নিউজিল্য়ান্ডের কাছে রাজকোটে দ্বিতীয় টি-২০ ম্য়াচে ভারত হারার পর প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দলে থেকে ছেঁটে ফেলার ডাক দিয়েছেন তিন প্রাক্তন ক্রিকেটার। এর মধ্য়ে দু‘জন কোনওদিন টি-২০ ক্রিকেট খেলেননি। আর একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার হলেও, টি-২০ ক্রিকেটের উপযোগী কোনওদিনই ছিলেন। ধোনি হটাও ডাক দেওয়া তিন মহারথী হলেন আকাশ চোপড়া, অজিত আগরকর এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ। প্রথমজন জাতীয় দলে কবে এসেছেন, কবে গিয়েছেন, আর কবেই বা অবসর নিয়েছেন, কেউই জানে না। দ্বিতীয়জনের একসময় জাতীয় দলের ঝড়ের মত উত্থান ঘটেছিল, তারপর আচমকাই দল থেকে ছিটকে যান। তারপর নিঃশব্দেই অবসর। আর তৃতীয় জন ভারতীয় ক্রিকেটে লেজেন্ডারি ব্য়াটসম্য়ান হলেও, ধোনি জমানাতেই অবসর।
এই তিন প্রাক্তন ক্রিকেটারের বক্তব্য় হল, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের যোগ্য়তা প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল প্রাক্তন অধিনায়কের কাছে, কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারেননি। ১৯৭ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের ইনিংসের দশম ওভারে ধোনি যখন বিরাটের সঙ্গে যোগ দেন সেই সময় জয়ের জন্য় ওভার পিছু গড়ে দশ-বারো দরকার ছিল। ব্য়াটিং সহায়ক পিচে কিউয়ি পেসার ট্রেন্ট বোল্টের দাপটে ভারতীয় টপ অর্ডার ধসে যাওয়ার পর ধোনি ঠিকমতো খেলতে না পারায় ফর্মে থাকা বিরাটের ওপর চাপ পড়ে গিয়েছিল। আর সেই কারণেই ভারতকে চল্লিশ রানে হারতে হয়েছে। তিন প্রাক্তনের দাবি, ধোনি বড় শট খেলতে ব্য়র্থ হওয়ায় বিরাট সতেরোতম ওভারে ৬৫ রানে আউট হয়ে যান। শেষের দিকে ধোনি কয়েকটা বড় শট খেললেও তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
ধোনিকে কেউ মিস করবে না
জাতীয় দলে খেলা প্রাক্তন অলরাউন্ডার অজিত আগরকরের দাবি, ধোনির এবার ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া উচিত। তরুণদের জন্য় সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ছোটো ফরম্য়াটের জায়গাটা ছেড়ে দিতে হবে। আগরকর বলছেন, ”টি-২০ ক্রিকেটে বিকল্পের দিকে নজর দিতে হবে। ওয়ান-ডে ক্রিকেটে ধোনি যে ভূমিকা নিচ্ছে, তাতে ঠিক আছে। ও যখন অধিনায়ক ছিল, তখন ঠিক ছিল। কিন্তু, একজন ব্য়াটসম্য়ান হিসেবে ধোনির অভাব কি কেউ বোধ করবে? আমার তো মনে হয় না, কেউ ওর অভাব বোধ করবে। টি-২০ ক্রিকেটে পরিবর্তন আনা খুব সহজ। এমএস ধোনিকে বাদ দিলেও ভারতীয় দলে এখন অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
”শুধুমাত্র এই ইনিংসটার কথা বলছি না। ও ইদানিং এরমভাবেই ব্য়াট করছে। টি-২০ ক্রিকেটে সামেনের দিকে তাকাতে হয়। কখনও কখনও তরুণ ক্রিকেটাররাই উতরে দেবে। ওই স্কোর তাড়া করা কঠিন ছিল। এমএস যদি শুরু থেকে চালিয়ে খেলত, তাহলে একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু, সমস্য়া এটাই। ও এখন থিতু হতে সময় নিচ্ছে। কিন্তু, টি-২০ ক্রিকেটে, হাতে সময় থাকে না।”
