পৃথিবীর বহু দেশে ক্রিকেট খেলা হলেও , সবচেয়ে বেশি ক্রিকেট ভক্ত রয়েছে উপমহাদেশগুলিতেই। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাই উপমহাদেশের মানুষের ক্রিকেট নিয়ে আবেগটা একটু বেশি। উপমহাদেশের প্রধান চার ক্রিকেট শক্তি হল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ও শ্রীলঙ্কা। এদের মধ্যে ক্রিকেট ঐতিহ্যের বিচারে সবচেয়ে আগে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এরপরেই রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। এক সময় দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ ঘিরে ক্রিকেট ভক্তদের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। এখনো এই দুই দেশের ক্রিকেট লড়াই দেখার জন্য ভক্তরা অধীর আগ্রহে থাকেন। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে সেটা খুব কমই সম্ভব হয়। অন্যদিকে, ক্রিকেট বিশ্বে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ নবীন। তবে মাশরাফি বিন মর্তুজার অধীনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বর্তমানে ওডিআইতে চোখে চোখ রেখে কথা বলে বিশ্বের যে কোনো দলের বিপক্ষে। সেটা হোক ভারত কিংবা পাকিস্তান।
ম্যাচ হলেই জমে ওঠে উত্তেজনা
ভারত পাকিস্তানের লড়াই এখন খুব একটা জমে না উঠলেও বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় প্রতিটি ম্যাচ ঘিরেই দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা চরমে থাকে। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত ও বাংলাদেশের ম্যাচে প্রথম এই দুই দলের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি খয়। তারপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে খেলা থাকলেই সমর্থকদের কথার লড়াই শুরু হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যম। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত ভারতকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। ভারত ক্ষমতার দাপটে অন্যায় সুবিধা আদায় করে নেয় বলেও অনেকের অভিযোগ। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচ ঘিরে থাকে বাড়তি আকর্ষণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই দুই দলের মধ্যে হওয়া কিছু বিতর্কের ব্যাপারে।
১. রোহিত শর্মার ‘নো বল’ বিতর্ক
২০১৫ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত স্বপ্নের উত্থান হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। দ্বিতীয় রাউন্ডে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় মাশরাফি বাহিনী। কিন্তু তাদের এই স্বপ্নের উত্থান দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে আম্পায়ারদের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে।
কোয়ার্টার ফাইনালে ওই ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। বিতর্কের শুরু হয় রোহিত শর্মার একটি ক্যাচকে ঘিরে। রোহিত যখন ৯৯ রানে ব্যাট করছিলেন, তখন রুবেল হোসেনের একটি ফুলটস বলে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। রোহিত আউট হলেও পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার নো বল দেন। পরে টিভি রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা যায় রুবেলের ডেলিভারিটি কোনোভাবেই নো বল ছিল না। আলিম দারের বদান্যতায় রোহিত শর্মা জীবন পেয়ে পরে ২৭ বলে আরো ৪৫ রান যোগ করে বাংলাদেশের উপর রানের বোঝা চাপিয়ে দেন, পরবর্তীতে যা বাংলাদেশ আর টপকাতে পারেনি।
২. মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিতর্কিত ক্যাচ
২০১৫ বিশ্বকাপের ওই একই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মাকে বিতর্কিতভাবে আউট না দিলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে একইভাবে বিতর্কিত আউট দেন আম্পায়ার। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সেটা আউট ছিল না।
ভারতের পাহাড়সমান লক্ষ্যের জবানে এক সময় ৩৩ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মোহাম্মদ শামির বলে তুলে মারতে গিয়ে তিনি বাউন্ডারি লাইনের একেবারে কাছে শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়েন। মাঠের আম্পায়ার কোনো রিপ্লে না দেখেই আউট দিয়ে দেন। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ধাওয়ানের পা বাউন্ডারি লাইনে লেগেছিল। ফলে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের মতো ম্যাচে দুই দুইবার আম্পায়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায়।
৩. মওকা মওকা বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে টুর্নামেন্টের সম্প্রচার সত্ত্ব পাওয়া স্টারস্পোর্টস ‘মওকা মওকা’ নামে একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে। ওই বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে হেয় করা হয়। সেই সময় এই বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বড় কোনো জবাব দেওয়া না হলেও বাংলাদেশ জবাব দিতে পেছু হটেনি। কিন্তু তার জবাব দিয়েছিল অনেক পরে ২০১৬য় ভারতের বাংলাদেশ সফরে।
বিশ্বকাপে ভারত বাংলাদেশের বিতর্কিত ম্যাচটির পর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে যায় টিম ইন্ডিয়া। সেই সফরে মুস্তাফিজুর রহমানের ধারালো বোলিংয়ের সামনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা নাস্তানাবুদ হয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে যায়।
ওই সিরিজের পরেই বাংলাদেশের একটি জাতীয় পত্রিকা একটি ছবি প্রকাশ করে। যেখানে দেখানো হয়, একটি দোকানের সামনে ধোনিদের দাঁড় করানো রয়েছে এবং তাদের মাথার অর্ধেক চুল কাটা। আর দোকানের সাইনবোর্ডের ছবিতে মুস্তাফিজুর একটি কাটার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তাতে লেখা ছিল, ‘মুস্তাফিজুর কাটার পাওয়া যায়।’ যা দেখার পর ভালই চটেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা।
৪. ধোনির ছিন্ন মস্তক হাতে তাসকিনের ছবি
২০১৬ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটা ছবিকে ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছিল। ফটোশপ করা একটি ছবিতে বাংলাদেশের জোরে বোলার তাসকিন আহমেদের হাতে ভারতের তৎকালীন ওডিআই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির কাটা মাথা দেখানো হয়।
সেই সময় ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ভারতের ক্রিকেট ভক্তরা বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন কুল ধোনি তার এই অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন ফাইনালে বাংলাদেশকে আট উইকেটে হারিয়ে। ওই ম্যাচের জয়সূচক রানটি আসে ধোনির ব্যাট থেকে।
৫. মোস্তাফিজুরকে ধোনির ধাক্কা
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ কোয়াটার ফাইনালে বিতর্কের পর ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত। মিরপুরে হওয়া সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দেওয়া ৩০৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১১৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। ব্যাটিং বিপর্যয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন ক্যাপ্টেন কুল। ইনিংসের ২৫তম ওভারে রান নেওয়ার সময় ক্রিজে মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা মোস্তাফিজুর রহমানকে কনুই দিয়ে সজোরে ধাক্কা মারেন ধোনি।
ধোনির এই ধাক্কার কারণে মোস্তাফিজুরকে মাঠ ছাড়তে হয়। টিভি রিপ্লেতে দেখা গিয়েছিল ধোনি ইচ্ছা করেই ধাক্কা মেরেছেন। ধাক্কা মারার পর ধোনি রান নিতে বাধা দেওয়ার কারণে অ্যাম্পায়ারের কাছে মুস্তাফিজুরের নামে অভিযোগও করেন।
ধোনির এই আচরণ ভালো লাগেনি অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারের। এই ঘটনায় অনেকেই ধোনির সমালোচনা করেন। ধাক্কা মারার পর বেশি সময় মাঠে টিকতে পারেননি ধোনি। পরের ওভারেই তিনি সাকিব আল হাসানের বলে আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন।