ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে বেশকিছু দুর্দান্ত অধিনায়ক এসেছেন, আর তারা নিজেদের অধিনায়কত্বে দেশকে বেশকিছু ম্যাচও জিতিয়েছেন। তবে আজ আমরা আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদনে সেই পাঁচজন ভারতীয় খেলোয়াড়ের কথা জানাতে চলেছি যারা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় দলে খেলেছেন, কিন্তু এর মধ্যে কখনো তাদের অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
যুবরাজ সিং
নিজের অধিনায়কের জন্য যুবরাজ সিং সবসময়ই ম্যাচ উইনার খেলোয়াড় থেকেছেন। তা অধিনায়ক ধোনি হোন বা গাঙ্গুলী, তিনি সবসময়ই নিজের দুর্দান্ত প্রদর্শনে নিজের অধিনায়ককে খুশি করেছেন আর ভারতীয় দলকে জয় এনে দিয়েছেন। তিনি এমন একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি তিন বিভাগেই প্রদর্শন করার ক্ষমতা রাখতেন। তিনি ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দলের হয়ে যোগদান দিতেন। ২০১১ বিশ্বকাপেও তিনি ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন। তার দুর্দান্ত অলরাউন্ডার প্রদর্শনের সৌজন্যেই ভারত এই বিশ্বকাপ জিততে পেরেছিল। তিনি ২০১১ বিশ্বকাপে মোট ৩৬২ রান করেছিলেন আর বল হাতেও প্রদর্শন করে বিশ্বকাপ ২০১১য় মোট ১৫টি উইকেট নিয়েছিলেন। ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপের একটি ম্যাচে যুবরাজ সিং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬ বলে ৬টি ছক্কা মেরেছিলেন। তিনি ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ১২ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে তিনি নিজের এই দুর্দান্ত কেরিয়ার সত্ত্বেও কখনো ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করতে পারেননি।
ভিভিএস লক্ষ্মণ
ভিভিএস লক্ষ্মণকে ভারতীয় ক্রিকেট দলে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো টেকনিক্যাল রূপে সক্ষম ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন মনে করা হত। ভিভিএস লক্ষ্মণ ভারতীয় দলের হয়ে ১৩৪টি টেস্ট ম্যাচ এবং ৮৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। টেস্ট ম্যাচে তিনি ৪৫.৯৭ গড়ে ৮৭৮১ রান করেছেন। অন্যদিকে নিজের খেলা ৮৬টি ওয়ানডে ম্যাচে লক্ষ্মণ ৩০.৭৬ গড়ে ২৩৩৮ রান করেছেন। তিনি নিজের টেস্ট কেরিয়ারে মোট ১৭টি টেস্ট সেঞ্চুরিও করেছেন আর ৫৬টি হাফসেঞ্চুরিও করেছেন। লক্ষ্মণ নিজের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী দল বলে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া দলের বিরুদ্ধে সবসময়ই দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন। তবে এর মধ্যে কখনো তাকে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
জাহির খান
জাহির খান ভারতীয় দলের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ জোরে বোলারদের মধ্যে একজন থেকেছেন। জাহর খান ভারতের হয়ে ৯২টি টেস্ত ম্যাচ ২০০টি ওয়ানডে ম্যাচ আর ১৭টি টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। নিজের খেলা ৯২টি টেস্ট ম্যাচে তিনি ভারতের হয়ে ৩১১টি উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে ওয়ানডেতে ২৮২টি উইকেট নিয়েছেন আর টি-২০তে তিনি ১৭টি উইকেট নিয়েছেন। আইপিএলে তো জাহির খান দিল্লি ক্যাপিটালসের নেতৃত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ভারতীয় দলের হয়ে তিনি কখনো অধিনায়কত্ব করতে পারেন নি। নিজের তীক্ষ্ম বুদ্ধির কারণে তিনি ভারতের একজন ভালো অধিনায়ন প্রমানিত হতে পারতেন, কিন্তু সম্ভবত এটা তার ভাগ্যে ছিল না।
নভজ্যোত সিং সিধু
নভজ্যোত সিং সিধুও ভারতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন। এই খেলোয়াড় ভারতের হয়ে ৫১টি টেস্ট ম্যাচ আর ১৩৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তিনি নিজের খেলা ৫১টি টেস্ট ম্যাচে নভজ্যোত সিং সিধু ৪২.১ এর দুর্দান্ত গড়ে ৩২০২ রান করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি ওয়ানডে কেরিয়ারে ৩১.১ গড়ে ৪৪১৩ রান করেছেন। তবে তারও ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হতে পারেনি। ক্রিকেট ছাড়ার প্র সিধু রাজনীতিতে চলে যান। সেই সঙ্গে তিনি টিভিতে বেশকিছু কমেডি শোও করেছেন।
হরভজন সিং
ভারতীয় ক্রিকেট দলের অফ ব্রেক স্পিনার হরভজন সিং ১৭ এপ্রিল ১৯৯৮তে নিজের ওয়ানডে ডেবিউ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেছিলেন। এই সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। হরভজন সিংয়ের ক্রিকেট কেরিয়ার দুর্দান্ত থেকেছে। তিনি এখনো পর্যন্ত ভারতীয় দলের হয়ে ১০৩টি টেস্ট ম্যাচ, ২৩৬টি ওয়ানডে ম্যাচ আর ২৮টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। তিনি এখনো পর্যন্ত নিজের টেস্ট কেরিয়ারে ৪১৭টি উইকেট, ওয়ানডে কেরিয়ারে ২৬৯টি ইউকেট এবং টি-২০ কেরিয়ারে ২৫টি উইকেট নিয়েছেন। তিনি ২১৬ থেকে ভারতীয় দলের বাইরে রয়েছেন। তাকেও তার দীর্ঘ কেরিয়ারে কখনো ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।