ক্রিকেটে যখনই টি-২০ ফর্ম্যাট এসেছে সেই সময় ভারতের তারকা খেলোয়াড়রা এটা খেলাও পছন্দ করতেন না। তাদের এই ফর্ম্যাটের ব্যাপারে কোনো আন্দাজ ছিল না। কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে যখন ভারতীয় দল ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ জেতে তো দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে যায়। টি-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ এর পর থেকে দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যায় কিন্তু ভারতীয় দল তারপর থেকে এই ফর্ম্যাটে দ্বিতীয় খেতাব জিততে পারেনি। কিন্তু আইপিএল শুরু হওয়ারপর থেকে এই ফর্ম্যাটে তারকা খেলোয়াড় অবশ্যই সময় সময় দল পেয়েছে। যারা বড়ো উপলব্ধি হাসিল করেছেন। আজ আমরা পনাদের টি-২০ আন্তর্জাতিকে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ প্লেয়িং ইলেভেনের ব্যাপারে জানাতে চলেছি। যেখানে কিছু বড়ো নামকে শামিল করা হয়নি, যা দেখে আপনারা অবাকও হতে পারেন। যদি রেকর্ডকে মাথায় রাখা হয় তো এই ১১টি নাম ভারতীয় দলের হয়ে টি-২০তে এখনো পর্যন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ থেকেছেন।
১. রোহিত শর্মা
ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো দ্বিতীয় নাম মাথাতেই আসবে না। যখনই টি-২০ ফর্ম্যাটের কথা হয় আর বিশেষ করে ভারতীয় দলের উল্লেখ হয় তো এই খেলোয়াড় টি-২০ আন্তর্জাতিক ফর্ম্যাটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান। রোহিত শর্মা ভারতীয় দলের হয়ে ১০৮টি টি-২০তে ৩২.২৪ গড়ে ২৭৭৩ রান করেছেন। যার মধ্যে তিনি ৪টি সেঞ্চুরি আর ২১টি হাফসেঞ্চুরিও করেছেন। এর মধ্যে হিটম্যানের স্ট্রাইকরেট থেকেছে ১৩৮.৭৯। অন্যদিকে এই ফর্ম্যাটে তার সর্বোচ্চ স্কোর ১১৮ রান।
২. শিখর ধবন
দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে গৌতম গম্ভীরের নামও সামনে আসছিল কিন্তু ধবনের রেকর্ড জানান দেয় যে তাকে কম করে ভাবা যাবে না। যে কারণে রেকর্ডের আধারেই শিখর ধবন এই দলে জায়গা পেয়েছেন। তার আর রোহিতের জুটিও অনেক বেশি হিট থেকেছে। শিখর ধবন এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে ৬০টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে তিনি ২৮.২৯ গড়ে ১৫৮৮ রান করেছেন। এর মধ্যে ১০টি হাফসেঞ্চুরিও শামিল রয়েছে। এর মধ্যে তার স্ট্রাইকরেট থেকেছে ১২৮.৩৬। ধবনের এই ফর্ম্যাটে সর্বোচ্চ স্কোর ৯২।
৩. বিরাট কোহলি
যখনই টি-২০ ফর্ম্যাটের ভালো ব্যাটসম্যানদের নাম নেওয়া হয় তো তাতে যতই বিরাট কোহলির নাম অনেক কম বার আসুক কিন্তু রান করার ব্যাপারে এই খেলোয়াড়ের থেকে এখন সকলে পেছিয়ে আছেন। তার চেয়ে ভালো ৩ নম্বর খেলোয়াড় ভারতীয় দল এই ফর্ম্যাটে পায়নি। বিরাট কোহলি ভারতীয় দলের হয়ে এখনো পর্যন্ত টি-২০ ফর্ম্যাটে ৮০টি ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে তিনি ৫০.৮ গড়ে ২৭৯৪ রান করেছেন। এর মধ্যে তিনি ২৪টি হাফসেঞ্চুরিও করেছেন। অন্যদিকে তার স্ট্রাইকরেট এর মধ্যে ১৩৮.২৫ এর থেকেছে। তার এই ফর্ম্যাটে সর্বশ্রেষ্ঠ স্কোর ৯৪ রান।
৪. যুবরাজ সিং
