ভারত-বাংলাদেশ ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে পর্দা নামলো এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন ভারত অন্যদিকে ২০১২, ২০১৬ আসরের পর এশিয়া কাপ ২০১৮ আসরে এসেও ফাইনালে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপের এই আসরে হংকং নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে অন্যদিকে ধীরে ধীরে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে থাকা আফগানিস্তান বিদায় করতে সক্ষম হয়েছে শ্রীলঙ্কার মত শক্তিশালী দলকে। তাছাড়া পাকিস্তান হেরে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশের কাছে। আর সব সমীকরণ শেষে সপ্তমবারের মত এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে টিম ইন্ডিয়া।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এশিয়া কাপের সেরা একাদশ।
১. ওপেনার- শিখর ধবন ও রোহিত শর্মা

একদিনের ক্রিকেটে যদি বর্তমান সময়ে টিম ইন্ডিয়ার সেরা ওপেনিং জুটি বিচার করতে হয়ে তাহলে সর্বাধিক ভোট পাবে রোহিত-ধবন জুটি তা প্রায় নিশ্চিত। ইংল্যান্ড সফর থেকে যেন এই জুটির কেমেস্ট্রি আরো বেশি ঝাঁঝালো রূপ ধারণ করেছে।
এশিয়া কাপের আসরে ৫ ম্যাচে ওপেনিং করে ধবন সংগ্রহ করেছেন ৩৪২ রান। অন্যদিকে আসরের সেরা রান সংগ্রাহক হিসেবে ধবনের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গী রোহিত করেছেন ৩১৭ রান। তাই এই জুটিই যে এশিয়া কাপের সেরা ওপেনিং জুটি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২. মিডল অর্ডার- মোহাম্মদ শেহজাদ, হাসমতউল্লাহ শাহিদি, মুশফিকুর রহিম
ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে বোলারদের তুলোধোনো করে আফগান উইকেতরক্ষক-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সেঞ্চুরির উপর ভর করে পুরো টুর্নামেন্টে ৫০ এর বেশি গড়ে করেছেন ২৬৮ রান। যা তিন নাম্বার পজিশনে জায়গা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
মিডল অর্ডারে আরেক আফগান হাশমতউল্লাহ শাহিদির নাম দেখে অবাক হবেন অনেকেই। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংস এশিয়া কাপের অন্যতম সেরা একটি। পাশাপাশি তাঁর সর্বমোট স্কোর তাঁর আরেক স্বদেশি শাহজাদ থেকে ৫ রান কম ২৬৩। তাই মিডল অর্ডারে এই ব্যাটসম্যান জায়গা পেতেই পারেন।
তামিম-সাকিবের অনুপস্থিতে বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিক এই আসরে ছিলেন অপ্রতিরুদ্ধ। ৬০ এর বেশি গড়ে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে রান সর্বমোট রান করেছেন ৩০২। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করে আক্ষেপেও পুড়েছেন এই অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
৩. অলরাউন্ডার- শোয়েব মালিক এবং মোহাম্মদ নবী

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান দলের দীর্ঘদিনের যোদ্ধা হিসেবে একমাত্র ক্রিকেটারের নাম সম্ভবত শোয়েব মালিক। ঘরের মাঠ হিসেবে পরিচিত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার ৭০ এর বেশি গড়ে ২১১ রান করেছেন এশিয়া কাপের এই আসরে। পাশাপাশি আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী ফিফটি তো ছিলই। অন্যদিকে দলের প্রয়োজনে হাতও ঘুরিয়েছেন তিনি। তাই অলরাউন্ডার হিসেবে সেরা একাদশে জায়গা পেতেই পারেন মালিক।
আফগান দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটার নবী একমাত্র ক্রিকেটার যিনি আফগানিস্তানের জার্সি গায়ে ওয়ানডেতে শতাধিক ম্যাচ খেলেছেন। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার ২৫ এর বেশি গড় নিয়ে ১৩৪ রান করেছেন টুর্নামেন্টে। পাশাপাশি হাত ঘুরিয়ে ৫টি উইকেটও নিয়েছেন নবী।
৪. স্পিনার- রশিদ খান ও কুলদিপ যাদব

এশিয়া কাপের সেরা একাদশে রশিদ খানের নাম থাকবে এটা যেন সবারই অনুমেয়। আফগান ক্রিকেটের উত্থানের পেছনে অবদান রাখা এই স্পিনার টুর্নামেন্টের ৫ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকায় রয়েছেন সবার উপরে। অন্যদিকে ওভারপ্রতি তাঁর রান খরচ হয়েছে চারেরও কম।
পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই টিম ইন্ডিয়ার ভরসার প্রতীক হয়ে থাকা কুলদিপ যাদব ৬ ম্যাচ খেলে তাঁর পকেটে পুরেছেন ১০টি উইকেট। তবে রশিদ খানের ওভার প্রতি রান দেয়ার গড় চারের নিচে ও যাদবের ওভারপ্রতি রান দেয়ার গড় চারের কিছু বেশি থাকায় এশিয়া কাপে সেরা বোলারদের তালিকায় দুইয়ে রয়েছেন তিনি।
৫. পেসার- মুস্তাফিজুর রহমান এবং জসপ্রীত বুমরাহ

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দারুণ পারফর্ম করা বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান গত কিছুদিন ইনজুরিতে ভুগলেও এশিয়া কাপে যেন ফিরে পেয়েছেন নিজের চিরচেনা রূপ। টুর্নামেন্টের ৫টি ম্যাচে গতির ঝড় তুলে ঝুলিতে নিয়েছেন ১০টি উইকেট। টুর্নামেন্টে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৩ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট।
আরব আমিরাতের পিচ পেসারদের সহায়তা করবে না এটা জানা ছিল প্রতিটি দলেরই। যার ফলাফল দেখা যায় সেরা উইকেট শিকারির তালিকায় সেরা দশে মাত্র তিনজন পেসারের উপস্থিতি দেখলেই। জসপ্রীত বুমরাহ এই টুর্নামেন্টে চার ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট নিয়ে পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হিসেবে নিজের নাম তালিকায় তুলে ধরেছেন। ওভারপ্রতি তিনি রান খরচ করেছেন চারেরও কম করে।