বর্তমান ক্রিকেটীয় যুগে আমরা ৩টি ফরম্যাট লক্ষ্য করে থাকি। যাদের মধ্যে একটি হলো টেস্ট ফরম্যাট,একটি একদিবসীয় ফরম্যাট এবং আর একটি হলো t20 ফরম্যাট। আধুনিক ক্রিকেটে সব থেকে রোমাঞ্চকর এবং জনপ্রিয় ফরম্যাট হলো t20 ফরম্যাট কারণ এই ফরম্যাটের মাধ্যমে যেমন ছোট ছোট দেশগুলি ক্রমশই ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে চলেছে ঠিক তেমনি তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা এই ফরম্যাটের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদার্পন করে চলেছে এমনটাই বলা যেতে পারে।
এই ফরম্যাটের পরেই আসে একদিবসীয় ফরম্যাট যে ফরম্যাট বিগত কয়েক দশক ধরে চলে আসছে এবং এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপের রোমাঞ্চকতা প্রতিটা ক্রিকেট প্রেমীদের মনে এক আলাদা উন্মাদনার সৃষ্টি করে চলেছে। ক্রিকেট ইতিহাসে একদিবসীয় ফরম্যাটে এমন সব অসাধারণ রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে যা বাকি ফরম্যাট গুলিতে কোনোদিন করা সম্ভব হবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা আছে এমনটাই বলা যেতে পারে।
Read More: শুভমান গিল অতীত, নতুন মনের মানুষ পেলেন সারা তেন্ডুলকর, শিঘ্রই হবে ‘চারহাত’ এক !!
এই বছরের একদিবসীয় ক্রিকেট বিশ্বকাপ আর কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতের মাটিতে শুরু হতে চলেছে যা নিয়ে ক্রিকেট ফ্যানদের মধ্যে ইতিমধ্যেই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। ভারতীয় ক্রিকেট দল ক্রিকেট ইতিহাসের পুরানো এবং শক্তিশালী দলগুলির মধ্যে অন্যতম একটি নাম যারা ২ বার একদিবসীয় বিশ্বকাপ জিতেছে এবং একাধিকবার সেমিফাইনালের মঞ্চে পারফর্ম করেছে।
যেহেতু এই বছরের বিশ্বকাপের আয়োজন ভারতের মাটিতেই করা হয়েছে তাই অনেকেই ভারতীয় দলকে ফেভারিট মানতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখানে এমন ৫টি বড়ো কারণ নিয়ে আলোচনা করবো যার ফলে ভারতীয় দল এই বছরেও বিশ্বকাপের মঞ্চে বিজয়ী নাও হতে পারে বলে মনে করা যাচ্ছে।
টপ অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতা:
প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে সেটি হলো ভারতীয় দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং বের্থ্যতা। ভারতীয় দলে যেমন রোহিত শর্মার মতো শক্তিশালী ওপেনিং ব্যাটসম্যান রয়েছে ঠিক তেমনি বিরাট কোহলির মতো বিশ্বমানের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রয়েছে যিনি এক হাতে ভারতীয় দলকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটিং কোনো বড়ো মঞ্চেই সফল হতে পাচ্ছে না সেটা আমরা বিগত অনেকগুলি বড়ো টুর্নামেন্টেই তার ফলাফল দেখতে পেয়েছি।
তাই মনে করা যাচ্ছে যদি ভারতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটিং নিজেদের চেনা ফর্মে ফেরত না আসতে পারে তবে ভারতীয় দল বিশ্বকাপের মঞ্চে নিঃসন্দেহে ভরাডুবি হবেই।
বোলিং অফ ফর্ম:
