প্রত্যেক উইকেট নেওয়ার পর মিলত ১০ টাকা, ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর রাতভর কেঁদেছিলেন এই খেলোয়াড়

নিজের দলের হয়ে উইকেট নিতে প্রত্যেক বোলারেরই ইচ্ছে থাকে। পাপু রায় এক এমন বোলার যার জন্য উইকেট নেওয়া শখ নয় বরং অসহায়ত্ব ছিল। ২ জুন থেকে এই খেলোয়াড় নিজের খাবার জোগাড় করার জন্য ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন। পাপু রায়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনে তিনি দেওধর ট্রফিতে জায়গা পেয়েছেন। ম্যাচ চলাকালীন স্পিনার পাপুর বোলিং দেখে এটা ঠিক হত তিনি খাবার পাবেন কি না। তো আসুন জেনে নিই এই খেলোয়াড়ের ব্যাপারে।
প্রত্যেক উইকেট নেওয়ার পর মিলত ১০ টাকা, ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর রাতভর কেঁদেছিলেন এই খেলোয়াড় 1
দেওধর ট্রফির জন্য ভারতীয় দলে সিলেকশন

২৩ বছর বয়েসী পাপু রায়কে অজিঙ্ক রাহানের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সি দলে দেওধর ট্রফির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এই বোলারের জীবন কাহিনী ভীষণই দুঃখজনক। প্রসঙ্গত পাপুর বাবা-মা ছেলেবেলাতেই মারা গিয়েছিলেন। এই বোলারের বিজয় হাজারে ট্রফির দুরন্ত প্রদর্শন দেখে তাকে দেওধর ট্রফির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। পাপু বিগত দিনগুলিকে স্মরণ করেছেন যখন উইকেট নেওয়ার মানে ছিল দুপুর আর রাতে ভরপেট খাবার পাওয়া।
প্রত্যেক উইকেট নেওয়ার পর মিলত ১০ টাকা, ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর রাতভর কেঁদেছিলেন এই খেলোয়াড় 2
অভাবে কেটেছে শৈশব

পাপু নিজের কাটানো মুশকিল জীবনকে স্মরণ করে নিউজ এজেন্সিকে কথাবার্তা চালানোকালীন জানিয়েছেন,

“দাদারা বল করার জন্য ডাকত, বলত যে যদি বল করিস তাহলে খাবার পাবি, আর প্রত্যেক উইকেট পিছু ১০টাকা করে দিত”।

পাপুর বাবা-মা বিহারের বাসিন্দা ছিলেন। তারা পয়সা কামানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। পাপুর বাবা জমাদার রায় একজন ট্রাক ড্রাইভার ছিলেন। তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আমার পরিশ্রমের ফল এখন পেলাম

পাপু আগে কথা বলতে গিয়ে এটাও বলেছেন,

“ আফসোস আজ যদি আমার বাবা মা জীবিত হত আর আমাকে এমন খেলতে দেখত। কাল আমি পুরো রাত শুতে পারিনি। আমি রাতভর কেঁদেছি। আমি গত কয়েক বছরে প্রচুর পরিশ্রম করেছি আজ গিয়ে আমি তার ফল পেয়েছি”।

পাপুর বাবা-মায়ের মারা যাওয়ার পর তার কাকা তার দেখশুনা করেন। কিছুকাল পরে তার কাকাও মারা যান। পাপুর জন্য এক সময়ের খাবার জোগাড় করাও ভীষণই মুশকিল ছিল। এখন ক্রিকেট থেকেও তিনি নতুন জীবনদান পেয়েছেন।
প্রত্যেক উইকেট নেওয়ার পর মিলত ১০ টাকা, ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর রাতভর কেঁদেছিলেন এই খেলোয়াড় 3
২০১৫য় ওড়িশা অনুর্ধ্ব ১৫য় পেয়েছিলেন জায়গা

পাপু জাজপুরে থাকতে চলে আসে। পাপু জানিয়েছেন, “ আমার বন্ধু আসিফ ইকবাল খান আর মুজাকির আলি খান, যার কারণে আমি এখানে খাওয়া আর থাকার ছাদ পাই। যারপর থেকেই ওড়িশা আমার বাড়ি হয়ে যায়”।
২০১৫তে উড়িশ্যা অনুর্ধ্ব ১৫ দলে পাপু জায়গা পেয়েছিলেন। তিন বছর পর তিনি সিনিয়র দলে পৌঁছন। যেখানে এই খেলোয়াড় লিস্ট এ’র আটটি ম্যাচে ১৪টি উইকেট নিয়েছেন।

পাপু আগে কথা বলতে গিয়ে জানান,

“ আশা রয়েছে আমি নিশ্চিত সুযোগ পাব। আর সেই সময় আমি নিজের শ্রেষ্ঠ প্রদর্শন করব। এতে আমি অনেক কিছু নতুন শিখতে পারব”।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *