বিরাট কোহলি-রবি শাস্ত্রীর দলে তাঁর জায়গা না হলেও, যুবীকে তাঁর প্রাপ্য় সম্মান দিলেন হরভজন। অনেক ছোটোবেলা থেকে যুবীকে চেনেন ভাজ্জি। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে একসঙ্গে পাঞ্জাবের হয়ে রঞ্জি খেলেছেন দু’জনে। ফলে অন্য় কারওর চেয়ে ক্রিকেটার যুবরাজ সিংকে বেশি করে চেনেন ক্রিকেটার হরভজন সিং। আগামী ২০ অগস্ট থেকে শ্রীলঙ্কায় সীমিত ওভারের ক্রিকেট সিরিজে ভারতীয় ক্রিকেট দলে জায়গা হয়নি স্টার অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং’য়ের। ২০১৯ বিশ্বকাপের দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে ভারতীয় দল থেকে একেবারেই ছেঁটে ফেলা হয়েছে তাঁকে। ফর্ম খারাপ চললেও, নিজেকে প্রমাণ করার শেষ সুযোগটাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে যুবীর থেকে। আশ্চর্যের বিষয়, বর্তমানে যিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক, যিনি যুবী, সুরেশ রায়না, এমনকী মহেন্দ্র সিং ধোনিকে কড়া কথা শোনাচ্ছেন পারফরম্য়ান্স করা নিয়ে, সেই মান্নাভা শ্রী কান্ত প্রসাদের নাম ক’জন শুনেছেন বা মনে রেখেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ভারতের হয়ে মাত্র ৬টি টেস্ট ও ১৭টি একদিনের ম্য়াচ খেলেছেন। পারফর্ম করে দলে জায়গা টিকিয়ে রাখা তো দূরের কথা, ব্য়াট হাতে একটিও শতরান করতে পারেননি কোনওদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। দুই ধরণের ক্রিকেটে তাঁর স্কোর ১০৬ এবং ১৩১ রান।
বিরাট-শাস্ত্রীর ভারতীয় দলে বুড়ো যুবরাজের জায়গা না পাওয়া প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি টিভি চ্য়ানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের সর্বকালের সেরা অফস্পিনার ভাজ্জি বলেন, ”যুবরাজ ভারতকে যত ম্য়াচ জিতিয়েছে, আর কেউ হয়ত বা অতগুলি ম্য়াচ জেতানো ইনিংস খেলেছে। তাই শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য় ওকে ভারতীয় দল থেকে বাদ দেওয়ায় আমি অবাক হয়েছি। নির্বাচকরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভাবনা-চিন্তা করেই নিয়েছেন। ওকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, নাকি বাদ দেওয়া হয়েছে – বুঝতে পারছি না। সময় বলে দেবে, যুবরাজ কতবড় চ্য়াম্পিয়ন ক্রিকেটার। গত দু’বছরে যুবরাজ অনেকবার ভারতীয় দলে কামব্য়াক করেছে। একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, ভারত যতবড় ক্রিকেটারই বিশ্ব ক্রিকেটকে উপহার দিক, আরেকটা যুবরাজ কোনওদিনই তৈরি করতে পারবে না।”
ভারতীয় ক্রিকেটে যুবরাজ সিং তারকা ক্রিকেটার হলেও, তাঁকে নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্য়ে আলাদা আবেগ থাকলেও, বর্তমান নির্বাচক মণ্ডলী ক্রিকেটারদের ফিটনেসের ওপরে নজর দিচ্ছে। ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য় সেই সমস্ত ক্রিকেটারকেই তাঁরা সুযোগ দিতে চান, যাঁরা শারিরীক দিক থেকে ফিট। বিরাট কোহলির ভারতীয় দল এখন তারুণ্য়ে ভরা। সেখানে যুবরাজের বয়স পঁয়ত্রিশ পেরিয়ে গেছে। ব্য়াটিং, বোলিং, ফিল্ডিং – কোনওটাতেই আর আগের মতো ধার নেই।
দল নির্বাচনের আগে প্রধান নির্বাচক মন্তব্য় করেছিলেন, যুবরাজকে বিশ্রাম দেওয়া হচতে পারে। তারপর দল নির্বাচনের পর জানা যায়, সত্য়িই যুবীকে শ্রীলঙ্কা পাঠানো হচ্ছে না। যুবরাজকে বাদ দেওয়া নয়, বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে – এখনও পর্যন্ত সেই কথাতেই অনড় প্রসাদ। তবে, বোর্ডের বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, বিশ্রাম নয়, যুবরাজকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিতর্ক এড়াতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্তা জানিয়েছেন, ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য় যুবরাজকে নিয়ে কোনও ভাবনা-চিন্তাই করছে না বোর্ড। যুবরাজের জায়গা নেওয়ার জন্য় ভারতীয় দলে অনেক নতুন ক্রিকেটার এসে গিয়েছেন। ধোনিকে এখনও দলে রাখা হচ্ছে কারণ, তাঁর বিকল্প এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। উল্টোদিকে, তিন বছর পর জাতীয় দলে ফিরে চ্য়াম্পিয়ল্স ট্রফি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আহামরি পারফরম্য়ান্স দেখাতে পারেননি যুবী। তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, না কি ছেঁটে ফেলা – তা সময়ই বলে দেবে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি যা ইঙ্গিত দিচ্ছে – সম্ভবত, এখানেই যবনিকা পড়ে গেল ভারতের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে।