২০০০ সালে ভারত প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেতাব জিতেছিল মুহাম্মদ কাইফের নেতৃত্বে। এরপর মালেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা ভারত জিতেছিল দিল্লির ডান-হাতি ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির নেতৃত্বে।এটা ঠিক দলের নেতা হিসেবে দেশকে বিশ্বকাপ জেতালে সব অধিনায়ককে সর্বক্ষেত্রে বাড়তি মর্যাদা এবং গুরুত্ব দেওয়া হয়।তবে এক্ষেত্রে কাইফের চেয়ে কোহলি একটু বেশি গুরুত্ব পেয়েছিলেন ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করে যাওয়া জন্য।তারপর থেকে কোহলি নিজেকে গড়ে তুলতে লাগলেন।প্রতিনিয়ত নিজেকে আলাদা ধাঁচে তৈরি করতে থাকলেন।যার ফলে সে বছরই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের নেতা কোহলির।সেই দলে গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে ওপেনিং স্লটে ব্যাট করতে নেমেছিলেন।এবং ক্রমাগত নিজেকে একটা আলাদা উচ্চতায় টেনে তুলে এনেছেন।২০০৮ সালে দেশকে দ্বিতীয়বার অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ এনে দেওয়া দলের আরও বেশ কয়েক’জন সদস্য সুযোগ পেয়েছিলেন জাতীয় দলে।সে বছরেই বিরাট কোহলির সঙ্গে টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে সেই সব ক্রিকেটাররা নিজেদের কেরিয়ার শুরু করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙ্গিনা থেকে। এবার নজর ফেলা যাক সেই পাঁচ ক্রিকেটারের ওপর।
মনোজ তেওয়ারি :
কোহলির সঙ্গে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করা মনোজ তেওয়ারি একজন অসাধারণ স্কিলফুল ব্যাটসম্যান।ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে বলও করতেন।ঘরোয়া ক্রিকেটে টিম বাংলাকে নেতৃত্ব দিয়ে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন।যার জেরে একটা সময় তাঁকে ‘ছোট দাদা’ বলেও ডাকা হত।তবে অনেকের ধারণা, তাঁর মতো ক্রিকেটার নিজের কেরিয়ারে অনেককিছু সংগ্রহ করতে পারতেন।২০০৮ সালে পাওয়া সুযোগ মনোজ কাজে না লাগাতে পারায় প্রায় তিন বছর জাতীয় দলের বাইরে থাকতে হয় তাঁকে। যদিও ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে নিজের কেরিয়ারের সেরা ফর্মে ছিলেন বাংলার এই ব্যাটসম্যানটি।পরবর্তী সময়ে সেই ধারাবাহিকতা বজায় না রাখতে পারায় ভারতীয় দলের হয়ে ২০১৫ সালে জিম্বাবোয়ে সফরে খেলা মনোজ চলে গেলেন কেরিয়ারের অন্ধকারময় গলিতে।
ইরফান পাঠান :
২০০০ সালে ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেককিছু দিয়েছে ‘পাঠান’ পরিবার।ইরফান পাঠান এবং ইউসুফ পাঠান। একটা সময় হায়দরাবাদের এই দুই ক্রিকেটার ভারতীয় ক্রিকেটার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়ান।দাদা ইউসুফ ২০০৭ সালে ভারতকে প্রথমবার টি-২০ বিশ্বকাপ ট্রফি জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। একই সঙ্গে তাঁর মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জেরে সে বছরই প্রথমবারের মতো আইপিএলের খেতাব জিতেছিল রাজস্থান রয়্যালস।সেখানে তাঁর ছোট ভাই ইরফান কোহলির আমলে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে তরতর করে সাফল্যের শিখরে উঠে এলেন। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর স্বপ্নের ফর্মে ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে চোট এবং অফ ফর্মের কারণে পাকাপাকিভাবে জাতীয় দলের বাইরে চলে এলেন ইরফান পাঠান।
মনপ্রীত গোনি :
২০০৭ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটা পঞ্জাবের দীর্ঘদেহী বোলার মনপ্রীত সিংয়ের জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে সেই ২০০৮ সালে। পঞ্জাবের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট রঞ্জিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স করার সুবাদে প্রথম আইপিএলে ধোনির দল চেন্নাই সুপার কিংসে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন তিনি। পরের বছর সুযোগ জাতীয় দলে।অসাধারণ বোলিং দক্ষতায় দূর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা গোনি ক্রমে নিজের বোলিং জাত চেনাতে থাকেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বোলিং ধার কমতে থাকে। দ্বিতীয় আইপিএলেও সেই আগের ঝাঁঝ লক্ষ্য করা যায়নি তাঁর বোলিংয়ে।তারপর থেকে তাঁকে পাকাপাকিভাবে জাতীয় দলের বাইরে চলে আসতে হল।এই মুহূর্তে টিম পঞ্জাবের হয়ে রঞ্জিতে অংশগ্রহণ করলেও, কোহলির দলে তাঁর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেও চলে।
প্রজ্ঞান ওঝা :
বাংলার ক্রিকেটার মনোজ তেওয়ারির মতো প্রজ্ঞান ওঝাও নিজের প্রতি সু-বিচার করতে পারেননি।অনেকের মতে, প্রজ্ঞান নিজেকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে, আজ জাতীয় দলে অশ্বিন, জাদেজা, অমিত মিশ্রদের কড়া টক্কর দিতেন। কোহলির সঙ্গে কেরিয়ার শুরু করা ওড়িশার এই স্পিনারটি ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে অফ ফর্মের কারণে প্রজ্ঞান ছিটকে গেলেন জাতীয় দল থেকে।পাশাপাশি বর্তমান ভারতীয় দলে একাধিক মারকাটারি স্পিনারদের ভিড়ে কেমন যেন হারিয়ে গিয়েছেন ওড়িশার এই বোলারটি।এই মুহূর্তে তিনি নিজের রাজ্যের ঘরোয়া ক্রিকেট দল ছেড়ে বাংলার হয়ে রঞ্জিতে অংশগ্রহণ করছেন।
সুব্রহ্মনিয়ম বদ্রিনাথ :
দক্ষিণ ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের জন্য সেখানকার সাধারণ মানুষও চোখের জল ঝরাতে পারেন। ক্রিকেটার হিসেবে বদ্রিনাথের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও জায়গা নেই। তবে নিজেকে ভারতীয় দলের প্রতিষ্ঠা করা জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ টুকু কখনই পাননি তিনি।কোহলির আমল থেকে নিজের কেরিয়ার শুরু করা এই ব্যাটসম্যানটি পরবর্তী সময়ে ভারতের সব ফর্ম্যাটে ক্রিকেট খেলেছেন।তবে পাওয়া সুযোগগুলিকে সেভাবে কাজে লাগাতে পারেননি।যখন তিনি জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন, চোট তাঁকে সেই সুযোগ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। যার জেরে প্রথমশ্রেনির ক্রিকেটে প্রায় ১০ হাজার রান করা বদ্রিনাথকে চিরতরে জাতীয় দলের বাইরে ছিটকে যেতে হল।