ধোনিকে ব্য়াটিং অর্ডারে ওপরে তুলে আনার প্রশ্নে মুম্বইকরের পাল্টা প্রশ্ন, ”টি-২০ ক্রিকেটে ক‘জনের সামনে দশ ওভার ব্য়াট করার সুযোগ আসে? একজন ব্য়াটসম্য়ানের জন্য় ওটা অনেক সময়।”
আগরকের বক্তব্য়, ধোনি একসময় সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভাল ম্য়াচ ফিনিশার ছিলেন। কিন্তু, অতীতের দিকে তাকিয়ে ধোনিকে খেলিয়ে যাওয়ায়, ভারতীয় দলকে তার খেসারত চোকাতে হচ্ছে।
২০২০ টি-২০ বিশ্বকাপকে লক্ষ্য় করতে হবে
ভারতের প্রাক্তন ওপেনার ও বর্তমানে ধারা ভাষ্য়কারের কাজ করা আকাশ চোপড়ার বক্তব্য়, ছত্রিশ বছরের ধোনি ২০১৯ বিশ্বকাপের পর দলে থাকবেন না। ফলে ২০২০ টি-২০ বিশ্বকাপের দিকে নজর রাখা উচিত এখন থেকে। এরপর রাজকোটে ধোনির ইনিংসের সমালোচনা করে আকাশ বলেন, ”সবাই বলছে দেখছি, ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধোনি খেলবে। আমরা কি মাথায় রেখেছি, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের এক বছর পর ২০২০‘তে টি-২০ বিশ্বকাপ রয়েছে? ধোনি তখন যদি না থাকে? সে সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অন্য় কাউকে সুযোগ কেন দেওয়া হবে না? ধোনি যতদিন পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছে, ততদিন অন্য় কাউকে টি-২০ ক্রিকেটে তৈরি করা হোক।”
”এদিন (চার নভেম্বর) ও ভালো খেলেনি। স্ট্রাইক রোটেট করতেই পারছিল না। ওভার পিছু ১২-১৩ রান দরকার হলে সিঙ্গেল নিয়ে কিছু হয় না। এমনকি বিরাট যদি একাও বাউন্ডারি মেরে যায়, সেটাও যথেষ্ট নয়। ফলে, দুই প্রান্তেই স্ট্রাইক রোটেট হওয়া চাই অনবরত। টি-২০ ক্রিকেটে ধোনি বড় শট নেওয়ার পরিবর্তে সিঙ্গেল নিতে যাওয়াতেই বিরাট চাপে পড়ে গিয়েছিল। আর সে জন্য়ই আউট হয়ে যায়।”
তরুণ ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া হোক
ভারতীয় ক্রিকেটের ভেরি ভেরি স্পেশাল ম্য়ান লক্ষ্মণ বলেছেন, ধোনির উচিত টি-২০ ফরম্য়াটে কোনও তরুণ উইকেটকিপার-ব্য়াটসম্য়ানের জন্য় জায়গাটা ছেড়ে দেওয়া।
”টি-২০ ক্রিকেটে ধোনিকে চার নম্বরে নামাতে হবে। থিতু হতে, কাজ সারতে ওর আরও সময় দরকার এখন। কিন্তু, এদিন (৪ নভেম্বর) উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যায়। বিরাট যখন খেলছিল, তখন ওকে স্ট্রাইক দেওয়া উচিত ছিল বেশি করে। কারণ, কোহলির স্ট্রাইক রেট ১৬০ ছিল, আর ধোনির ৮০। অত বড় রান তাড়া করার সময় ওটা উপযুক্ত নয়।”
”আমি এখনও মনে করি, এমএস ধোনির জন্য় এটাই সেরা সময় টি-২০ ক্রিকেটে কোনও তরুণ উইকেটকিপার-ব্য়াটসম্য়ানকে জায়গাটা ছেড়ে দেওয়া। একজন তরুণ ক্রিকেটার তবেই তৈরি হতে পারবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য় আত্মবিশ্বাস পাবে। ধোনি অবশ্য়ই ৫০ ওভারের ফরম্য়াটে অপরিহার্য। ”