সাত রেস কোর্স রোড। নামটা শুনলেই যে কেউ বলে দেবেন, আরে এ তো দেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। গত বছর মে মাসের শেষের দিকে রাস্তাটার নাম বদলে হয়েছে লোক কল্যাণ মার্গ। ইংরেজিতে পিপল‘স ওয়েলফেয়ার রোড। রাস্তার নাম বদল হওয়ায় মজা করে অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন, ১৯৮০ সালের পর প্রধানমন্ত্রীর এবার নতুন ঠিকানা জুটল। আসলে পুরনো ওই রেস কোর্স রোড নামটা সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে দেওয়া। নামটা ভারতীয়দের মূল্য ও মূল্য়বোধের সঙ্গে মিলমিশ খাচ্ছিল না, তাই বদলে রাষ্ট্রভাষায় নাম রাখা।
ওখানেই সেদিন, মানে গত সাতাশ তারিখ ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের গোটা টিমকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ভারতের মেয়েদের ওই দলটা এই ক‘দিন আগেই আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপে দেশের নাম উজ্জ্বল করে এসেছে। মাত্র ন‘রানের জন্য় বিশ্বকাপ হাতছাড়া হলেও গোটাদেশ মিতালি রাজদের ‘কারনামা‘কে কুর্নিশ জানিয়েছে। ইংল্য়ান্ড থেকে মেয়েদের ক্রিকেট টিমটা যখন দেশে ফেরে একবারের জন্য়ও মনে হয়নি দলটা ফাইনালে হেরে এসেছে। একেবারে বীরের মর্যায় বরণ করে নেন বীরঙ্গনাদের।
এখানে দেখুনঃ ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হলো ছবি, ব্রিটিশ সুন্দরী সারা নাকি দু’বাচ্চার মা?
দেশের তিন নম্বর নাগরিকও আম-জনতার থেকে খুব একটা আলাদা নন। চায়েওয়ালা থেকে দেশের ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেছেন বলেই হয়ত ভেতরের মানুষটা এখনও আর পাঁচটা ভারতীয়র মতো। দেশের নেতা, ফলে ব্য়স্ত মানুষ। গত বৃহস্পতিবার মিতালিসহ বিশ্বকাপের পুরো রানার্স-আপ টিমটাকে তাই তাঁর সরকারি বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ইচ্ছে ছিল, বিশ্বকাপ চলাকালীন গোটা দেশটাকে যেভাবে একসূত্রে বেঁধেছিলেন ওঁরা, তার জন্য় অভিনন্দন জানানো।
কিন্তু, বারো মিনিটের সৌজন্য় সাক্ষাৎকার হয়ে দাঁড়ালো মজাদার প্রশ্ন, আলোচনা, জিজ্ঞাসা আর পরামর্শে ভরপুর দেড় ঘণ্টার আড্ডা। আলোচনা এতটাই আন্তরিক আর খোলামেলা হয়ে উঠল যে বিশ্বকাপের সেই বহু আলোচিত সেমিফাইনাল ম্য়াচের নায়িকা হরমনপ্রীত জিজ্ঞাসা করেই বসলেন, ”আচ্ছা মোদিজী আপনার নিশ্চয়ই কোনও স্পেশাল ফ্য়াশন ডিজাইনার আছে। কোথা থেকে বানান এত সুন্দর পোশাক?”
এখানে দেখুনঃ সংবর্ধনা মঞ্চে সবার চোখ খুলে দিলেন মিতালি রাজ! দেখে নিন কী বলে দিলেন ভারতীয় অধিনায়িকা
আগ্রহ আর কৌতূহল মেশানো প্রশ্নটা শুনেই হেসে ফেলেছিলেন মোদি। হাসতে হাসতেই জানান, দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও অভ্য়াস এখনও বদলায়নি। আমেদাবাদের যে দরজির কাছ থেকে সবকিছু পোশাক বানাতেন, এখনও তার কাছ থেকেই বানান। ”হ্য়াঁ একটাই ব্য়াপার বদলেছে। আগে সে ২০-২৫ টাকা নিত, এখন মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে এটাও জানান, দেশের আর পাঁচটা খেটে খাওয়া মানুষ যেমন নিজের গায়ের জামাটা নিজে কাচেন ময়লা হয়ে গেলে, তিনিও তাই করতেন।
২৩ জুলাই লর্ডসে স্বপ্ন সফলের শেষ ধাপ পৌঁছতে না পারায়, ভেতরে ভেতরে মুষড়ে ছিলেন বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যারা। বাইরেও সেটা প্রকাশ পাচ্ছিল। ব্য়াপারটা বুঝতে পেরেই নিজে থেকেই প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সাহায্য় করতে এগিয়ে আসেন। বিশ্বকাপে ভারতের মেয়েদের পারফরমেন্সের প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেদিনের সেই সাক্ষাতের কথা বলতে গিয়ে পুনম রাউত জানান, ”উনি আমাদের প্রেরণা দিতে অনেক কথা বলেন সেদিন (সাক্ষাতের সময়)। আমরাও ওনাকে অনেক প্রশ্ন করেছি। যেমন – উনি কিভাবে এতবড় দেশটাকে চালানোর দায়িত্ব সামলান। তারপর উনি আমাদের জানান, নিয়মিত যোগ্য়াভাস তাঁকে অনেক সাহায্য় করে। সময়ের সঙ্গে বয়স বাড়লেও যোগা কোনওদিন বন্ধ করেননি উনি। বিদেশ সফরে গেলেও সময় বের করে নেন যোগার জন্য। আমাদেরকেও যোগার পরামর্শ দেন, যাতে মনসংযোগ বাড়ে। বিশ্বকাপ না জিততে পারায়, ভেতরে ভেতরে আমরা মনমরা ছিলাম। তাতে উনি আমাদের বলেন, ‘আপনে হারনে কা দু:খ মত করো, আপনে পুরা দেশকা দিল জিত লিয়া হ্য়ায়।”’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ তাঁর ‘মন কি বাত‘ অনুষ্ঠানেও ২০১৭ মহিলা বিশ্বকাপের রানার্স-আপ ভারতীয় দলকে দেশবাসীর সামনে আরও একবার শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবারের ওই সৌজন্য় সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করেন। প্রশংসা করেন দেশের যুব সম্প্রদায়েরও। মিডিয়া আজকাল খবরকে এমনভাবে প্রকাশ করে যে দেশের মানুষের প্রত্য়াশা আপনা থেকেই বেড়ে যায়। আর যখন তা পূরণ হয় না, তখন তাঁরা অন্য়রকম আচরণ করে বসেন। কিন্তু, এবার আর সেটা হয়নি। দেশের যুব সম্প্রদায় বিশ্বকাপের শুরুর দিন থেকেই ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের পাশে ছিলেন আর এখনও আছেন।