সিক্সার কিং নামে জনপ্রিয় আর ৬ বলে ৬টি ছক্কা মারা যুবরাজ সিংকে ছাড়া এই দল তৈরিই হবে না। এই খেলোয়াড় মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করে নিয়মিত নিজেকে একজন ভালো অলরাউন্ডার হিসেবে প্রমানিত করেছিলেন। ফিল্ডার হিসেবেও যুবি অসাধারণ ছিলেন। যুবরাজ সিং ভারতীয় দলের হয়ে টি-২০ ফর্ম্যাটে ৫৮টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তিনি ২৮.০২ গড়ে ১১৭৭ রান করেছেন। যার মধ্যে তিনি ৮টি হাফসেঞ্চুরিও করেছেন। এছড়াও তার স্ট্রাইকরেট থেকেছে ১৩৬.৩৮। তার টি-২০ ফর্ম্যাটে সর্বশ্রেষ্ঠ স্কোর ৭৭ রান। যুবি বল হাতেও ২৮টি উইকেট নিয়েছেন। গত বছর ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া যুবরাজ সিংয়ের চেয়ে ভালো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দল খুঁজে পায়নি, যিনি মুশকিল সময়ে বল হাতেও দলকে টেনে তোলার ক্ষমতা রাখতে অন্যদিকে ফিল্ডিংয়েও অসাধারণ ছিলেন।
৫. সুরেশ রায়না
আরো এক মিডল অর্ডারের দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান আর টি-২০ ফর্ম্যাটে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়নার উল্লেখ হওয়া তো স্বাভাবিকই। যুবরাজ সিংয়ের মতোই ভূমিকা ভারতীয় দলের হয়ে পালন করে থাকেন রায়না। ব্যাটের পাশাপাশি রাউনা বল হাতেও উপযোগী। অন্যদিকে তিনিও দুর্দান্ত ফিল্ডার। সুরেশ রায়না ভারতীয় দলের হয়ে এখনো পর্যন্ত টি-২০ ফর্ম্যাটে ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে তিনি ২৯.১৬ গড়ে ১৬০৪ রান করেছেন। যার মধ্যে রায়না একটি সেঞ্চুরি আর ৫টি হাফসেঞ্চুরিও করেছেন। তার স্ট্রাইকরেট থেকেছে ১৩৪.৭৯। তার সর্বোচ্চ স্কোর এই ফর্ম্যাটে হলো ১০১ রান। রায়না বল হাতে ১৩টি উইকেটও নিয়েছেন। বর্তমানে রায়না ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে তার জায়গায় এখনো দলে কোনো খেলোয়াড় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি। রায়নার গুনতি ৩ডি খেলোয়াড়দের মধ্যে হয়।
৬. মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক আর উইকেটকিপার)
এই দলের যখন উইকেটকিপার আর অধিনায়কের প্রয়োজন পড়েছে তো সেই দুটি ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। মহেন্দ্র সিং ধোনি টি-২০ ফর্ম্যাটে ভারতীয় দলকে সফলতা এনে দিয়েছেন শুধু নয় বরং সেই সঙ্গে ভালো দলও তৈরি করেছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে ৯৮টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে তিনি ৩৭.৬ গড়ে ১৬১৭ রান করেছেন। এর মধ্যে তিনি ২টি হাফসেঞ্চুরিও করেছেন। ধোনির স্ট্রাইকরেট ১২৬.১৩র থেকেছে। তার সর্বশ্রেষ্ঠ স্কোর ৫৬ রান।
ধোনি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতের হয়ে সবচেয়ে সফল থেকেছেন। অন্যদিকে তার অধিনায়কত্বের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজনই নেই। ভারতীয় দলের ফিনিশার হিসেবেও ধোনি নিজেকে প্রমান করেছেন। যে কারণে তিনি দলে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
৭. হার্দিক পাণ্ডিয়া
সাত নম্বরে আক্রামনাত্মক ব্যাটিং আর জোরে বোলিংয়েও যোগদান দেওয়া ক্ষমতার কারণে তাকে এই দলে জায়গা দেওয়া হয়েছে। হার্দিক পান্ডিয়াকে শেষের ওভারে খুব সহজেই ছক্কা মারতে দেখা যায়। মাঝের ওভারেও একজন ভালো জোরে বোলার প্রমানিত হন তিনি। হার্দিক পাণ্ডিয়া এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে টি-২০ ফর্ম্যাটে ৪০টি ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে তিনি ১৬.৩১ গড়ে ৩১০ রান করেছেন। তার স্ট্রাইকরেট এর মধ্যে ১৪৭.৬২র থেকেছে। তবে তিনি এখনো পর্যন্ত হাফসেঞ্চুরি করতে সফল হননি। পাণ্ডিয়া ছক্কা মারতে ওস্তাদ। পাণ্ডিয়া বল হাতে ২৫.৬৮ গড়ে ৩৮টি উইকেটও নিয়েছেন। জোরে বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ার কারণেই হার্দিক এই দলে জায়গা পেয়েছেন। শুধু তাই নয় ফিল্ডার হিসেবেও হার্দিক দুর্দান্ত। যা তাকে ভবিষ্যতের তারকা খেলোয়াড় করে তুলবে।
