মনে আছে ছবিটা? দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে নিজের মূর্তির সঙ্গে ফোন হাতে দাদা সেলফি নিচ্ছেন। এই ক-দিন আগেকার ঘটনা। খবর সমেত ছবিটা খবরের কাগজে ষোলোই জুলাই বেরনোর আগেই, পনেরো তারিখ সোশ্য়াল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছিল। ফেসবুক, ট্য়ুইটারে ছবির ক্য়াপশনও ছিল – সেলফি উইথ মি। আট ফুটের ওই ফাইবারের মূর্তিটির কি হল, চারিদিকে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। কোনও কোনও মিডিয়াতে খবর রটেছে, জেলা প্রশাসনের নেতারা দাদার মূর্তিটা স্থায়ীভাবে স্টেডিয়ামের প্রধান গেটের সামনে বসাতে না দেওয়ায়, তা নাকি গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে ফেলে রেখেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তাতে আরও ছিছি রটায়, সংস্থার সচিব জানান, খবরটা একেবারে ভুল। মূর্তিটা আসলে তাঁর কার্যালয়েই স্বযত্নে রেখে দিয়েছেন তিনি। প্রশাসন থেকে অনুমতি মিললেই তা নির্দিষ্ট জায়গা মতো বসাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
সৌরভের মতো একজন ক্রীড়া ব্য়ক্তিত্ব। ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়কের তালিকায় যখন তাঁর নামটা জ্বলজ্বল করে, তখন গর্বে বাঙালির বুকটা ভরে যায়। সেই মানুষটাকেই তাঁর নিজের মূর্তি উন্মোচন করতে ডাকা হল জেলার ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে। আর এসে দেখলেন, জেলা প্রশাসনে যেহেতু রাজ্য়ের শাসক দল ক্ষমতাসীন, তাই অনুমতি জোগাড় করেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়। কারণ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার বড়কর্তা গৌতম গোস্বামী আরএসপি করেন। সৌরভ গাঙ্গুলিকে ফোন করে অনুষ্ঠান বাতিল করারও সময় পাওয়া যায়নি। ফলে, দাদাকে দিয়ে স্টেডিয়ামের মধ্য়ে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়েই ফাইবারের ওই মূর্তিটা উন্মোচন করানো হয়। বলতে গেলে ঘরে ডেকে এনে যেচে অপমান করা। যাওয়ার সময় দাদা নিজেই বলে যান, অনুমতি না পাওয়া গেলে, মূর্তিটা যেন তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি নিজেই বাড়িতেই বসিয়ে নেবেন মূর্তিটা।
শ্রেফ রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে দাদাকে এভাবে অপমান করায় ঘরে-বাইরে বালুরঘাটের মানুষের মুখ পুড়েছে। জেলার মানুষের সম্মানের কথায় মাথা রেখে বালুরঘাট পৌরসভা এখন প্রস্তাব পাঠিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি পৌরসভাকে মূর্তিটা দিয়ে দেয়, তাহলে প্রাপ্য় সম্মান দিয়ে মণীষীদের মূর্তির মতো সৌরভের মূর্তিটাও বালুরঘাটের ব্য়স্ততম রাস্তার মাঝে বেদী করে বসানো হবে। গৌতমবাবুর কাছে বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্য়ান রাজেন শীল এই প্রস্তাব রেখেছেন।

খবরের সত্য়তা স্বীকার করে নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব গৌতম গোস্বামী বলেন, “হ্য়াঁ, পৌরসভা আমাদের কাছে আবেদন করেছে সৌরভের মূর্তিটা ওদের দেওয়ার জন্য়। দেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করা বাংলার শেষ প্রতিনিধির সম্মান রাখতে ও বালুরঘাটের মানুষের মুখ বাঁচাতে বালুরঘাট পৌরসভা এগিয়ে এসেছে, এটা অনেক বড় ব্য়াপার। পুরসভা প্রস্তাব দিয়েছে ওরা মূর্তিটা যোগ্য় সম্মান দিয়ে বালুরঘাটের কোনও ব্য়স্ততম রাস্তার মাঝে বসাবে। কিন্তু, আমরা চাইছি, মূর্তিটা স্টেডিয়াম চত্ত্বরেই বসুক। শেষ পর্যন্ত যদি অনুমতি না পাওয়া যায়, তাহলে মূর্তিটা পুরসভার হাতেই তুলে দেওয়া হবে।”