তালিকায় দ্বিতীয় বড়ো কারণটি হলো ভারতীয় দলের বর্তমান বোলারদের অফ ফর্ম। যেকোনো বড়ো টুর্নামেন্ট জিততে গেলে ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলারদের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে। কারণ একজন বোলার সঠিক সময়ে উইকেট নিয়ে দলকে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করে থাকে। বিগত বেশ কয়েকটি বড়ো টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ বোলাররা চোটের কারণে দলের বাইরে থাকার জন্য তরুণ ব্রিগেডের ওপর বোলিং দায়িত্ব সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে তারা সেই মঞ্চে সফল হতে পারেননি।
বিশ্বকাপের আগে যদি ভারতীয় দল তাদের বোলিং বিভাগকে পুনরায় শক্তিশালী করে না পারে তাহলে তারা নিশ্চিত ভাবে এই বিশ্বকাপেও হারতে চলেছে এমনটা বলা যেতেই পারে।
বড়ো টুর্নামেন্টে চোকার্স:
ইদানিং ভারতীয় দলকে বড়ো টুর্নামেন্টের মঞ্চে চোকার্স তকমা দেওয়া শুরু হয়েছে,কারণ তারা প্রথম থেকে ভালো পারফর্মেন্স করে দেখালেও টুর্নামেন্টের শেষ পর্যায়ে গিয়ে হেরে প্রতিযোগিতা থেকে বাইরে চলে গিয়েছে। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশ জানে ভারতীয় দলকে যেকোনো বাইলেটারাল সিরিজে হারানো খুব শক্ত তা সে ভারতের মাটিতেই হোক অথবা বিদেশের মাটিতে। কিন্তু আইসিসি অনুমোদিত যে কোনো টুর্নামেন্টে তারা ভালো খেলার পরেও হয় সেমিফাইনাল নয়তো বা ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছানোর পরেও পরাস্ত হয়ে ফেরত চলে এসেছে।
তাই এটা বলা যেতেই পারে বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় দল বেশ কয়েকটি বড়ো টুর্নামেন্টে পারফর্ম করবে এবং তারা যেন সেই টুর্নামেন্টে নিজেদের চোকার্স তকমা ঘোচাতে না পরে তাহলে বিশ্বকাপেও চোকার্স হিসাবে টুর্নামেন্টের বাইরে চলে যেতে পারে।
ভালো উইকেটকিপারের অভাব:
বর্তমানে ভারতীয় দলে অভিজ্ঞ কোনো উইকেটরক্ষক নেই সে কথা বলাই যেতে পারে। দলের অভিজ্ঞ উইকেটকিপার ঋষভ পান্থ গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হবার পর থেকে ভারতীয় টীম ম্যানেজমেন্ট অনেক তরুণ উইকেটকিপারদের সুযোগ দিয়েছিলো কিন্তু তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চের চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজেদের সঠিক পারফর্মেন্স না দেখাতে পারার কারণে ভারতীয় দলকে বহু ম্যাচ হারতে হয়েছে।
তাই বিশ্বকাপ শুরুর আগে যদি ভারতীয় দল যদি যোগ্য উইকেটরক্ষক খুঁজে না পায় অথবা ঋষভ পান্থ যদি তাড়াতাড়ি সুস্থ না হয়ে ফেরত আসতে পারেন তাহলে ভারতীয় দল এই বছরেও বিশ্বকাপ জিতবে না এমনটাই দাবি করা যাচ্ছে।
তথাকথিত ম্যাচ উইনারের অভাব:
একজন ম্যাচ উইনারের কাজ হলো যেকোনো রুদ্ধশ্বাস ম্যাচকে নিজের কব্জায় এনে দলকে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করা। ভারতীয় দলে যুবরাজ সিং, এম এস ধোনির মতো অনেক ম্যাচ উইনারদের ক্রিকেট বিশ্ব এখনো নিজেদের মনের ভেতরে গেঁথে রেখে দিয়েছে। ইদানিং সময়ে ভারতীয় দলে অনেক ব্যাটসম্যান থেকে শুরু করে অলরাউন্ডার উদয় হলেও তারা বড়ো টুর্নামেন্টে ম্যাচ জেতাতে অক্ষম হয়েছেন সেটা বহুবার দেখা গেছে।
তাই এই বছরের বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতীয় দলের কাছে এটাও একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে,যদি তারা ভালো ম্যাচ উইনার না পায় তাহলে তাহলে তারা পুনরায় বিশ্বকাপ ট্রফি হাতছাড়া করতে চলেছে।