মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আর চেন্নাই সুপার কিংসের পর, কলকাতা নাইট রাইডার্স আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল। এই ফ্রেঞ্চাইজি ২বার এই খেতাব জিতেছে। কেকেআরের নাম উঠতেই সকলের মনে সুনীল নারিন, অ্যান্দ্রে রাসেলের মতো এই ফ্রেঞ্চাইজির দুর্দান্ত প্রতিভাবান বিদেশী প্লেয়ারদের নাম মনে আসে। কেকেআর সবসময়ই তাদের দল গঠন করতে বিদেশী তারকা প্লেয়ারদের গুরুত্ব দিয়েছে। এই আইপিএলেও তারা সেই ধারা বজায় রেখেছে নিলামে ইয়োন মর্গ্যান আর প্যাট কমিন্সকে শামিল করে। এই দলে হাতে গোনা কয়েকজন বিদেশী প্লেয়ারই রয়েছেন যারা নিরাশাজনক প্রদর্শন করেছেন। সেই সঙ্গে তারা প্রথম একাদশে নিয়মিত জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের চোট আঘাত, বয়স এবং খারাপ ফর্মের কারণে। আজ এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা তেমই চারজন বিদেশী প্লেয়ারের কথা বলব নিজেদের প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং কেকেআরের হয়ে মাত্র একটিই ম্যাচ খেলেছেন।
ডোয়েন ব্র্যাভো
বর্তমানে চেন্নাই সুপার কিংস দলের সদস্য ডোয়েন ব্র্যাভো কৈশোরেই ক্যারিবিয়ান প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পা রেখে নিজের স্টাইলিস স্ট্রোকস আর বড়ো সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দিয়েছেন। আশা করা হয়েছিল যে তার কাকা ব্রায়ান লারার উত্তরাধিকার তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং এই তরুণ তারকাকে ঘিরে যথেষ্ট উচ্চাশা তৈরি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কোনো আইপিএলের কোনো ফ্রেঞ্চাইজিই তাকে কেনেনি। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে চড়াইউৎরাই দেখার পরও যখন ২০১৭র নিলামে যখন কেকেআর তাকে কেনে অনেকেই ভুরু কুঁচকেছিলেন। আইপিএল ২০১৭য় কেকেআরের হয়ে তিনি একটিই মাত্র ম্যাচ খেলেছিলেন পুণে রাইজিং সুপার জায়ান্টের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে ১৮৩ রান তাড়া করে, রবিন উথাপ্পার নায়কোচিত প্রদর্শনে ব্র্যাভো নিজের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি। ওই ম্যাচে তিনি অপরাজিত ৬ রান করেন এবং কেকেআর সহজেই জয় হাসিল। পরের ম্যাচে কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট ব্র্যাভোর জায়গায় নাথান কুল্টার নাইলকে দলে সুযোগ দেয় পরের ম্যাচে এবং পরের মরশুমেই তাকে কেকেআর রিলিজ করে দেয়।
ব্র্যাড হ্যাডিন
প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ব্র্যাড হ্যাডিন ইডেন গার্ডেন্সে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে আইপিএল অভিষেক করেছিলেন। জ্যাক কালিসের সঙ্গে ওপেন করে তিনি ১১ বলে ১৮ রান করেন। তার এই ইনিংসে দুটি চার এবং একটি ছক্কা ছিল। মিড অফ অঞ্চলে একটি লফটেড ড্রাইভ করতে গিয়ে তিনি স্পিনার সৈয়দ মোহম্মদের বলে আউট হন। সেই মুহূর্তে তার ভাবনাতেও ছিল না যে ওই বলটি আওপিএলে তার শেষ বল হবে। পরের ম্যাচে তাকে বাদ দেওয়া হয় এবং রায়ান টেন ড্যাশেটকে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। এবং শ্রীবৎস গোস্বামীর উপস্থিতিতে বাকি মরশুমে উইকেটে পেছনে হ্যাডিনের সার্ভিসের আর প্রয়োজন পড়েনি কেকেআরের। আশ্চর্যজনকভাবে পরের মরশুমের জন্য কেকেআর তাকে রিটেন করে কিন্তু একটিও ম্যাচে তাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০১৩ নিলামের শেষে অবশেষে তাকে ছেড়ে দেয় কেকেআর এবং সম্প্রতি তাকে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ তাদের সহকারী কোচ নিযুক্ত করেছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪২টি টি-২০ ম্যাচ খেলে ৪০০ বেশি রান করেছেন।
জো ডেনলি
ইংলিশ অলরাউন্ডার জো ডেনলিকে কেকেআর ২০১৯এর নিলামে তার বেস প্রাইসে কিনেছিল আর তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে নিজের আইপিএল ডেবিউ করেছিলেন। কেকেআরে তাকে নির্বাচিত করার কারণ ছিল তার বিশাল অভিজ্ঞতা এবং ইংলিশ কাউন্টি দল কেন্টের হয়ে অধিনায়ক হিসেবে অসাধারণ প্রদর্শন। কিন্তু আইপিএলে তিনি ভীষণই খারাপ শুরু করেন কারণ ম্যাচে প্রথম বলেই ঈশান্ত শর্মার একটি অসাধারণ ইনসুইংগারে তিনি গোল্ডেন ডাক হয়ে যান।
যতই তিনি ব্যাটিং অলরাউণ্ডার হিসেবে পরিচিত হোন, কিন্তু এই ম্যাচে বল করার একটিও সুযোগ পাননি। তিনি একটা সুবর্ণ সুযোগের ব্যবহার করতে বিফল হন আর পরের ম্যাচে সুনীল নারিনকে কেকেআর সুযোগ দেয়। ২০২০ আইপিএল নিলামের আগে তাকে রিলিজ করে দেয় কেকেআর। এবং নিলামে তিনি তার জন্য কোনো ক্রেতা পাননি। তবে তার কাছে একটা ভালো সুযোগ রয়েছে আরো একটি আইপিএল ম্যাচ খেলার, কারণ তিনি এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের দলের নিয়মিত সদস্য। তবে সম্প্রতি তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলা হওয়া টি-২০ সিরিজে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মাশরফি মোর্তজা
বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরফি মোর্তজা কেকেআরের হয়ে ২০০৯ এ ডেকান চার্জাসের বিরুদ্ধে আইপিএল অভিষেক ঘটান। এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে কেকেআর ১৬০ রান করেন। এই ম্যাচে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে এসে মোর্তজা ২ বলে ২ রান করেন। বল হাতে তিনি ভীষণই খারাপ প্রদর্শন করেন। চার ওভারের স্পেলে তার দেওয়া ৫৮ রানই দুই দলের মধ্যে ব্যবধান হয়ে দাঁড়ায়। আইপিএলে তার প্রথম ওভারেই অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তাকে ব্যাক টু ব্যাক ছক্কা মারেন। এরপর তিনি ভদ্রস্থভাবে ফিরে আসেন আর পরের ২ ওভারে ১৮ রান দেন। এই ম্যাচে ডেকান চার্জাসের জেতার জন্য ২১ রানের প্রয়োজন ছিল, এবং শেষ ওভারে তাকে বল করার জন্য ভরসা করা হয়। যদিও সেই সময়কার তরুণ রোহিত শর্মা তার ওভারে ২৬ রান নিয়ে ম্যাচটি নাটকীয়ভাবে শেষ করে দেন। ২০১৪য় আরসিবির বিরুদ্ধে অশোক দিন্দার ওভারের সঙ্গে এটিও আপিএলের সবচেয়ে দামী ওভার হয়ে রয়েছে।