৮. রবিচন্দ্রন অশ্বিন
স্পিন বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিতে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেই দেখা যায়। তার রেকর্ডও তাকে রবীন্দ্র জাদেজার চেয়ে এগিয়ে রাখে। যে কারণে অশ্বিন এই দলে জায়গা পেয়েছেন। রান আটকাতে সফল হওয়ার সঙ্গেই অশ্বিন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিতে জানেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে টি-২০ ফর্ম্যাটে ৪৬টি ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে তিনি ২২.৯৪ গড়ে ৫২টি উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে তার ইকোনমি রেট থেকেছে ৬.৯৮। যা ভালো বলা যেতে পারে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্ট্রাইকরেটও ১৯.৭৩। অশ্বিন সেই খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন যিনি দরকারে ব্যাটিংও করতে পারেন। যেখানে তিনি বড়ো শটও খেলতে পারেন। বর্তমানে অশ্বিন ভারতীয় দলে নেই তবে তিনি ফিরে আসার প্রয়াস অবশ্যই করছেন। অশ্বিন এই ফর্ম্যাটে ৫০টি উইকেট নেওয়া প্রথম ভারতীয় বোলার।
৯. ভুবনেশ্বর কুমার
জোরে বোলিং বিভাগে ভুবনেশ্বর কুমারের নামও আপনা আপনিই এসে যায়। ভুবি নিজেকে এই ফর্ম্যাটে বেশ কয়েকবার প্রমানও করেছেন। ভুবনেশ্বর শুরুর ওভারে আর সেই সঙ্গে শেষের ওভারেরও সফলতম বোলার। যা পরিস্কার গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে। ভুবনেশ্বর কুমার এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে ৪৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে তিনি ২৬.৫৪ গড়ে ৪১টি উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে তার স্ট্রাইকরেট থেকেছে ৭.০৫। ভুবির ইকোনমি রেট এই ফর্ম্যাটে ২২.৫৯ থেকেছে।
১০. যজুবেন্দ্র চহেল
রিস্ট স্পিনার যজুবেন্দ্র চহেলও দুর্দান্ত বোলিং করে নিজেকে এই দলে শামিল করে ফেলেছেন। চহেল মাঝের ওভারে দারুণভাবে উইকেট নেন। যে কারণে তার ইমেজ একজন ম্যান উইনার বোলার হিসেবে তৈরি হয়েছে। যা তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রাখতেও সফল থেকেছেন। যজুবেন্দ্র চহেল এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে ৪২টি টি-২০ ম্যাচ খেলে ২৪.৩৫ গড়ে ৫৫টি উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে তার ইকোনমি রেট ৮.১৯ এর থেকেছে। অন্যদিকে চহেল ১৭.৮ স্ট্রাইকরেটেও উইকেট নিয়েছেন। চহেল এখন ভারতীয় দলের অংশ। এই খেলোয়াড়ের কাছে ব্যাটসম্যানদের নিজের ফাঁদে ফেলার ক্ষময়া রয়েছে। যে কারণেই তিনি এতটা সফল বোলারও থেকেছে। চহেল ভবিষ্যতে আরো কিছু ম্যাচ নিজের বোলিংয়ে জেতানোর ক্ষমতা রাখেন।
১১. জসপ্রীত বুমরাহ
এই ফর্ম্যাটে এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে সফল বোলার জসপ্রীত বুমরাহই থেকেছেন। টি-২০ ফর্ম্যাটে এই খেলোয়াড়ের কোনো জুড়ি নেই। তার ক্ষমতার আন্দাজ তার রেকর্ড দেখেই করা যেতে পারে। যা ভীষণই ভালো। জসপ্রীত বুমরাহ এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে টি-২০ ফর্ম্যাটে ৪৯টি ম্যাচ খেলে ২০.২৫ গড়ে ৫৯টি উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে তার ইকোনমি রেট থেকেছে ৬.৬৭। যা ভীষণই ভালো। অন্যদিকে তার স্ট্রাইকরেট থেকেছে ১৮.২২। বুমরাহ শুরুর ওভারের সঙ্গেই শেষের ওভারেরও সফলতম বোলার। যা পরিস্কার গত কিছু বছরে দেখাও গিয়েছে। ইয়র্কার কিং হিসেবেও তিনি নিজের পরিচিতি গড়েছেন, যে কারণে এই এই আক্রামণাত্মক বোলার সবচেয়ে বড়ো ম্যাচ উইনারও।