনের শুরু। এরপর তো লারউডের বোলিং বিরোধী দলের ব্যাটিংকে তছনছ করে দেয়। প্রথম টেস্টে তো ব্র্যাডম্যান খেলেনি কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে তিনি ০ আর ১৩৯ রান করেন। প্রথম টেস্ট ইংল্যান্ড জেতে আর দ্বিতীয় টেস্ট জেতে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের কারণ এটাও ছিল যে সেখানে পিচ স্লো ছিল।
সকলেই করেছিলেন এই চিটিংয়ের বিরোধিতা
তৃতীয় টেস্টে বডিলাইনের আতঙ্ক চরমে ছিল। অস্ট্রেলিয়া এই বোলিংয়ের ধরণকে চিটিং বলে বিরোধিতা করে কিন্তু তখন ক্রিকেটের কোনো নিয়মে লেখা ছিল না যে আপনি এমন বোলিং করতে পারবেন না আর জার্ডিন এই চালাকির ফায়দা নিচ্ছিলেন। তৃতীয় টেস্টে যখন লারউডের বলে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান আহত হন আর তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হউ তো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরে। কিন্তু জার্ডিনের উপর কোনো প্রভাব পড়েনি। দর্শকরা নিয়ন্ত্রণহীন হড়ে পড়েন। পুলিশও ডাকতে হয়। জার্ডিন কিছু মানুষের সঙ্গে অভদ্র ব্যবহারও করেন। এই টেস্টে লারউডের বলে আরো কিছু ব্যাটসম্যানরা গুরুতরভাবে আহত হয়ে যান।
বারবার হামলা হয়, পুলিশ ডাকা হয়
এই সিরিজে দুই দেশের সম্পর্কের উপরও প্রভাব পড়ে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড এমসিসিকে চিঠি পাঠিয়ে বলে যে ইংল্যান্ড সঠিক স্পোর্টসম্যান স্পিরিট নিয়ে খেলছে না। কিন্তু উলটো এমসিসি এই চিঠির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে তিরস্কার করে। কিন্তু এমন বিতর্ক তৈরি হয়ে যায় যা দ্রুতই দু দেশের নেতা, মন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ফেলে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ রদ করার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। বেশ কয়েকবার ইউনিয়ন জ্যাককে পোড়ানো হয়। দর্শকরা বারবার মাঠে এসে ইংল্যান্ড দলের উপর হামলা করছিলেন।
কর্কযুক্ত পোষাক পড়া হয়
যখন অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় টেস্ট হেরে যায় তো চতুর্থ টেস্টের জন্য তাদের খেলোয়াড়রা শরীর বাঁচানোর জন্য কর্কযুক্ত পোষাক পড়ে মাঠে নামেন। চতুর্থ টেস্টও ইংল্যান্ড জেতে। জার্ডিন সিরিজ তো জেতেন কিন্তু তার এই বডি লাইন বোলিং ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো চিটিং হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এরপর এই ধরণের বোলিং আটকানোর জন্য নিয়ম তৈরি করা হয়।