২১ নভেম্ববর টি-২০ ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের পূর্নাঙ্গ সিরিজ। সিরিজে তিনটি টি-২০, চারটি টেস্ট এবং তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে দুই দল।
অজিদের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে ইতোমধ্যে ঘাম ঝরানো শেষ হয়েছে টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটারদের। কথার লড়াইয়েও পিছিয়ে নেই কোনো দল। অন্যদিকে মাঠের ক্রিকেটে ব্যাট বলের লড়াইয়ের পাশাপাশি দুই দলই যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে পটু তা ক্রিকেটভক্তরা জানেন খুব স্পষ্টভাবেই।
এবার দেখে নেওয়া যাক ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের তেমনই পাঁচটি বিতর্কিত কাণ্ড
১. ‘মাংকি কলঙ্ক’
২০০৮ সালে সিডনি টেস্টে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে বিতর্কিত ‘মাংকি কাণ্ড’ ঘটে। অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সিমন্স এবং টিম ইন্ডিয়ার অফ স্পিনার হরভজন সিংয়ের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। উক্ত টেস্টে মাঠে থাকাকালীন হরভজন সিং সিমন্সকে ‘মাংকি’ অর্থাৎ বানর বলে টিপ্পুনি কাটেন বলে অভিযোগ করেন অজি ক্রিকেটার। ফলে আইসিসির আইন অনুযায়ী বর্ণবাদের অভিযোগে লেভেল ৩ এর পর্যায়ে পড়লে হরভজনকে তিন টেস্টের জন্য নিষিদ্ধ এবং ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয়।
পরবর্তিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের হস্তক্ষেপে দলের আরেক ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের পর্যবেক্ষনে রাখার মাধ্যমে শাস্তির হাত থেকে মুক্তি পায় স্পিনার হরভজন। এই ঘটনাটি তৎকালীন ক্রিকেট পাড়ার আলোচিত বিষয় ছিল বেশ কিছুদিন।
২. ‘ইংরেজিতে বলো’
২০১৪-১৫ সালে অজিদের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে মাঠে রোহিত শর্মাকে উদ্দেশ্য করে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন অজি তারকা ডেভিড ওয়ার্নার। ম্যাচ চলাকালে রোহিত শর্মা ব্যাটিং করার সময় স্ট্রোক খেললে বলটি গড়িয়ে যায় ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। ওয়ার্নার স্ট্যাম্পের উদ্দেশ্যে বল ছুঁড়লে ব্যাকআপ প্লেয়ার না থাকায় রোহিত শর্মা সুরেশ রায়নাকে রান নেয়ার জন্য নিজ দেশের ভাষায় ইঙ্গিত দিলে দুই ব্যাটসম্যান সফলভাবে প্রান্ত বদল করেন।
রোহিত শর্মার এই ইঙ্গিত বা বার্তা হিন্দি ভাষায় বলেছিলেন তিনি আর এতেই মেজার হারান ওয়ার্নার। ওয়ার্নার রোহিত শর্মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্পিক ইংলিশ’ অর্থাৎ ‘ইংরেজিতে বলো’। ওয়ার্নারের এই আচরণ সহজভাবে নেননি মাঠে উপস্থিত আম্পায়াররা। ফলে ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয় ওয়ার্নারকে।
৩. কোহলির ‘চিট চ্যাঁট’
২০১৬ সালে অজিদের বিপক্ষে অ্যাডিলেইডে টি-২০ ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ভারত ব্যাট করে লক্ষ্য ছুঁড়ে দিলে তাড়া করতে নেমে স্বস্তিদায়ক শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে লম্বা শট খেলার পর স্টিভেন স্মিথের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে কোনো বাকবিতণ্ডায় না জড়িয়েই অবস্থান থেকে সরে আসেন কোহলি।
তবে এর অল্প কিছুক্ষণ পরেই স্মিথ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটলে স্মিথকে উদ্দেশ্য করে কোহলি ‘চিট চ্যাট’ সঙ্কেত দেন। তবে এতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি অজি এই ক্রিকেটার। এর জন্য কোনো শাস্তিও পেতে হয়নি ক্যাপ্টেন কোহলিকে।
৪. গম্ভীরের ধাক্কা
২০০৮ সালে ভারতের সাথে সিরিজ খেলতে অজি দল পা রাখে ভারতের মাটিতে। এবারের ঘটনাটি ঘটে অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন এবং গৌতম গম্ভীরের মধ্যে।
অজি অলরাউন্ডার ওয়াটসনের বলে গৌতম গম্ভীর ব্যাট চালিয়ে দৌড়ে এক রান নেয়ার পর দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড়াতে গেলে ওয়াটসনের গায়ে গম্ভীরের কনুইয়ের ধাক্কা লাগে। যদিও গম্ভীর ঘটনাটিকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন কিন্তু আইসিসি সাজা স্বরূপ গম্ভীরের উপর এক ম্যাচের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
৫. স্ল্যাটার-শচীন-রাহুল বিতর্ক
২০০১ সালে ‘বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে আরো একটি বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়ান ভারত-অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটাররা। এবারের ঘটনাটি ঘটে অজি ক্রিকেটার মাইকেল স্ল্যাটার-রাহুল দ্রাবির-শচীন তেন্ডুলকরের মধ্যে। দ্রাবিড় ব্যাট করার সময় স্ল্যাটার ক্যাচ নিলে আম্পায়ার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নেন। আর ফলাফল হিসেবে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ এর হিসেবে সিদ্ধান্ত যায় ব্যাটসম্যানের পক্ষে। আর এতেই মনঃক্ষুণ্ণ হয় স্ল্যাটারের। ফলে স্ল্যাটার প্রথমে রাহুল দ্রাবিড়ের সামনে তেড়ে যান এবং পরবর্তিতে নন স্ট্রাইকে থাকা শচীন গিয়ে কথা বললে পরিস্থিতি স্বভাবিক হয়ে আসে। এই ঘটনার জন্য স্ল্যাটার অবশ্য পরে ক্ষমা চেয়েছেন।