আইপিএল ক্রিকেট বিশ্বের বৃহত্তম টি- ২০ লিগ। আইপিএল এর মান উচ্চতর এবং প্রতিটি ক্রিকেটারই এই লিগে সফল হতে চায়। ভারতীয় দলের নির্বাচকরা ভারতীয় দলে খেলোয়াড় বাছাইয়ের জন্য আইপিএলকে একটি মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। আইপিএল অনেক খেলোয়াড়ের জাতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছে। অনেক ভারতীয় ক্রিকেটারের খারাপ আইপিএল মরসুমের কারণে তাদের ভারতীয় দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইপিএলের একটি খারাপ মরসুম জাতীয় দলে অনেক খেলোয়াড়দের সু্যোগের আশা নষ্ট করতে পারে। আসুন দেখেনি এমনই পাঁচজন খেলোয়াড়ের নাম-
কুলদীপ যাদব, কলকাতা নাইট রাইডার্স: আসন্ন আইপিএল ২০২১ কুলদীপ যাদবের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মরসুম হতে চলেছে। কুলদীপ সত্যিই দীর্ঘকাল ধরে তাঁর সেরা ফর্মের বাইরে এবং এটিই সম্ভবত তাঁর শেষ সুযোগ হতে পারে। তিনি ভারতের “স্পিন-উইজার্ড” নামে পরিচিত কুলদীপ। ২০১৩ সালে কুলদীপকে এই যুগের অন্যতম সেরা স্পিনার হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল, কারণ তাঁকে প্রায় কেউই খেলতে পারত না। এমনকি বিভিন্ন দলের সেরা খেলোয়াড়রাও তাকে বুঝতে না পেরে লড়াই করেছেন। যদিও ২০১৮ এর শেষ দিকে এবং ২০১৯ এর শুরুতে যখন ব্যাটসম্যানরা তাকে বুঝতে শুরু করে। ২০১৯ সালে এক ওভারে মইন আলী তাকে ২৭ রানে মারার পর থেকে বিশ্ব ক্রিকেট বুঝে যায় তিনি আর একই বোলার নেই। কুলদীপ গতবার আইপিএলে কেকেআর দলে নিয়মিতও ছিলেন না। কেকেআর তার চেয়ে বরুণ চক্রবর্তীকে পছন্দ করত। ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সম্প্রতি শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজেও কুলদীপ নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ। সুতরাং যদি তিনি ভারতীয় দলে থাকতে চান তবে তাঁর আইপিএল ফর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টি. নটরাজন, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ: আইপিএল ২০২০ সালের মধ্যে অন্যতম সেরা আবিষ্কার টি. নটরাজন। ডেথ ওভারে ইয়র্কর বোলিংয়ে তার দক্ষতা যা সকলকে প্রভাবিত করেছিল। ভুবনেশ্বর কুমারের অনুপস্থিতিতে তিনি সানরাইজার্সের ভরসা ছিলেন এবং সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে তার পারফর্মেন্স ছিল দুর্দান্ত। তারপরে তাকে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানেও তিনি হতাশ করেননি। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় দুর্দান্ত ছিলেন এবং সেই দলে থেকে ঐতিহাসিক বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জয়ের অন্যতম কারণ ছিলেন। ভারতীয় দলে থাকার জন্য তাঁর আইপিএল ফর্মটি সত্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর দুর্ভাগ্য যে ভারতের অনেক ভালো পেসার রয়েছে। জসপ্রীত বুমরাহ, মম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার এবং এখন শার্দুল ঠাকুর তালিকায় রয়েছে। যদি নটরাজনকে ভারতীয় দলের নিয়মিত মুখ হতে হয় এবং বাদ না পড়তে হিয় তবে তার আইপিএল ফর্মটি ভালো কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে তাকে।
ওয়াশিংটন সুন্দর, রাজস্থান রয়্যালস: গত কয়েক মাস ওয়াশিংটন সুন্দরের জন্য কোনও রূপকথার কম ছিল না। গাব্বায় দুর্দান্ত অভিষেকের পরে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে আরও একটি ভাল সিরিজ জয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ২-৩ টি টি- ২০ ম্যাচে তিনি বল হাতে ভাল ফল করেছিলেন। শেষ দুটি টি- ২০ ম্যাচে ব্যাট হাতেও সফল ওয়াশিংটন, মাঠের সব জায়গাতেই হিট করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে ভারতে প্রতিযোগিতা এমন যে দুটি খারাপ গেমই ওয়াশিংটনকে দল থেকে বাদ করে দিতে পারে। রবীন্দ্র জাদেজা ভারতের প্রথম একাদশে নিশ্চিত এবং তিনি যখনই ফিরে আসবেন তখনই তাঁর জায়গা ফিরে পাবেন। গত ১২ মাস ধরে অশ্বিন এবং অক্ষরের ফর্মও ভাল হয়েছে। এর অর্থ হল আসন্ন আইপিএল মরসুমে ওয়াশিংটনকে তার সেরা ফর্ম বজায় রাখতে হবে যদি তিনি ভারতীয় দলে নিজের জায়গা ধরে রাখতে চান।
ইশান কিষান, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ইশান কিষানকে ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী বড় আবিস্কার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি ২০২০ সালের আইপিএলে সেরা ফর্মে ছিলেন এবং ভারতীয় নির্বাচকরা তাকে জাতীয় দলে নির্বাচন করেছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই তিনি হাফ সেঞ্চুরি রান করেছিলেন। তবে ভারতে উইকেটকিপারের স্পট নিয়ে ইতিমধ্যে প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে। কম-বেশি বলতে গেলে কেএল রাহুল ২০২০ সাল থেকে ওয়ানডে এবং টি- ২০ তে ভারতের নিয়মিত কিপার এবং দুর্দান্ত খেলোয়াড়। পন্থ সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ হওয়া ওয়ানডে এবং টি- ২০ সিরিজের কিপার হিসাবে ছিলেন। সেই সঙ্গে নিজের কিপিং দক্ষতায় সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন। ইশানকে এই মরশুমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়েও সেরা হতে হবে। ভারতের টি- ২০ দলে নিজের জায়গা ধরে রাখার একমাত্র উপায় এটি।
সূর্যকুমার যাদব, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: সূর্যকুমার যাদব এমন একজন খেলোয়াড় যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগেই বিপুল অনুরাগী অর্জন করেছিলেন। বিভিন্ন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও প্রাক্তন ক্রিকেটাররা তাকে ভারতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্বাচকদের কাছে দাবি জানাতে থাকেন। যখন তিনি তার সুযোগ পেয়েছেন তখন তিনি হতাশ করেননি এবং টি- ২০ অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি করেন। পরের খেলায় তিনি দ্রুতগতিতে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন।এমনকি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের জন্য নির্বাচিত হলেও ম্যাচ খেলেননি। ইশানের মতো তিনিও অনেক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। শ্রেয়াস আইয়ার চার নম্বরের জায়গাটিকে নিজের দখলে রেখছেন। ওয়ানডে দলে কেএল রাহুল একজন আদর্শ পাঁচ নম্বর এবং এখনই কেউ তাকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবছেন না। যতই ভালো খেলুক কিন্তু সূর্যকুমারকে নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি নিজের আইপিএল-এর ভাল ফর্ম চালিয়ে যাবেন। আইপিএলে যদি তিনি তার সেরা ফর্ম ধরে না রাখেন তবে ভারতীয় দলে নিজের জায়গা ধরে রাখা তাঁর পক্ষে সত্যিই কঠিন।