স্কুলে যখন অ্যাডমিশন করা হয় তো বেশকিছু বাবা-মা বাচ্চার আসল বয়স লুকিয়ে কিছু বছর কম করে লেখান। যাতে বাচ্চা পরে এই বিষয়ে ফায়দা পায়। কিন্তু ক্রিক্ট খেলাতেও এটা যথেষ্ট হয়। হ্যাঁ, বেশকিছু খেলোয়াড় বিশ্ব ক্রিকেটে এমন আছেন যাদের উপর বয়স নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এই ব্যাপারে যখনই উল্লেখ হয় তো পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অলরাউন্ডার শাহিদ আফ্রিদির নাম মনে আসে। আসলে আফ্রিদির নাম এই ছক্করে অনেক বেশি উঠানো হয়েছে। কিন্তু আপনারা কী জানেন ভারতের এমন কিছু খেলোয়াড় থেকেছেন যাদের উপর আসল বয়স লুকোনোর অভিযোগ উঠেছে। তো আসুন এই বিশেষ প্রতিবেদনে আপনাদের সেই ৫জন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে জানানো যাক যাদের উপর তাদের আসল বয়স লুকোনোর অভিযোগ উঠেছে।
১. নীতিশ রাণা
এই তালিকায় সবচেয়ে বড়ো নাম নীতিশ রাণা যাকে প্রায় সমস্ত ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যান ভালোভাবেই চেনেন। তিনিও বয়স লুকোনো খেলোয়াড়দের তালিকায় শামিল রয়েছেন। রাণা এখনো পর্যন্ত কেহ্লা ৩৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ২২৬৬ রান এবং লিস্ট এ ক্রিকেটের ৫১টি ম্যাচে ১৫৪২ রান করেছেন। দিল্লির মিডল অর্ডারের বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান রাণার সমর্থকদের তখন বড়ো ধাক্কা লাগে যখন তারা জানতে পারেন যে ২০১৫য় বয়সের সঙ্গে ঘোটালা করা ২৩জন খেলোয়াড়দের রাণাও একজন। দিল্লি ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য রাণাকে বয়সে কারচুপি করার জন্য ব্যান করা হয়েছিল। শুধু তাই নয় এখনো তার বিরুদ্ধে কেস চলছে। কিন্তু তার দুর্দান্ত ব্যাটিং দলে প্রত্যাবর্তনে তাকে সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয় নীতিশ রাণা ভারতীয় ক্রিকেট দলে প্রবেশেরও দাবী পেশ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্স ফ্রেঞ্চাইজিরও নিয়মিত সদস্য।
২. মনজ্যোত কালরা
পৃথ্বী শয়ের অধিনায়কত্বে অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জেতা ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় মনজ্যোত কালরা নিজের ব্যাটিংয়ে সকলকেই নিজের সমর্থক বানিয়ে ফেলেছেন। কালরা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপর আইপিএল ২০১৮র নিলামে দিল্লি ক্যাপিটালস মনজ্যোত কালরাকে কিনে নেয়। আইপিএল ২০১৮য় যতই কালরা একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পান কিন্তু এটা বলা ভুল হবে না যে তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল ছিল। কিন্তু কালরাকে তার বয়স লুকোতে পাওয়া যায়। আসলে কালরা নিজের জন্ম সম্পর্কিত ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। ২০১৭য় কালরাকে বিসিসি দ্বারা মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অন্য ক্রিকেটারদের অসন্তুষ্ট বাবা-মা দ্বারা নিয়মিত অভিযোগ আর দিল্লি পুলিশ দ্বারা একটি তদন্তে নিশ্চিত হওয়ার পর ডিডিসিএ এই খেলোয়াড়কে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট খেলা থেকে ব্যান করে দেয়। পুলিশ দ্বারা করা তদন্তে সামনে আসে যে কালরা যে তথ্য দিয়েছিল তাতে এক বছরের ফেরবদল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মনজ্যোত কালরার বাবা-মায়ের উপর চার্জশিটও দাখিল করা হয়েছে।
৩. অঙ্কিত বাওনে
২০১২য় অনুর্ধ্ব ১৯ দলকে খেতাবি জয় এনে দিয়ে উন্মুক্ত চন্দ খবরের হেডলাইনে উঠে এসেছিলেন। আপনারা কী জানেন যে উন্মুক্তের জায়গা আগে অনুর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়কত্ব মহারাষ্ট্রের অঙ্কিত বাওনে করতেন, কিন্তু সেপ্টেম্বর ২০১১য় বয়স লুকোনোর কারণে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। এই প্রতারণার খোলসা তখন হয় যখন জানা যায় যে পাসপোর্টের জন্ম তারিখ তার জন্মের প্রমাণপত্র আর বিসিসিআইয়ের রেকর্ডে মিল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে তার জন্মতারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ সালের, কিন্তু তার পাসপোর্টে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯২কে জন্ম তারিখ হিসেবে দেখানো হয়। তবে বাওনে এই প্রতারণার বিরোধ করে বলেন যে তার এজেন্ট তারিখে ভুল করেছিল, কিন্তু নির্বাচকরা রিস্ক নিতে চাননি আর অঙ্কিতকে দল থেকে বাদ দিয়ে উন্মুক্ত চন্দকে অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। কিন্তু বাওনের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হয়নি।
৪. রসিক সালাম
জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেট দলের জোরে বোলার রসিক সালামকে আইপিএল ২০১৯ এর নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কিনেছিল। নিজেকে ১৭ বছর বয়সী জানিয়ে এই খেলোয়াড় দারুণভাবে শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। কিন্তু রসিকের বয়সের উপর প্রশ্ন ওঠে। আসলে তার ২টি আলাদা আলাদা জন্ম প্রমাণপত্র পাওয়া যায় যেখানে তার আলাদা আলাদা বয়স পাওয়া যায়। রসিকের বয়স ২০-২১ বছর ছিল, রসিক বাস্তবেই নিজের বয়স নিয়ে কারচুপি করেছিলেন। দুটি মূল জন্ম প্রমাণপত্রের মধ্যে একটি মিসম্যাচ সামনে আসার পর বিসিসিআই দ্বারা গত জুন মাস থেকে আগামী ২ বছরের জন্য এই জোরে বোলারকে সমস্ত ক্রিকেট কার্যক্রম থেকে ব্যান করে দেয়।
৫. প্রিন্স রামনিবাস যাদব
দিল্লির খেলোয়াড় প্রিন্স রামিবার যাদবও সেই খেলোয়াড়দের তালিকায় রয়েছেন যারা বয়স লুকোনো আর তার অনুচিত ব্যবহার করেছেন। দিল্লির ক্রিকেটার প্রিন্স যাদবকে বিসিসিআই গত বছর দুই মরশুমের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে ব্যান করেছে, কারণ তাকে অনুর্ধ্ব ১৯ এর কাগজপত্রে বয়স লুকোতে পাওয়া যায়।
বিসিসিআই সিবিএসই দ্বারা প্রকাশ করা বয়সের প্রমাণপত্রে তদন্ত করে, যেখানে যাদবের জন্ম তারিখ ১০ জুন ১৯৯৬ ছিল। তবে এই ক্রিকেটার আরো একটি জন্ম প্রমানপত্র তৈরি করেন যেখানে তার জন্ম তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০০১ দেখানো হয়। এই দৃষ্টিতে এই খেলোয়াড় এক বা দুই বছর নয় বরং পুরো ৫ বছরের ফ্রড করেন। বিসিসিআই ডিডিসিএকে একটি ইমেল পাঠায়, যা এটা নিশ্চিত করে।