ক্রিকেট বিশ্বে আতস কাঁচ নিয়ে খুঁজলেও হয়ত এমন দু’টি প্রতিবেশী ক্রিকেট খেলিয়ে দেশ পাওয়া যাবে না। ভারত আর পাকিস্তানের কাছে ক্রিকেটটা শ্রেফ একটা খেলা নয়, একটা আবেগের ব্য়াপার। মান-সম্মানের ব্য়াপার। বিনা লড়াইয়ে কেউ কাউকে একচুল জমি ছেড়ে দেবে না। রাজনৈতিক কারণে হোক কিংবা অতীতে এক দেশ হওয়ার কারণে রক্তের মধ্য়েই প্য়াশনটা হয়ত রয়েছে জন্মসূত্রে – ক্রিকেট মাঠে এই দুই দেশ যখনই মুখোমখি হয় টিভি রেটিং চড়চড় করে বাড়তে শুরু করে। রাজনৈতিক কারণে দুই দেশ আইসিসি ইভেন্ট ছাড়া সাম্প্রতিক অতীতে মুখোমুখি হয়নি। আর আইসিসি ইভেন্টে যখনই মুখোমুখি হয়েছে, তখনই সবার নজর থাকে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বির দিকে। মেন ইন ব্লু বনাম মেন ইন গ্রিন – যেন এক আলাদা মহাজাগতিক রসনা।
ভারত-পাকিস্তান যখনই ক্রিকেট মাঠে পরস্পরের মুখোমুখি হয়, দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্য়ে একটা স্ফূর্তি কাজ করে। যে ক্রিকেটারটাকে কেউ তেমন সমীহের চোখে দেখত না, সেও রাতারাতি স্টার হয়ে যায়। সবসময় যেন একশো শতাংশের বেশি দেওয়ার চেষ্টা। বাইশ গজের মধ্য়ে যেমন ভালো খেললে হেভিওয়েট ক্রিকেটাররা একে-অপরকে সৌজন্য়তা দেখান, তেমনি আবার স্লেজিং করতেও ছাড়েন না। আবার অনেক সময় ভদ্রতার সীমানা ছাড়িয়ে তাচ্ছিল্য়ের সুরে পাত্তা না দেওয়া।
এখানে দেখুনঃ ছাব্বিশেই যবনিকা, অবসর নিয়ে গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিলেন এই তরুণ প্রতিভা!
গত বছর এশিয়া কাপ টি-২০ ফরম্য়াটে খেলা হয়েছিল। সেই সময় পাকিস্তানের বাঁ হাতি পেসার মহম্মদ আমিরকে ‘সাধারণ মানের বোলার’ বলে মন্তব্য় করেছিলেন ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা। ”ওকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত হইচই হচ্ছে। ও সবে মাত্র একটা ম্যাচ খেলেছে। এখনই ওকে নিয়ে এত মাতামাতি করার কিছু নেই। ও ভাল বোলার, কিন্তু সেটা ওকে বারবার প্রমাণ করতে হবে। অনেকে ওকে ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু, আমির একজন সাধারণ মানের বোলার। কোনও একদিন (ভবিষ্য়তে) ও যদি ভাল বল করে তাহলে করতেই পারে। তবে, তার মানে এই নয় যে রোজ রোজ বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উড়িয়ে দেবে। আমিরকে নিয়ে মাতামাতিটা কমা দরকার। পাকিস্তান দলে আরও পাঁচজন বোলার আছে। ওরাও ভাল পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে।”

যদিও বিরাট কোহলি আমিরের প্রশংসা করে তাঁকে বিশ্বমানের বোলার আখ্য়া দিয়ে বলেছিলেন, ”মহম্মদ আমিরকে আমি শুভেচ্ছা জানাতে চাই. ও যেভাবে বল করেছে। ও যখন মাঠে বল করছিল, তখনই আমি ওকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম।”

গত জুনে ইংল্য়ান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে আবার অসামান্য় পারফরম্যান্স মেলে ধরে বিধ্বংসী রূপ নেন আমির। প্রায় একাই শেষ করে দেন ভারতের গর্বের ব্যাটিং লাইনআপ। তুলে নেন রোহিত, বিরাট কোহলি ও শিখর ধওয়নের উইকেট।

এশিয়া কাপেও রোহিতকে আউট করেছিলেন। আবার চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও রোহিতকে প্য়াভিলিয়নে ফিরিয়ে ছিলেন আমির। রোহিতের কথা সেদিন কোনও জবাব না দিলেও আমির এতদিন পর মুখ খুলেছেন। কোনওরকম আপত্তিজনক কথা বা ক্ষোভ না দেখিয়ে শান্তভাবেই জবাব দেন, ”রোহিতের তখন যেটা মনে হয়েছিল, সেটা বলেছিল। এখন হয়তো আমার ব্য়াপারে ওর মতামত বদলাতে পারে। তবে, একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই। রোহিতকে আমি কোনওদিন সাধারণ মানের ব্য়াটসম্য়ান বলব না। আমি ওকে অসাধারণ ব্য়াটসম্য়ানই বলব। ভারতের হয়ে ওর দুর্দান্ত রেকর্ড রয়েছে। ওকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু, একটা কথা বলব, অন্য় ক্রিকেটার আমাকে নিয়ে কি বলল, সে নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। দলের হয়ে কতটা অবদান রাখতে পারছি, শুধু সেটাই খেয়াল রাখি।”
