প্রতিটি ক্রিকেট দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেন তাদের সেরা উইকেটকিপার। উইকেটকিপারকে দলের সবচেয়ে চতুর এবং দ্রুত খেলোয়াড় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে বল কতদূর এসেছিল বা বোলারের বল কতটা ঘুরেছে তা অনুমান করে ডাইভ দিতে হবে। গত এক দশক ধরে একজন উইকেটকিপারকে ব্যাট হাতেও খেলার প্রতিভা দেখাতে হবে। কিন্তু একটি মজার দৃশ্য তখনই ঘটে যখন কোনও উইকেটকিপার বল হাতে নেন এবং উইকেট নেন। আজ আমরা এমনই কিছু খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা বলব যারা বল হাতেও বাজিমাত করেছেন।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট: বিশ্বের অন্যতম কিংবদন্তি উইকেটকিপার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৪১৬) শিকার করেছেন। তরুণ উইকেটকিপাররা তাকে তাঁর রোল মডেল হিসাবে বিবেচনা করেন এবং তাঁর মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এই খেলোয়াড়, যিনি উইকেটের পিছনে গ্লাভস ছেড়ে উইকেটের সামনে এসেছিলেন, তিনি বল হাতে নিয়ে আশ্চর্যরকম ভাবে উইকেটও নিয়েছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের শেষ আইপিএল কেরিয়ার যা ২০১৩ সাল ছিল। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে নিজের শেষ আইপিএল ম্যাচ খেলতে গিয়ে গিলি বল করেছিলেন এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হরভজন সিং স্ট্রাইকে ছিলেন। ভাজ্জি তার বল হাওয়ায় পাঠায়। কিন্তু বলটি খুব বেশি দূরত্ব কাটতে পারেনি যার কারণে গুরকিরাত মান বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ ধরেন।
মার্ক বাউচার: দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মার্ক বাউচার, যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ১৪৭ ম্যাচে ৫৫০০ এর বেশি রান করেছেন, সর্বাধিক ৫৫৫ জন শিকার করেছেন। উইকেটের সামনে এবং পিছনে উভয়ই দলের হয়ে সেরা খেলা উপস্থাপন করেছেন মার্ক। তার নামে মোট ৯৯৯ আন্তর্জাতিক শিকার করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর নামে একটি টেস্ট উইকেটও রয়েছে। ২০০৫ সালে সেন্ট জনস ম্যাডামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বোলিং করেছিলেন মার্ক বাউচার। সেই ম্যাচে বাউচার সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান ডোয়াইন ব্রাভোর উইকেট নেন। যার ক্যাচ ধরেন আশওয়েল প্রিন্স। এবি ডি ভিলিয়ার্স এই ম্যাচে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন, কিন্তু তখন তিনি উইকেটকিপিং করেননি।
মহেন্দ্র সিং ধোনি: ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার এবং অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটকে ভিন্ন স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সমস্ত আইসিসি ট্রফি জয়ের রেকর্ড তাঁর অধীনে। ধোনি বয়সের সেই পর্যায়ে পৌঁছেছেন যেখানে খেলা সহজ নয়। তা সত্ত্বেও, ধোনী এতটা স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখে সবচেয়ে কঠিন কাজ করেন, এমনকি তরুণ খেলোয়াড়ও লজ্জা পান। গ্লাভস ছেড়ে বলও করেন ধোনি। ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই ম্যাচটি ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে খেলা হয়েছিল। এই ম্যাচে ট্র্যাভিস ডেভলিনকে ১৪ রানে বোল্ড করেছিলেন ধোনি। শুধু তাই নয়, ২০১১ সালে ইংল্যান্ড সফর ও ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বোলিং করেছিলেন ধোনি।
সৈয়দ কিরমানি: ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের অংশ নেওয়া সৈয়দ কিরমানি দেশের সেরা উইকেটকিপারদের মধ্যে গণ্য হয়। কিরমানি ৮৮ টেস্ট ম্যাচে ২ টি সেঞ্চুরি এবং ১২ টি হাফ-সেঞ্চুরির সাহায্যে ২৭৫৯ রান করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর নামে একটি টেস্ট উইকেটও রয়েছে। ঘটনাটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালে নাগপুরে খেলা তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ নিয়ে। এতে ভারত টস জিতে প্রথমে ব্যাট করেন। ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ২৪৫ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬২ রান করেছিল। প্রথম ইনিংসে ৩২২ রান করার পরে পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৬ রানে তাড়া করতে নেমেছিল। তবে, ম্যাচের কোনও ফল পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে কেবল একটি উইকেট পড়েছিল, তাও আজিম হাফিজের। যিনি উইকেটকিপাএ সৈয়দ কিরমানির কাছে ১৮ রানে বোল্ড হয়েছিলেন।
তাতেন্দা তাইবু: জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন অধিনায়ক তাতেন্দা তাইবুর এক অনন্য অধিনায়কত্বের রেকর্ড রয়েছে। তাইবু ওয়ানডেতে চতুর্থ কনিষ্ঠতম অধিনায়ক এবং দ্বিতীয় কনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁর নাম জিম্বাবোয়ের সেরা উইকেটকিপারের মধ্যে গণ্য হয়। টেস্টে ৬২ ও ওয়ানডেতে ১৪৭ রান করা জিম্বাবোয়ের এই প্রাক্তন অধিনায়কও মোট তিনটি আন্তর্জাতিক উইকেট পেয়েছেন। ২০০৪ সালে, যখন শ্রীলঙ্কা দল জিম্বাবোয়ে গিয়েছিল, তাতেন্দা তাইবু হারারেতে খেলা পঞ্চম ওয়ানডে ম্যাচে ১০ ওভার বল করে ৪২ রান দিয়েছিলেন। এছাড়াও সেখানে উপুল চন্দনা এবং থিলিনা কান্দম্বীর উইকেট নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালে তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচে সনথ জয়সুরিয়ার উইকেটও নিয়েছিলেন। যার পরে তাইবু জিম্বাবোয়ের মুগাবে সরকারের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। এই ভয়ের কারণে তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন।