ক্রিকেট ইতিহাসে আউট হওয়ার বেশকিছু ধরণ রয়েছে। কিছু এমন ধরণও আছে যেভাবে আউট হওয়ার পর ব্যাটসম্যান নিজেকেই একমাত্র দোষ দিতে পারেন। এইভাবে আউট হওয়া কখনো কখনো বেশ মজাদারও হয়ে যায়। যার মধ্যে একটি হলো হিট উইকেটে আউট। যদি কোনো ব্যাটসম্যানের ছোঁয়ায় স্ট্যাম্প পড়ে যায় তো তাকে হিট উইকেটও বলা হয়। এইভাবে আউট হওয়ার সংখ্যা ক্রিকেটে খুব বেশি নেই। যে কারণে কিছু হিট উইকেটে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের ইমেজ আজও ক্রিকেট সমর্থকদের মনে রয়েছে। আজ আমরা ক্রিকেট ইতিহাসের ৫টি ফেমাস হিট উইকেটের ব্যাপারে জানাব। যা আজো সমর্থকদের মনে রয়েছে। এইভাবে বেশকিছু তারকা ব্যাটসম্যানও আউট হয়েছেন। ভারতীয় দলের দুই তারকার নামও এই তালিকায় রয়েছে যারা বড়ো বড়ো ব্যাটসম্যান হিসেবে তকমা পেয়েছেন।
৫ সুনীল অ্যাম্ব্রিস
ওয়েস্টইন্ডিজের খেলোয়াড় সুনীল অ্যাম্ব্রিসের সঙ্গেও সঙ্গেও এমনটা ২০১৭য় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হয়েছিল। তিনি ওই ম্যাচে নিজের ডেবিউ করতে নেমেছিলেন আর প্রথম বলেই হিট উইকেট হয়ে গোল্ডেন ডাকে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে আন। যা যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্যই দুঃস্বপ্ন। সুনীল অ্যাম্ব্রিস এরপর টেস্ট ক্রিকেটে গোল্ডেন ডাকে আউট হওয়া ষষ্ঠ খেলোয়াড়ও হয়ে যান। তিনি নীল ওয়াগনরের বলে এইভাবে আউট হয়েছিলেন। যদিও সুনীল অ্যাম্ব্রিস তারপর দ্বিতীয় ইনিংসেও এমনই একটা না ভুলতে পারা রেকর্ডও গড়েছিলেন। অ্যাম্ব্রিস দ্বিতীয় ইনিংসে আসতেই ছক্কা মেরেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ছক্কা মেরে নিজের কেরিয়ার শুরু করা তিনি ষষ্ঠ খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন। তবে এখন সুনীল অ্যাম্ব্রিস ওয়েস্টইন্ডিজ টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও হয়ে গিয়েছেন। এখন তাকে একজন ভালো ব্যাটসম্যান হিসেবেও দেখা হয়।
৪. এবি ডেভিলিয়র্স
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন তারকা ব্যাটসম্যান এবি ডেভিলিয়র্সও হিট উইকেটে আউট হয়েছেন। যখন ২০০৯ এ তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচ খেলা এবি ডেভিলিয়র্সের সঙ্গে খুবই খারাপ হয়েছিল যেখানে তিনি আহতও হয়ে গিয়েছিলেন। শন টেস্ট একটি ভীষণই ভালো বল করেন, এবি ডেভিলিয়র্সের পেটে লাগে আর ব্যাথার কারণে তিনি ঘুরে যান আর তার ব্যাট গিয়ে স্ট্যাম্পে লাগে। এই উইকেটের সঙ্গে ওই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার দল ভীষণই মুশকিলে পড়ে গিয়েছিল আর মাত্র ২ রানেই তারা ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। টেস্টের সেই বলটি ১৫৫.৪ kmph গতিতে ছিল। যার ফলে ডেভিলিয়র্সের ব্যাথার অনুমান করা যেতে পারে। আউট হওয়ার পর তিনি কিছুক্ষণ পর্যন্ত উঠতে পারেননি। যারপর অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা তাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে। যারপরই তিনি মাঠের বাইরে যেতে সফল হন।
৩. ইঞ্জামাম উল হক
পাকিস্তানের প্রাক্তন তারকা খেলোয়াড় আর অধিনায়ক ইঞ্জামাম উল হকও এই তালিকায় রয়েছেন। ২০০৬এ ইঞ্জামাম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হিট উইকেটে আউট হয়েছিলেন। তার কেরিয়ারে তিনি বেশ কয়েকবার অদ্ভুতভাবে আর মজার ঢঙে আউট হয়েছেন। ইঞ্জামাম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লীডসের মাঠে খেলা হওয়া তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের স্পিনার মন্টি পানেসরের বলে সুইপ শট মারার চেষ্টা করেন, সেই সময় তার শরীরের ব্যালান্স বিগড়ে যায় আর তিনি স্ট্যাম্পে গিয়ে পড়েন। তার স্ট্যাম্পে পড়ার ফলেই তিনি হিট উইকেটে আউট হন। আউট হওয়ার সময় তিনি ৫২ বলে ২৬ রান করে খেলছিলেন। যখন তিনি পড়েন তো ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার তাকে তোলেন। এটা ভীষণই মজাদার হিট উইকেটও বলা যায়। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছিল।
২. বিরাট কোহলি
ভারতীয় দলের অধিনায়ক আর রান মেশিন নামে জনপ্রিয় বিরাট কোহলির নামও এই তালিকায় রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই ২০১৬য় হিট উইকেট হয়েছিলেন। এভাবে বিরাট কোহলিকে খুব কম বারই আউট হতে দেখা গিয়েছে। রাজকোটের মাঠে আউট হওয়া বিরাট কোহলি সেই সময় ৪০ রানে ব্যাটিং করছিলেন। সেই সময় আদিল রশিদের বলকে মিড উইকেটের দিকে খেলার চেষ্টা করেন বিরাট। সেই সময় তার পা পেছন দিকে যায় আর স্ট্যাম্পে লেগে যায় আর তিনি আউট হন। বিরাট কোহলি সেই সময় বড়ো স্কোরের দিকে এগোচ্ছিলেন। এর আগে ইংল্যান্ডেরই গ্রীম সোয়ানের বিরুদ্ধে ২০১১য় তিনি যখন ১০৭ রানে খেলছিলেন সেই সময়তেও তিনি হিট উইকেট হয়েছিলেন। টেস্ট ফর্্যা৭মেটে ২২জন হিট উইকেট হয়েছেন। ভিভিএস লক্ষ্মণের পর বিরাট কোহলিই দ্বিতীয় ভারতীয়।
৫. শচীন তেন্ডুলকর
ঙ্ক্রিকেটের ভগবান বলে পরিচিতি শচীন তেন্ডুলকরও এইভাবে নিজের উইকেট হারিয়েছেন। যখন ২০০৮এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ট্রাই সিরিজ খেলা হচ্ছিল। যেখানে তৃতীয় দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা উপস্থিত ছিল। সেই সময় শচীন তেন্ডুলকরও হিট উইকেট হন। শচীন তেন্ডুলকর যখন ব্রেট লির বলকে ব্যাকফুটে খেলার চেষ্টা করছিলেন সেই সময় তিনি হিট উইকেট হন। ওই ম্যাচের সপ্তম ওভারে যখন শচীন তেন্ডুলকর এইভাবে আউট হন সকলেই চমকে গিয়েছিলেন। তেন্ডুলকর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের ফর্ম্যাটে এইভাবে আউট হওয়া তৃতীয় ভারতীয় খেলোয়াড়ও হন। তার আগে নয়ন মোঙ্গিয়া, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়াসিম আক্রামের বলে এইভাবে আউট হয়েছিলেন। এছাড়াও অনিল কুম্বলেও ২০০৩ এ ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এইভাবে আউট হয়েছিলেন।