বছরের পর বছর ধরে বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের সংজ্ঞা।দশকের পর দশক জুড়ে নিত্যনতুন বদল আমরা লক্ষ্য করেছি বাইশ গজের এই মহাড়নে।সময়ের সাথে বদলেছে নানান চাহিদা এই খেলা সম্পর্কিত।এমনই একটা বিষয় উইকেট- কিপার।এই খেলার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।একজন উইকেট- কিপারে’র পাশাপাশি ভালো একজন ব্যাটসম্যান হওয়াটা সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার’কে অন্যান্য ক্রিকেটারদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে।কারণ দলকে তারা অধিক ভারসাম্য এনে দিতে পারে।এমনকি তাদের কেরিয়ার’ও হয় দীর্ঘমেয়াদী।এমন অনেক উদাহরণ আমরা এর আগে দেখেছি দশকের পর দশক জুড়ে।আজ ক্রিকেটের ইতিহাসে ” সেরা দশ ” উইকেট- কিপার ব্যাটসম্যান’ কে নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে।
১.ইয়ান হিলি ( অস্ট্রেলিয়া )
নিজের সময়কার সবচেয়ে সেরা উইকেট কিপারের একজন ইয়ান হিলি ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে’ও যথেষ্ট নজর কেড়েছেন।টেস্টে তার রান সংখ্যা ৪০০০, এছাড়া নব্বইয়ের দশকে একাধিক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ক্ষেত্রে পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।গ্লাভস হাতে তার স্কিলের প্রশংসা গোটা বিশ্ব জুড়ে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ১১৯ টি টেস্ট ম্যাচ এবং ১৬৮ টি একদিবসীয় ম্যাচ।মোট রান সংখ্যা ৬০০০, আছে চারটি সেন্চুরী ( সবকটি টেস্টে )।একসময় অজি দলে হিলি’র ব্যাটিং এনে দিয়েছিলো এক দুরন্ত ভারসাম্য, টেলএন্ডার’দের সাথে তার যুগলবন্দী ছিলো ঋতিমতো প্রশংসনীয় একটি বিষয়।
২. কুমার সাঙ্গাকারা ( শ্রীলঙ্কা )
ক্রিকেটের কিংবদন্তী’দের তালিকায় অন্যতম একজন হলেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা।নিপাট ভদ্র এবং শান্ত মস্তিষ্কের এই প্রাক্তন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার’কে বিশ্ব মনে রাখবে আজীবন।নিজের ক্রিকেটীয় জীবনে একাধিক কঠিন মুহুর্ত থেকে নিজের দেশকে বের করে এনেছেন ।
দেশের হয়ে তিনি খেলেছিলেন ৫৯৪ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।প্রতিক্ষেত্রেই ব্যাটিং এবং উইকেট কিপিং’এর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে তার রান সংখ্যা ১৭,০০০ ‘ও বেশি।আছে ৬৩ টি আন্তর্জাতিক শতরান।
উইকেটে’র পিছনে’ও সমান কার্যকর তিনি।ওয়ানডে ক্রিকেটে আছে ৫০০ টি ডিসমিসাল।বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশী শিকারের রেকর্ডটি তারই দখলে, সংখ্যা ৫৪ ।
৩. রডনি মার্শ ( অস্ট্রেলিয়া )
ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা উইকেট কিপার – ব্যাটসম্যান বলা হয় রড মার্শ’কে।তার এবং ডেনিস লিলি’র জুটি যুগলবন্দী বহুল চর্চিত।যার মাধ্যমে সত্তর এবং আশির দশকে একাধিক ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল।
দেশের হয়ে যথাক্রমে ৯২ টি টেস্ট এবং ৯৬ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন মার্শ।তার মোট রানসংখ্যা ৪৫০০।টেস্টে তার শিকারের সংখ্যা ৩৫৫ ,যেখানে ওয়ানডে’তে ১২৪ টি।
৪. এ্যন্ডি ফ্লাওয়ার ( জিম্বাবোয়ে )
জিম্বাবোয়ের ক্রিকেটের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সেরা একজন ব্যাটসম্যান হলেন এ্যন্ডি ফ্লাওয়ার।তার ক্রিকেটীয় দিনে তার ব্যাটিং নির্ভরতা এনে দিয়েছে জিম্বাবোয়ে ক্রিকেট দলকে।
প্রাক্তন জিম্বাবোয়ের এই উইকেট- কিপার ব্যাটসম্যান একদিবসীয় ম্যাচে ১৪১ টি ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি করেছেন ৩২ টি স্টাম্পিং ।একদিবসীয় ক্রিকেটে তার রানসংখ্যা ৬৮৭৬ ( গড় – ৩৫.৩৪) , অন্যদিকে ৬৩ টি টেস্ট ম্যাচে তিনি করেছেন ৪৭৯৪ রান, ৫১.৫৫ গড়ে।
ক্রিকেটার – পরবর্তী জীবনে তিনি ইংল্যান্ড দলের ” ডিরেক্টর ” এর দায়িত্ব সামলেছেন।তার থাকাকালীন ২০১০ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।এছাড়াও এ্যসেজ জেতার পাশাপাশি টেস্ট দলের ক্রমতালিকায় উঠে আসে ১ নম্বর স্থানে।
৫.ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ( নিউজিল্যান্ড )
পৃথিবীর সেরা দশ বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানের প্রসঙ্গ তুললে অবধারিত ভাবে নাম আসবে প্রাক্তন কিউয়ি তারকা উইকেট কিপার- ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম।ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটে’র পিছনে’ও তার সমান দক্ষতা লক্ষ্য করা গেছে।
