ভারতীয় ক্রিকেট দল আগামী বছর হতে চলা টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। এই বিশ্বকাপ আগামী বছর অক্টোবর নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় খেলা হবে। ভারত ২০০৭ এ হওয়া প্রথম বিশ্বকাপকে নিজেদের নামে করেছিল কিন্তু তারপর দল একবারও জয়ী হতে পারেনি। দল এখন থেকেই বিশ্বজয়ী হওয়ার জন্য বেশ কিছু প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে কিন্তু এটা শুরুতেই ফ্লপ হয়ে গেছে।
টিম ম্যানেজমেন্ট এমন প্লেয়িং ইলেভেন তৈরি করতে যায় যার নীচের ক্রম পর্যন্ত ব্যাটিং থাকবে। বোলারও এমন হোক যারা সামান্য ব্যাটিংও করতে পারে। এই কারণে কুলদিপ আর চহেলকে দলের বাইরে রাখা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে এমনটা হয়েছে আর দলকে হারতে হয়েছে। রোহিত শর্মা, শিখর ধবন আর বিরাট কোহলির আউট হওয়ার পর ব্যাটিং সম্পূর্ণ ধসে গিয়েছে। দলে রবীন্দ্র জাদেজা আর ক্রুণাল পাণ্ডিয়া একই রকম খেলোয়াড়। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে ওয়াশিংটন সুন্দর সুযোগ পেয়েছেন। এই তিন বোলার দুটি ম্যাচ মিলিয়ে একটাই উইকেট নিতে পেরেছেন। জাদেজা ২০১৭র পর ওয়েস্টইন্ডিজে প্রথম টি-২০ ম্যাচ খেলেছিলেন।
এটা প্রথমবার নয় যখন ভারতীয় দল এই রকম ফালতু প্রয়োগ করছে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাওয়া হার আর বিশ্বকাপ ২০১৯ এর সেমিফাইনালে পাওয়া হারও টিম ম্যানেজমেন্ট আর অধিনায়ক বিরাট কোহলির জেদের কারণে হয়েছে। ভারতীয় দল এমনই প্রয়োগ করতে থাকলে আগামী টি-২০ বিশ্বকাপেও তাদের হারের মুখে পড়তে হতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৭ চলাকালীন অধিনায়ক বিরায় কোহলি আর কোচ অনিল কুম্বলের মধ্যে সবকিছু ঠিক চলছিল না। মিডিয়া রিপোর্টসের কথা মানা হলে তো ফাইনালের আগেই টিম মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে টস জেতার পর প্রথমে ব্যাট করা হবে। যে কোনো দল বড়ো ম্যাচের প্র্যহমে ব্যাট করে বোর্ডে বড় রান তুলতে চায়।
বিরাট কোহলি এমনটা করেননি আর টসে তিনি বোলিং করার সিদ্ধান্ত করে নেন। এরপর কি হয়েছে সেটা কারো কাছে লুকোনো নেই। পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে ৩৩৮ রান করে দেয়। জবাবে ভারতীয় দলের ব্যাটিং ছন্নছাড়া হয়ে যায় আর সম্পূর্ণ দল মাত্র ১৫৮ রানেই অলআউট হয়ে যায়। পাকিস্তান এই ম্যাচ ১৮০ রানের বড়ো ব্যাবধানে জিতে নেয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর যুবরাজ সিংকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় আর চার নম্বরের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত দীনেশ কার্তিক, আম্বাতি রায়ডু, কেএল রাহুল, মনীষ পাণ্ডে, মহেন্দ্র সিং ধোনি, কেদার জাধব, হার্দিক পাণ্ডিয়ার মত খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করে দেখা হয়। বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত আম্বাতি রায়ডু এই জায়গায় লাগাতার রান করছিলেন।
তা সত্ত্বেও একটি খারাপ সিরিজের পর তাকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। চার নম্বরের জন্য নির্বাচিত হন বিজয় শঙ্কর। শঙ্কর তার আগে ভারতের হয়ে একবারও চার নম্বরে ব্যাটিং করেননি। শুরুর ম্যাচে ওপেনিং ব্যাটসম্যান কেএল রাহুল চার নম্বরে ব্যাটিং করেন। রাহুল সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাত্র দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন। শিখর ধবনের আহত হওয়ার পর তিনি ওপেনিং ব্যাটিং করেন আর মিডল অর্ডারে প্রথমে বিজয় শঙ্কর আর তারপর ঋষভ পন্থ সুযোগ পান। দুই ব্যাটসম্যান সম্পূর্ণ ফ্লপ থাকেন। সেমিফাইনালে টপ ৩ দ্রুত আউট হওয়ার পর অভিজ্ঞতা হীন ঋষভ পন্থকে সংঘর্ষ করতে দেখা যায়। নীচের দিকে ধোনি জাদেজার সঙ্গে ইনিংস সামলান কিন্তু দল হারে।
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যথেষ্ট চাপ থাকে আর এই অবস্থায় অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের প্রথমে ব্যাটিং করার জন্য নামানো হয়। টিম ম্যানেজমেন্ট বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ৭ নম্বরে পাঠায়। হার্দিক পান্ডিয়াও তার আগে ব্যাটিং করতে আসেন আর দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হন। বিশ্বকাপে ভারতের হারের সবচেয়ে বড়ো কারণ খারাপ প্রদর্শন নয় বরং প্রয়োজনের বেশি প্রয়োগ ছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট সেই প্রয়োগ টি-২০ বিশ্বকাপের শুরু হওয়ার এক বছর আগেই শুরু করে দিয়েছে। টি-২০ ম্যাচে প্রত্যেক দল নিজেদের ভাল বোলারদের সঙ্গে নামতে চায়। তারা বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের রান করা থেকে আটকায় আর ছোটো লক্ষ্যকেও বাঁচিয়ে ফেলে।
এর জন্য আইপিএলেরও উদাহরণ দেখা যেতে পারে। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আর চেন্নাই সুপার কিংস সবচেয়ে সফল দল। মুম্বাই চারবার আইপিএল জিতেছে আর এতে দুবার তারা ১৫০ কম স্কোরকে ডিফেন্ড করেছে। চেন্নাই দলও আইপিএলে বেশ কিছু ছোটো লক্ষ্যকে ডিফেন্ড করেছে। অন্যদিকে মজবুত ব্যাটিংওয়ালা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু আর কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব প্লে অফেও পৌঁছতে সংঘর্ষ করছে। ভারতীয় দল টি-২০ বিশ্বকাপকে জিততে চায় তো টিম ম্যানেজমেন্টকে এই প্রয়োগ যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে আর প্রধান বোলারদের সুযোগ দিতে হবে। বর্তমানের স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ৪৪টি টি-২০আইতে ৩৩টি উইকেট আর ক্রুণালের ১৬টিতে ১৪টি আর সুন্দরের ১২টি ম্যাচে ১২টি উইকেট রয়েছে। অন্যদিকে কুলদীপ যাদবের ১৮টি ম্যাচে ৩৫টি আর চহেলের ৩১টি ম্যাচে ৪৬টি উইকেট রয়েছে। এতেও পরিস্কার হয়ে যায় যে টিম ম্যানেজমেন্টের কি করা উচিৎ।