যবে থেকে সীমিত ওভারের ক্রিকেট শুরু হয়েছে তবে থেকে গগণচুম্বি ছক্কা মারার কৌশলকে ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এটাই কারণ যে ব্যাটসম্যানরা প্রায়ই নিজেদের ইনিংস চলাকালীন ছক্কা মারার চেষ্টা করে থাকেন। ক্রিস গেইল, ডেভিলিয়র্স, আর রোহিত শর্মার মতো ব্যাটসম্যান নিজেদের ইনিংসে লম্বা লম্বা ছক্কার কারণে ক্রিকেট জগতে ছেয়ে আছেন।
ক্রিকেট জগতে সমর্থকদরাও সেই ব্যাটসম্যানদেরই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করা হয় যারা বিস্ফোরক ব্যাটিং করেন আর দীর্ঘ দীর্ঘ ছক্কা মারেন। যদিও প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের খেলার নিজেদের একটি আলাদা শৈলী হয়। কেউ কেউ নিজের শক্তিতে সমর্থকদের মধ্যে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন। তো কিছু নিজের টেকনিকের দমে। কিন্তু যদি আপনি দরকার পড়লে ছক্কা মারার সক্ষমতা না রাখেন তো বিশ্বাস করুন ক্রিকেট সমর্থকরা এমন ব্যাটসম্যানদের স্বীকৃতি দিতে মুশকিলে পড়েন। কিন্তু আপনি কী জানেন যে ক্রিকেট জগতেও এমন ব্যাটসম্যান রয়েছেন যারা নিজেদের পুরো কেরিয়ারে একটিও ছক্কা মারেননি। আজ আমরা এমনই ৪জন ক্রিকেটারের ব্যাপারে জানাতে চলেছি যারা নিজেদের পুরো আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে একটিও ছক্কা মারতে পারেননি আর তাদের মধ্যে একজন ভারতীয় ক্রিকেটারও শামিল রয়েছেন।
ডিয়োন ইব্রাহিম (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান)
আজ জিম্বাবীয়ের ক্রিকেট দলকে যথেষ্ট কমজুরি মনে করা হয়। কিন্তু আগে বেশকিছু বার এমন হয়েছে যখন এই দল বড়ো বড়ো দলকে ধরাশায়ী করেছে। ডিয়োন ইব্রাহিম ২০০১এ জিম্বাবোয়ের হয়ে নিজের ডেবিউ করেছিলেন আর নিজের পুরো কেরিয়ারে তিনি ৮২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। যদি পুরো আন্তর্জাতক কেরিয়ারের কথা বলা হয় তো ইব্রাহিম নিজের দেশের হয়ে ২৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলা ছাড়াও ৮২টি ওয়ানডে খেলেছেন যার মধ্যে তিনি ১৪৪৩ রান করেছেন।এ র মধ্যে তার গড় ২০র উপর থেকেছে। এর মধ্যে তার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করা সর্বোচ্চ স্কোর ১২১ রান শামিল রয়েছে। ইব্রাহিম নিজের ওয়ানডে কেরিয়ারে ৪টি হাফসেঞ্চুরিও করেছনে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও তিনি কখনও ছক্কা মারতে পারেননি। এই কারণে এই খেলোয়াড় আমাদের তালিকায় চার নম্বরে মজুত রয়েছে।
কালম ফার্গুসন (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান)
কালম ফার্গুসন আমাদের তালিকার সেই দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটিও ছক্কা মারেননি। কালম অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে ২০০৯ এ ডেবিউ করেছিলেন আর তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে মোট ৩০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ফার্গুসন ৪০ এর উপর গড় নিয়ে ৬৬৩ রান করেছেন, যার মধ্যে ৫টি সেঞ্চুরিও রয়েছে। ফার্গুসন কোনো স্লো খেলা ব্যাটসম্যান নন, এর মধ্যে তার ওয়ানডেতে স্ট্রাইকরেট ছিল ৮৫। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফার্গুসনের নামে কোনো আন্তর্জাতিক ছক্কা নথিভুক্ত নেই। গত ৯ বছর ধরে ফার্গুসন অস্ট্রেলিয়া দলে জায়গা তৈরি করতে পারেননি। ফার্গুসন এখন ৩৫ বছর বয়সী কিন্তু তিনি এখন ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। এর কারণ তিনি এখনও প্রত্যাবর্তন করে নিজের এই অনিচ্ছাকৃত রেকর্ড ভাঙতে পারেন।
থিলন ক্যাডেম্বি (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান)
আমাদের এই তালিকায় তৃতীয় নম্বরে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান থিলন ক্যাডেম্বি রয়েছেন। যিনি ৩৯টি ওয়ানডে ম্যাচ আর ৫টি টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। নিজের খেলা ৩৯টি ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ২৯ গড়ে ৮৭০ রান করেছিলেন। অন্যদিকে টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি ১৩ রান করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে তার ব্যাট থেকে কখনও একটিও ছক্কা বেরয়নি। তিনি ২৭ এপ্রিল ২০০৪এ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে নিজের ওয়ানডে ডেবিউ করেছিলেন। অন্যদিকে তিনি নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪য় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন।
অজয় রাত্রা (উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান)
মহম্মদ কাইফের অধিনায়কত্বে ভারতকে ২০০০ এ অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে জয় এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা অজয় রাত্রা ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হওয়ার পাশাপাশি রাত্রা বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি করা মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় উইকেটকিপার। ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রথম ম্যাচে সিলেক্ট হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন অজয় রাত্রা উইকেটের পেছনে নিজের চপলতার কারণে পরিচিত ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে হরিয়াণার হয়ে খেলা অজয় রাত্রা বেশকিছুবার নিজের প্রদর্শনের দমে দলকে জিতিয়েছেন। ভারতের হয়ে মোট ৬টি টেস্ট আর ১২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা রাত্রার নামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি ছক্কা না মারতে পারার লজ্জাজনক রেকর্ডও রয়েছে।