ম্যাককুলাম’এর কাছে ক্রিকেট মানেই হয়তোবা ব্যাকারনহীন।এহেন একজন তারকা উইকেট কিপার – ব্যাটসম্যানের টেস্ট ডিসমিসাল’এর সংখ্যা ২০১, যেখানে ওয়ানডে’র ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ২৭৩।২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়া নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে ৩৫০ এর বেশী ম্যাচ খেলেছেন তিনি, তার রানসংখ্যা ১২,০০০ এর ও বেশি।
৬.এ্যডাম গিলক্রিস্ট ( অস্ট্রেলিয়া )
একটু আগেই আলোচনা করা হয়েছিল ইয়ান হেলী এবং অস্ট্রেলিয়া দলে তার গুরুত্বের বিষয়ে।এবার আলোচনা’র বিষয়ে তার উত্তর এ্যডাম গিলক্রিস্ট।হিলি’র অবসরের পর অসি দলে আগমন গিলি’র।স্বাভাবিক ভাবেই তার উপর প্রত্যাশার পারদ ছিলো তুঙ্গে।এমন একটা সময় নিজেকে দারুণ ভাবে তৎকালীন অজি দলের সাথে মানিয়ে নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান উইকেট কিপার – ব্যাটসম্যান।
বড়ো ম্যাচে বড়ো ইনিংস খেলার জন্য ঋতিমতো নামডাক ছিলো গিলক্রিস্ট’এর।একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সব টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিলো মুখ্য।৯৬ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, এক্ষেত্রে তার রানসংখ্যা ৫৫৭০, অন্যদিকে একদিবসীয় ম্যাচের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ২৮৭ টি ম্যাচে ৯৬১৯।সবধরনের ফর্ম্যাট মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে গিলির নেওয়া ক্যাচের সংখ্যা ৮১৩ টি, স্ট্যাম্প করেছে ৮২ টি।
৭. মার্ক বাউচার ( সাউথ আফ্রিকা )
সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের বর্তমান কোচ হলেন মার্ক বাউচার।যিনি নিজের ক্রিকেটীয় দিনে তার দেশক বাড়তি নির্ভরতা দিয়েছেন উইকেটকিপার এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে।
ইংল্যান্ডের মাঠে একটি প্রাকটিস ম্যাচে চোখে চোট লাগার দরুণ ক্রিকেট কে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিদায় জানাতে হয় এই তারকা সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটারের।অবসর নেওয়াকালীন তার নামে পাশে ডিসমিসাল’এর সংখ্যা ছিলো ৯৯৯, সবধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে তার করা রানসংখ্যা দশ হাজারেরও বেশী।
৮. এম. এস ধোনি
এই তালিকায় একমাত্র সক্রিয় ক্রিকেটার হলেন ভারতের টি টোয়েন্টি এবং বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক এম . এস ধোনি।যদিও ২০১৯ এ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিকেট বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে হারের পর থেকে ক্রিকেট মাঠে দেখা যায়নি মাহি’কে।
ভারতের হয়ে সবধরনের ফর্ম্যাট মিলিয়ে ৫০০’ এর উপরে ম্যাচ খেলেছিলেন ধোনি।রান সংখ্যা ১৫,০০০ এর বেশী।এছাড়াও তার ডিসমিসাল’এর ৮০০ ‘এর অধিক।
৯. জেফ্রে দুঁজোন ( ওয়েস্ট ইন্ডিজ )
আশির দশকে তারকা খচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নাম বিশ্ববন্দিত।একটা সময় ক্রিকেটের ত্রাসসৃষ্টি কারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের একজন সদস্য জেফ্রে দুঁজোন।যার টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে শিকারের সংখ্যা ২৫০’ও বেশি।নিঃসন্দেহে ক্রিকেটের ইতিহাসে একজন অন্যতম সেরা উইকেট কিপার তিনি।
উইকেট কিপার ছাড়া তার ব্যাটিং’ও ঋতিমতো প্রশংসনীয়।করেছেন ৫০০০ রান।১৯৮৯ সালে যে পাঁচজন ক্রিকেটার ” উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার ” এর সন্মান পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন তিনি।
১০.রমেশ কালুবিথানা ( শ্রীলঙ্কা )
১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলঙ্কার দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রমেশ কালুবিথানা।”ওপেনার – উইকেটকিপার ” বিষয়টি তার হাত ধরে ছুঁয়েছিলো এক নতুন দিগন্ত।
ব্যাটিংয়ে তার এবং সনৎ জয়সূর্য’র যুগলবন্দী নব্বই এবং নতুন শতকের প্রথম দশকে ঋতিমতো চর্চার বিষয় ছিলো।২০০ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি , করেছেন ৫৫০০ রান।টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে তার করা ডিসমিসাল’এর সংখ্যা ৩০০।